ট্রাম্প আমাকে জোর করে চুমু খেয়েছেন

Slider নারী ও শিশু

file

 

ডনাল্ড ট্রাম্প আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন। আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে চুমু খেয়েছেন। নতুন করে এ অভিযোগ এনেছেন মার্কিন এক নারী ক্যাথি হেলার (৬৩)। ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের তালিকা যখন দীর্ঘ হচ্ছে তখন এভাবেই সেই তালিকায় যুক্ত হলেন ক্যাথি। ২০০৫ সালের একটি অডিও-ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর রিপাবলিকান দল থেকে এবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ যৌন হয়রানির অভিযোগ আসছে আগে কখনও এমনটা শোনা গিয়েছে বলে তথ্য মেলে না। ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ নিয়ে একই রকম অভিযোগ আনলেন ৯ জন নারী। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা অনলাইন গার্ডিয়ান। ৭ই অক্টোবর যখন সারা বিশ্বে ডনাল্ড ট্রাম্পের যৌন হয়রানির কাহিনী নিয়ে তোলপাড় তখন নিউ ইয়র্কে নিজের বাসভবনে বসে ক্যাথি হেলার তার এক বন্ধুর একটি ইমেইল পড়ছিলেন। তাতে তিনি লিখেছেন, তিনি (ট্রাম্প) তোমার সঙ্গে কি আচরণ করেছিলেন আমি তাই ভাবছি। অমনি হেলারের মনে পড়ে যায় ২০ বছর আগের কথা। তখন তিনি মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন। ক্যাথি বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সেটাই ছিল প্রথম ও শেষ সাক্ষাত। ওই সাক্ষাতেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন। ঠোঁটে চুমু দেন। আমি দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তিনি রেগে যান। তিনি বলে ওঠেন, ‘ওহ, কাম অন’। এটা বলেই তিনি আমার ঠোঁটে ঠোঁট এঁটে দেন। তবে ডনাল্ড ট্রাম্প এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন এমন কাজ তিনি কখনো করেন নি। যারা এ অভিযোগ এনেছেন তাদেরকে তিনি মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ক্যাথি হেলার বলেন, আমরা মিথ্যাবাদী নই। বরং মিথ্যা কথা বলছেন ট্রাম্পই। ট্রাম্পের এক মুখপাত্র জ্যাসন মিলার বলেছেন, ক্যাথি হেলারের অভিযোগ সত্য নয়। মিথ্যা অভিযোগকে অনেকদূর নিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। ট্রাম্পের অবকাশযাপন কেন্দ্রে মা দিবসে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটার কোন সুযোগই নেই। ক্যাথি বলেছেন, তিনি শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্পের অফিসে। সেখানেই ওই ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্ট ট্রাম্পের ২০০৫ সালের রগরগে যৌনতা সম্পর্কিত কথাবার্তার যে অডিও-ভিডিও টেপ প্রকাশ করেছে তার সঙ্গে অভিযোগকারী নারীদের বক্তব্য মিলে যায়। ওই টেপে ট্রাম্প বলেছেন, জানেন আমি স্বাভাবিকভাবেই সুন্দরীদের প্রতি আকৃষ্ট হই। আমি তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে চুমু খাওয়া শুরু করি। এটা চুম্বকের মতো। আমি চুমু খাই। আমি এক্ষেত্রে দেরি করতে পারি না। আপনি যদি একজন তারকা হয়ে যান তাহলে তারা (মেয়েরা) আপনাকে এটা করতে দেবে। আপনি তাদেরকে নিয়ে যা খুশি তা-ই করতে পারেন। তিনি স্বীকার করেছেন, একবার তিনি একজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন।
এসব কথা জবাবে ট্রাম্প বলেন, এসব তার কথার কথা। তিনি এসব কাজ কখনো বাস্তবে করেন নি। কিন্তু ক্যাথি হেলার একই রকম অভিযোগকারী অন্য ৮ জন নারীর তালিকায় যুক্ত হলেন, যারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন প্রকাশ্যে। তারা বলেছেন, ট্রাম্প তাদের শরীরের সারা অংশ স্পর্শ করেছেন, চুমু খেয়েছেন। এসব তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর নিজের দল রিপাবলিকানদের মধ্যেই দেখা দেয় চরম বিভক্তি। অনেক রিপাবলিকান সিনেটর, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এর আগে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী মিট রমনি, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান প্রমুখ।
গার্র্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রায় দুই দশক আগের ঘটনা। ক্যাথি হেলার মনে করেন সেটা হতে পারে ১৯৯৭ সালে। সেদিনটি ছিল মাদারস ডে। ট্রাম্পের এস্টেট মার-এ-লাগোতে স্বামী, তিন সন্তান, শ্বশুর পক্ষের লোকজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা বসেছিলেন একটি বড় রাউন্ড টেবিলে। ক্লাবে যোগ দেয়া সদস্যদের অভিবাদন জানান ট্রাম্প। যখন তিনি ক্যাথিদের টেবিলে এসে থামেন তিনি ক্যাথি হেলারকে কাছে ডাকেন। এ সময় তার শাশুড়ি ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন পুত্রবধুকে। ক্যাথি দাঁড়িয়ে থাকেন। তার হাত বাড়ান হ্যান্ডশেক করার জন্য। ক্যাথি হেলার বলেন, এ সময় ট্রাম্প আমার হাত আঁকড়ে ধরেন। আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমার ঠোঁটে চুমু দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আমি পিছন দিকে বেঁকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভারসাম্য প্রায় হারিয়েই ফেলি। কিন্তু ট্রাম্প বলেন, ওহ, কাম অন। তার আচরণ ছিল অশালীন। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমার মুখের দিকে মুখ এগুতে থাকেন। ঠোঁটের কাছে ঠোঁট। আমি মাথা সরিয়ে নিই। ট্রাম্প আমার মুখের পাশে চুমু এঁটে দেন। এভাবে তিনি অনেকক্ষণ আমাকে ধরে রাখেন। তারপর ছেড়ে দেন। এতে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি। আমার ভয় হয়।
ওই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন আরও দু’জন। তারা হলেন সুসান ক্লেইন নামে ক্যাথির একজন বান্ধবী। অন্যজন নাম প্রকাশ করতে চান না প্রতিশোধের ভয়ে। তারা বলেন, আমার মনে আছে ক্যাথি ওই সময় ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে তার পুরো ভাব বিনিময়টা দেখতে পাই নি। তবে এটা দেখেছি যে ক্যাথির মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে আছেন ট্রাম্প। এ সময় ট্রাম্প তার ওপর শক্তি প্রয়োগ করছিলেন। তিনি ছিলেন আগ্রাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *