রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা!

Slider সারাবিশ্ব

36126_war3

 

বিশ্বের দুই সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বকালের সর্বোচ্চ উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বিরাজ করছে। বিশেষ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বিদেশে তার নাগরিকদের রাশিয়া ফিরে যেতে ডিক্রি জারির পর এ আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের ইমেইল হ্যাক করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে রাশিয়াকে। এর প্রতিশোধ নিতে সিআইএ’কে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে রাশিয়ার রাজধানী ক্রেমলিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংককে বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতিকে দু’দেশের জন্য মারাত্মক ভয়ঙ্কর বলে অভিযুক্ত করেছেন জাখারোভা। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন এক্সপ্রেস। এ ছাড়া গত কয়েকদিনে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সাইবার হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের ইমেইল হ্যাক করবে না। সরাসরি হামলা চালাবে রাশিয়া সরকারের ইমেইলে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিষ্কার করে বলেছেন, ক্রেমলিনের ইমেইল হ্যাক করার মতো কারিগরি প্রযুক্তি রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর। তারা যখনই প্রয়োজন মনে করবে তখনই এ কাজ করে ফেলবে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির ইমেইল হ্যাক হয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি দায়ী করেছে রাশিয়ার সিনিয়র কর্মকর্তাদের। হ্যাক করা ওই ইমেইল অনলাইনে বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উইকিলিকস ও ডিসি লিকস। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া সিরিয়া নিয়ে তো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। তার ওপর এমন আক্রমণের জবাবে জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আপনাকে বার্তা দিচ্ছি। আমাদেরও এমন সক্ষমতা আছে। তিনি পুতিনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখন আমরা কখন প্রতিশোধ নেবো সেটা নির্ভর করবে সময়ের ওপর। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সাইবার আক্রমণ যেকোনো সময় ঘটতে পারে এবং তা দ্রুততার সঙ্গে করা হতে পারে। ‘দেয়ার উইল বি সাইবার ওয়ার’ বইয়ের লেখক ও ডাটা সিকিউরিটি কোম্পানি ব্লাঙ্কো টেকনোলজি গ্রুপের প্রধান স্ট্রাটেজিক অফিসার রিচার্ড স্টিয়েনোন বলেছেন, তথ্য পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে সাইবার হামলার জন্য হাতের গ্লোভস খুলে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর সাইবার হামলা ওবামা প্রশাসনকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। নির্বাচনের পর নতুন যে প্রশাসন আসবে যুক্তরাষ্ট্রে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। ‘দ্য প্লট টু হ্যাক আমেরিকা: হাউ পুতিনস সাইবার স্পাইস অ্যান্ড উইকিলিকস ট্রাইড টু স্টিল দ্য ২০১৬ ইলেকশন’ বইয়ের লেখক ও নৌবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ম্যালকম ন্যান্স। তিনি বলেছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক সব অবকাঠামোতে ধীর গতিতে রাজনৈতিক হামলা হচ্ছে। এটা ওয়াটারগেটÑ বাস্তবেই এটা ওয়াটারগেট। সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন যা করতে পারেন নি তারা তা করেছে। দুটি দেশের মধ্যে যখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে এই সাইবার যুদ্ধ।
ওদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, দু’দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসন ‘পৃথিবী ঝলসানো নীতি’ (স্কোরড আর্থ পলিসি) গ্রহণ করেছে। এটা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতায় মারাত্মক একটি নেতিবাচক প্রচাভ ফেলবে। এর ফলে ভাল কিছু আশা করা যায় না। কারো উচিত নয় রাশিয়াকে চাপ দেয়া। না সেটা আমেরিকার বর্তমান কর্তপক্ষ, না তাদের যারা পরে ক্ষমতায় আসবেন। সিরিয়ায় গৃহযুেেদ্ধ ক্রেমলিনের হস্তক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের এ উত্তেজনাকর সতর্কতা দিলেন মারিয়া জাখারোভা। সিরিয়ার আলেপ্পোতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা করেছে। এর মাধ্যমে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ রাশিয়ার। এর আগে সিরিয়ায় সমন্বয়ের মাধ্যমে আইসিসের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে ও যৌথভাবে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছিল দেশ দুটি। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্তব্ধ হয়ে পড়ে। আলেপ্টোতে মানবিক সহায়তা বিষয়ক গাড়িবহরে বোমা হামলা করে রাশিয়া। তারপর থেকেই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। এতে আরেকটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে, ভøাদিমির পুতিন বিদেশে অবস্থানরত রাশিয়ানদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ডিক্রি জারি করেছেন। আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় তিনি এমনটা করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। আরও খবর বেরিয়েছে যে, ইউরোপে যেসব স্থানে ন্যাটো বাহিনী রয়েছে তার কাছাকাছি তিনি সমরাস্ত্র মোতায়েন করেছেন। পারমাণবিক অস্ত্রের বিশাল বাঙ্কার নির্মাণ করা হয়েছে। এ সপ্তাহে সরকার ৪ লাখ নাগরিককে বাধ্য করেছে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কুচকাওয়াজে অংশ নিতে। অশান্ত এই রাজনৈতিক পরিবেশে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে সাক্ষাত করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে। এ বিষয়ে রাশিয়া বিষয়ে হোয়াইট হাউজের সাবেক বিশেষজ্ঞ অ্যানড্রু এস ওয়েইস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রাশিয়ার নেতাদের যে অবিশ্বাস ও শত্রুতা তা বাস্তব ও ক্রমবর্ধমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *