শুক্রবার পিয়াস করিমকে দাফন : লাশ শহীদ মিনারে রাখার ঘোষণা

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ নারী ও শিশু সারাদেশ

77584_Pias-Karim
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মরহুম ড. পিয়াস করিমের নামাজে জানাযা আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এরআগে পিয়াস করিমের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল দশটায় কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসকাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ্।
অন্যদিকে মরহুমের ছোট ভাই জহির করিম জানিয়েছেন, আজ বুধবার লাশ দাফনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তার তিন বোনের মধ্যে একজন আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরলেও বাকি দুই বোন আগামী বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন। বোন এবং স্বজনদের কথা বিবেচনায় নিয়ে শুক্রবার লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শুক্রবার সকালে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে লাশ বের করব। এরপর কিছু সময় ধানমন্ডির বাসায় স্বজনদের দেখানোর জন্য রাখা হবে। দুপুর বারোটায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে রাখা হবে। বাদ জুমা জানাযা নামাজ শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করব।
তিনি বলেন, আমরা চাই না ভাইয়ের লাশ নিয়ে কোনো রাজনীতি হোক। তার প্রতি কেউ অসম্মান প্রদর্শণ করুক।
এর আগে কাল বুধবার সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ড. পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ এর প্রতিবাদ জানিয়ে লাশ শহীদ মিনারে রাখার অনুমতি না দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। লাশ শহীদ মিনারে নেয়া হলে আন্দোলনেরও হুমকিও দেয় তারা।

লাশ শহীদ মিনারে রাখার ঘোষণা
এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাশ রাখার ঘোষণা দিয়েছে নাগরিক সমাজ। যদি কোনো বাঁধা আসে তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মাহফুজউল্লাহ বলেন, আমরা কখনো শুনিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাউকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত অনুমতি লাগবে। অতীতে এরকম কোনো উদাহরণ পাওয়া যাবে না। পিয়াস করিমের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পিয়াস করিমের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন ও বোন অ্যাডভোকেট তৌফিক করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বরাবর মঙ্গলবার লিখিত আবেদন করেছেন।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে জুম্মার নামাজের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মহদেহে শ্রদ্ধা নিদেবন করা হবে। পিয়াস করিমের বোন যুক্তরাষ্ট্র থাকেন। সেখান থেকে আসতে সময় লাগার কারণেই শুক্রবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। দাফনের বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ রাখা নিয়ে এর বিরুদ্ধে সরকারের ইন্ধন বা উসকানি রয়েছে। কিন্তু এ ধরণের কার্যক্রম কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। পিয়াস করিমের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর উৎসাহতে বাধা না দেয়াই ভালো।
মাহফুজউল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা আমরা জানাতে পারি। এটি আমাদের মৌলিক অধিকার। এর বিরোধিতা করে তারা প্রমাণ করেছে যে জীবিত পিয়াস করিমের চেয়ে মৃত পিয়াস করিমের গুরুত্ব অনেক বেশি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে কয়েকদিন আগে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কোনো অনুমতি লাগেনি। তাহলে এখন কেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে?
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে তিনি জানতে চান কত জনকে অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে তা সবাইকে জানানো হোক। তারা যদি মনে করে থাকেন আজকের দিনই শেষ দিন তাহলে ভুল করবেন।
শুক্রবারের জন্য আলাদা কোনো আবেদন করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বক্তারা জানান, পিয়াস করিমের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে আমরা আশা করি আগামী দুই একদিনের মধ্য অনুমতি দেবেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ড. পিয়াস করিম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৬ বছর। ওই দিন ভোরে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সে করে ধানমন্ডির বাসা থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর সকাল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বরেণ্য শিক্ষক পিয়াস করিমের মৃত্যুতে দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক মহল সহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোক বার্তায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, মরহুম পিয়াস করিম ছিলেন সৎ, সাহসী, সত্যবাদী এবং গণতন্ত্রকামী। দেশের প্রতি ছিল তার মমত্ববোধ। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

বিএনপির শোক দিবস ঘোষণা
এদিকে মরহুম ড. পিয়াস করিমের মৃত্যুতে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। কর্মসূচী অনুযায়ী আগামী শুক্রবার সারাদেশে শোক দিবস পালন করা হবে। শোক দিবস পালন উপলক্ষে দেশব্যাপী সব দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধ:নমিতকরণ এবং দলের নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করবে। ড. পিয়াস করিমের মৃত্যুতে দেশব্যাপী শোক দিবস কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি।

এনডিপির কর্মসূচী
এ ছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপিও একদিনের শোক কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। কর্মসূচীর অনুযায়ী আজ বুধবার দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ, ড. পিয়াস করিমের লাশে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তার জানাযায় অংশগ্রহণসহ তার স্মরণে দলীয় কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচী সফল করার জন্য সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল মোকাদ্দেম।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক সভা
এদিকে মরহুম পিয়াস করিমের কর্মস্থল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এ জন্য আগামীকাল শোক সভা কর্মসূচী পালন করা হবে। একই সাথে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান পিয়াস করিমের ভাই জহির করিম।

লাশ শহীদ মিনারে নেয়া হলে প্রতিরোধ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ড. পিয়াস করিমের লাশ নেয়া হলে তা প্রতিরোধের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিভিন্ন বাম সংগঠন। এ উপলক্ষে আজ শহীদ মিনারে অবস্থান এবং চিত্রাঙ্কন কর্মসূচীও পালিত হয়েছে। আজও সেখানে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী, সড়কে আলপনা আঁকাসহ নানা কর্মসূচী পালন করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনগুলো।
এর আগে সোমবার ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে লাশ রাখার অনুমতি না দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। তা না হলে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেন তারা। গণজাগরণ মঞ্চের খন্ডিত অংশগুলোও একই ধরণের ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নয়া দিগন্তকে বলেন, পিয়াস করিমের লাশ নিয়ে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায় না।

মির্জা ফখরুলের নিন্দা
পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেয়া হলে কয়েকটি বাম সংগঠন প্রতিরোধের যে ঘোষণা দিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ এক প্রতিবাদ বার্তায় তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের কয়েকটি ছাত্র সংগঠন কর্তৃক সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী পিয়াস করিমের লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনতে না দেয়ার হুমকি বর্তমান আওয়ামী সরকারের স্বেচ্ছাচারী শাসনেরই সর্বোচ্চ রূপ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে। এই পবিত্র স্থানটি কারো ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় সম্পত্তি নয়। দেশের বিশিষ্ট শিাবিদ ও বুদ্ধিজীবি পিয়াস করিমের মতো একজন স্বাধীনচেতা, আপোষহীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মানুষের লাশ শহীদ মিনারে আনতে প্রতিহতের ঘোষণা কেবল অশোভনীয়ই নয় বরং শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানটিও নিজেদের দখলে নেয়ার চক্রান্ত।
তিনি বলেন, মতাসীন মহল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে গ্রাস করতে করতে এখন শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানটিকেও দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত করতে চাচ্ছে। মূলত ড. পিয়াস করিম সবসময় সত্যের পক্ষে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রার পক্ষে সকল ভয়ভীতি ও ক্রদ্ধ হুমকি উপেক্ষা করে বক্তব্য রাখতেন বলেই ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। আর এ কারণেই ড. পিয়াস করিমের মৃত্যুর পরও তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। শুক্রবার শহীদ মিনারে যথাযোগ্য মর্যাদায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ড. পিয়াস করিমের লাশ রাখার ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপরে প্রতি আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের কফিন রাখতে না দেয়ার জন্য বাম সংগঠনগুলোর কর্মসূচীর প্রতিবাদ জানিয়েছেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-ভাসানী) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *