নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন হিলারি

Slider সারাদেশ

38808_thumbs_f4

 

ঢাকা;  সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী মনে করেন আগামী ৮ই নভেম্বরের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। তার ভাষায়- ‘এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে হিলারিই হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। তিনি দেশটির আড়াই শ’ বছরের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন এবং তিনি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন।’ ওই কূটনীতিকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পরিবর্তনের এই নির্বাচন নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতও রয়েছে। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে বা যারা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী সরকারে আসবেন তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের আমূল পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বরং ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকবে বলে মনে করেন তিনি। আসন্ন মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবার মানবজমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ২০০১-০৫ পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিব এবং পরবর্তীতে ২০০৫-০৭ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাালনকারী ওই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশ  বরাবরই একটি মডারেট মুসলিম কান্ট্রি। সামপ্রতিক সময়ে এ দেশে জঙ্গি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে এখানে ভয়াবহ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমি এটাকে জঙ্গিবাদ বলবো না। তবে এটি জঙ্গি তৎপরতা। এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা এশিয়া বিশেষত: দক্ষিণ এশিয়ায় সামপ্রতিক সময়ে এর বিকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের মোকাবিলায় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। এখানে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটির পক্ষ থেকে আরো অধিকতর সহযোগিতার প্রস্তাব রয়েছে। ৮ই নভেম্বরের নির্বাচনের পরও ঢাকা-ওয়াশিংটন সেই সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি। শমসের মবিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক বা কোটামুক্ত সুবিধাও পায় না বাংলাদেশ। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ মার্কিন প্রশাসনের শুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে ঢাকার তরফে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধার বদলে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা চাওয়া হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনের পর রাতারাতি পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে অর্থাৎ দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে উল্লিখিত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন না ওই পেশাদার কূটনীতিক। মার্কিন নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযান প্রসঙ্গে দেশটিতে বিভিন্ন মেয়াদে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনকারী শমসের মবিন বলেন, অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনের প্রচারাভিযানে আমরা অশালীন ভাষার প্রয়োগ দেখছি। শুধু তাই নয় এখানে একটি অস্থিরতার দৃষ্টান্তও দেখতে পাচ্ছি। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প যে গোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করছেন, তাদের বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ। তাদের অনেকের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নেই। এরা মনে করেন- আমেরিকার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য চুক্তি তাদের কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। বিদেশিরা (অভিবাসীরা) আমেরিকানদের চাকরির ওপর ভাগ বসাচ্ছে- এমন ধারণাও রয়েছে তাদের। এদেরই উসকে  দিচ্ছেন ট্রাম্প। ৮ই নভেম্বর সেই প্রচারাভিযানের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটলেও পরবর্তী সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন পোড়খাওয়া ওই কূটনীতিক। তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরবর্তী মার্কিন সরকারের নীতি বা পলিসি কি হবে তা হয়ত সময়ই নির্ধারণ করবে। হিলারিকে বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ রাজনীতিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিলারি নিউ ইয়র্কের সিনেটর ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার স্বামী বিল ক্লিনটন দীর্ঘ ৮ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ফার্স্ট লেডি হিসাবেও তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার অনেক কিছু খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। সিনেটর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ফার্স্ট লেডি, একই সঙ্গে সরাসরি পলিটিক্সের অভিজ্ঞতায় হিলারি অত্যন্ত ‘ম্যাচিউর পলিটিশিয়ান’ হিসাবে খ্যাতি পেয়েছেন। শমসের মবিন বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জঙ্গি একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়ায় অস্থিরতা চলছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অবস্থান রয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের অস্থিরতার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছেন। তার উত্তরসূরি হিলারি তা ধরে রাখতে পারবেন আশা করে তিনি বলেন, মার্কিন জনগণ তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মসূচিগুলো এবং সেবা খাত নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। জনগণের স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মসূচি ‘ওবামা কেয়ার’ নিয়ে দেশটিতে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। হিলারি অবশ্য এ নিয়ে একটি ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি এ কর্মসূচি পুরোপরি বাতিল না করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি পরিবর্তন আসে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *