নিজেকে উজাড় করে দেবো

Slider রাজনীতি

file-2

 

ঢাকা; দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিজের রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করা এবং দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক ও গুণগত আরো পরিবর্তন আনাই হবে সামনের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার সাড়ে ১৯ ঘণ্টা পর গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। প্রতিক্রিয়া জানান আত্মবিশ্বাসী ও প্রত্যয়ী হয়ে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সারা দেশে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল। ২০ তারিখ থেকেই সারা দেশের সব রাস্তা যেন এসে মিশেছিল ঢাকা শহরের মোহনায়। দলের সব নেতাকর্মীর জিজ্ঞাসা ছিল কারা হচ্ছেন দলের পরবর্তী নেতা। এরপর আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। এ জন্য দলের নেত্রী শেখ হাসিনাসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ওবায়দুল কাদের জানান আজ-কালের মধ্যে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর নাম ঘোষণা আসবে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা হবে সদস্যসহ পুরো কমিটি। তিনি জানিয়েছেন, কাউন্সিলে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাবই ছিল চমক। এটাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চমক। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে আরো সুসংগঠিত করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরো গুণগত পরিবর্তন হবে। এই চেঞ্জ মেকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণ বদলাতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সর্বোপরি তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, আমাদের আচরণ সামনে আরো শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে আরো গুণগত পরিবর্তন হবে। নিজেদের বদলাতে না পারলে আমরা দেশকে পরিবর্তন করতে পারবো না। আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, কাউন্সিলের আগে আপনারা কেউ কি দেখেছেন কারও ছবি দিয়ে বা ব্যানার দিয়ে অমুককে এ পদে দেখতে চাই, তমুককে দেখতে চাই। এটা এবার হয়নি। তার মানে আওয়ামী লীগে গুণগত পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের পর দলের সামনের এজেন্ডা প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা দুটি এজেন্ডা হাতে নিয়েছি। এক সামপ্রদায়িক পরাশক্তিকে পরাজিত করা। দুই আগামী নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি নেয়া। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করবো। তিনি বলেন, বেশি এজেন্ডা হাতে নেয়া উচিত নয়। এতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। অনেক ডিম একসঙ্গে এক ঝুড়িতে রাখলে ভেঙে যেতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি নিজেকে মন্ত্রী ভাবি না, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক ভাবি। নিজেকে শেখ হাসিনার কর্মী ভাবি। আমি পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছি। তিনি বলেন, দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ঘাম-শ্রম-মেধা-শক্তি-সামর্থ্য সবকিছু উজাড় করে দেবো। নেতৃত্বের আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এই দায়িত্ব সুবিশাল। আমি একটি অঞ্চলের হলেও আমার মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতা থাকবে না। আমি যখন এখানে আসি তখন একটি অঞ্চলের স্লোগান শুনেছি। তবে এখন আমি আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবো। সবার ওপরে দেশ। বিএনপি আওয়ামী লীগের কমিটিকে অভিনন্দন জানানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের ব্যাপার। তবে তাদের শুভেচ্ছা অভিনন্দন মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারতাম যদি তারা আমাদের সম্মেলনে আসতো। তারা কথা দিয়ে কথা রাখলেন না। সম্মেলনে আসলে তাদেরকে কেউ বলতো না, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। তিনি বলেন, আমরা তো তাদের সম্মেলনে যাওয়ার কথা দেইনি। এর আগের বারের সম্মেলনে কথা দিয়েছিলাম, তখন গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা এবার কথা দিয়েছিল আসবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো এলো না। এ বিষয়ে কথা বলে এখন আর বিতর্কের প্যান্ডোরার বাক্স খুলতে চাচ্ছি না। বিএনপির রাজনীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খেসারত দিচ্ছে। সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোথাও বিরোধী দলের স্ট্যাটাস নাই। আবার যদি তারা ভুল করে তবে ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকতে হবে তাদের। বিএনপির মতো জাম্বো জেট সাইজের কমিটি আওয়ামী লীগ করছে না জানিয়ে কাদের বলেন, কমিটি ঘোষণা করতে তাদের চার থেকে সাড়ে চার মাস সময় লেগেছে। আমাদের অত সময় লাগবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৮১ সদস্যের পূর্ণ কমিটির নাম ঘোষণা করতে পারবো। নিজেকে মন্ত্রী নয়, কর্মী উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগে আমি যখন রাস্তায় যেতাম, তখন দলের নেতাকর্মীরা আমাকে পেয়ে কোনো অভিযোগ করলে আমি কোনো সমাধান দিতে পারতাম না। এখন সুবিধা হবে, রাস্তায় যাবো, তৃণমূলেও যাবো। আমি অভিযোগের সমাধান ও সিদ্ধান্ত স্পটেই দিতে পারবো। প্রয়োজনে স্পট থেকে মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবো। আঞ্চলিকতার প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেত্রী আমাকে গোটা বাংলাদেশের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ এক সুবিশাল দায়িত্ব। আমার বাড়ি একটি অঞ্চলে, কিন্তু আমার দল সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তার উপরে দেশ। তাই এখানে কোনো আঞ্চলিকতা নেই। আমি যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করি, তাহলে নেত্রীর আস্থার অমর্যাদা হবে। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও নতুন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার সাত বছরের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমার দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করবে। আজকেও (গতকাল সোমবার) ক্যাবিনেটে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তার মুখাবয়বে কোনো বিচলিত হওয়া বা হতাশার ছায়া দেখিনি। গত কয়েকটি ক্যাবিনেটের চেয়েও তাকে আজ বেশি প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিউটি। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা যেখানে আছেন সেখানে অনৈক্য-বিভেদ প্রশ্রয় পাবে না। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নবগঠিত আংশিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপুমনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সদ্য সাবেক কমিটির নেতা আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হাছান মাহমুদ, আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে ধানমন্ডির কার্যালয়ের সামনে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি সারা দেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রেস ব্রিফিং শেষে কমিউনিটি সেন্টারের তৃতীয় তলায় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। তাদের নিয়ে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ শেষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *