শক্তি প্রমাণের সিরিজ শুরু আজ

Slider খেলা ফুলজান বিবির বাংলা

34742_f5

 

ঢাকা; ঘরের মাঠে টানা ৬টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু। এরপর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফের জিম্বাবুয়ে ও সর্বশেষ এ বছর আফগানিস্তান। এরই মধ্যে টানা সিরিজ জিতে উপমহাদেশের ক্রিকেট শক্তি ভারতকে স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানকে স্পর্শ করার পালা। এরই মধ্যে টানা সাত সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান। তবে এসব নিয়ে ভাবছেন না জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা। তার লক্ষ্য শুধু এই সিরিজের দিকে। কারণ, প্রতিপক্ষ যে ইংল্যান্ড। মাশরাফি বলেন, ‘আমরা দূরের কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। তাহলে অতিরিক্ত বিষয়ে চাপ সৃষ্টি হবে। আমাদের লক্ষ্য কালকের (আজ) ম্যাচ, এই সিরিজ। ইংল্যান্ড দারুণ শক্তিশালী দল। তবে আমরাও ঘরের মাঠে ভালো খেলছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন ভালো খেলে সিরিজটা নিজেদের করে নিতে পারি।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৬টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে জয় পেয়েছে তিনবার। প্রথম জয় আসে ২০১০ সালে ব্রিস্টলে। তাদের মাটিতে ২২৩ রান করেও ৫ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় চমকের পালা এবার দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপে ২২৫ রানে বেঁধে রেখে ২ উইকেটে জয় পাওয়া। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এডিলেডে ২৭৫ রান করে শেষ ওভারে ১৫ রানে  জয় তুলে নেয় মাশরাফি বাহিনী। তবে আশার কথা হচ্ছে, শেষ চার ম্যাচে তিনবারই জিতেছে বাংলাদেশ।
এবার ৬ বছর পর ওয়ানডে সিরিজে দেশের মাঠে আরো একবার ইংল্যান্ডকে চমকে দেয়ার সুযোগ। কিন্তু আগের জয়গুলোকে প্রাপ্তি মানলেও নতুন দিনের নতুন সিরিজে সেগুলোকে শুধু স্মৃতিই মনে করেন মাশরাফি। বলেন, ‘গত দুই বিশ্বকাপে দুটি জয় আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো স্মৃতি হয়ে আছে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে ওদের হারানো আমাদের বড় অর্জনই। তবে সবাই আসলে সাম্প্রতিক ব্যাপারটি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। ক্রিকেটার হিসেবে ওটা নিয়ে ভেবে আমাদের লাভ নেই। নতুন একটি সিরিজ শুরু হচ্ছে। আমাদের মনোযোগ এটিতে ভালো খেলা।’ তাই অতীত নয়, বর্তমানে নিজেদের দলের ব্যাটিংয়ের দিকটা নিয়েই ভাবছেন অধিনায়ক। বিশেষ করে শেষের ১০ ওভার, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টাইগাররা যেখানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘গত সিরিজে আমাদের বাজে গেছে এ জায়গাটায়। প্রথম ম্যাচে সেট ব্যাটসম্যানরা আউট না হয়ে গেলে অন্যরকম হতে পারতো। দ্বিতীয় ম্যাচে পুরো ব্যাটিংই ভেঙে পড়েছে। শেষ ম্যাচে মোটামুটি ভালোই করেছে। রিয়াদ (মাহমুদুল্লাহ) ভালোভাবে শেষ করেছে। তবে রিয়াদকে আবার আমরা ভালোভাবে সাপোর্ট দিতে পারিনি। শেষের দিকে ৫-১০ রানও অনেক সময় বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমরা অবশ্যই ভাবছি। এ ধরনের চাপের ম্যাচে সব জায়গাই ঠিক করতে হবে। যে জায়গায় ভুল ছিল, সেসব ঠিক করতে হবে। যেসব ঠিক করেছি তা ধরে রাখতে হবে।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ৮ ম্যাচে তার সংগ্রহ একটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটিতে ২৬৭ রান। এরপর মুশফিকুর রহীম ৯ ম্যাচে ২৬৫, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৫৪ ও ইমরুল কায়েস ২৫১ রান করছেন। আজকের ম্যাচে সিনিয়র এই চার ব্যাটসম্যানই খেলবেন বলে নিশ্চিত। কারণ, তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করতে এসে ব্যর্থ তরুণ ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার যে আজ থাকছেন না তা অনেকটাই নিশ্চিত। এছাড়াও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দলে থাকবেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য ব্যাট হাতে তেমন সফল নন তিনি। ৯ ম্যাচে ১৮২ রান করেছেন তিনি। তবে বল হাতে তিনি ১১ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে সফর বোলার। সবচেয়ে বেশি ১২ উইকেট নেয়া আবদুর রাজ্জাক নেই দলে। কাগজে-কলমে ইংল্যান্ড দলের চেয়ে বাংলাদেশ দল অনেক এগিয়ে। আর তাই দলের এই পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের দিকে তাকিয়ে মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এ সিরিজে আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ভূমিকা রাখতে হবে। তবে তারা ছাড়াও দলে কিন্তু বেশ কিছু তরুণ আছে, যাদের ওপর নির্ভর করা যায়। যাদের ক্ষমতা আছে যে কোনো পরিস্থিতিতে ভালো করার। দলে তরুণদের মধ্যে সাব্বিরকে আজও দেখা যাবে তিন নাম্বারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং পজিশনটা সামাল দিতে। নাসির হোসেনকেও আজ দলে দেখা যেতে পারে। কারণ, তার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিন বোলিংটা দারুণ কার্যকর হবে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে থাকবেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। আর পেস আক্রমণে তাসকিন, আল আমিনের সঙ্গে অধিনায়ক মাশরাফি তো থাকবেনই। মূলত ইংলিশদের স্পিনেই যে কাবু করতে চায় বাংলাদেশ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মাশরাফি চান স্পোর্টিং উইকেট। যেখানে ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে স্পিনার ও পেসাররাও সফল হবেন। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিশনটা সহজ হবে না উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের কথা ধরলে আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটির সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড সেরার মধ্যে আছে। কাজটা সহজ হবে না। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। চাপ না নিয়ে খেলতে পারলে ভালো হবে।’

ইংল্যান্ডের ভয় কন্ডিশন
৩০শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পা রাখার পর কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রয়েছে ইংল্যান্ড দল। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বাটলার জানান, দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কাজটা সহজ হচ্ছে। তবে এখনও মানিয়ে নেয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া হবে খুব বড় ব্যাপার। আমরা কেবল একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি আর কয়েকটি অনুশীলন সেশন কাটিয়েছি। বেশি দিন হয়নি আমরা এখানে এসেছি। তবে দিন দিন এটা সহজ হচ্ছে। দিন-রাতের ম্যাচ বলে একটু সহজ হবে। তবে আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকবে। এটা হবে আরেকটা চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয় সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কয়েকবার যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে সিরিজ শুরু করতে পারিনি। আমাদের তিন ম্যাচের সিরিজের শুরুটা ভালো করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *