মাদক মামলার রেকর্ড দুই বছরে ৯৬৯৫৭

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

32225_b2

 

ঢাকা; দেশে মাদক মামলায় রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে ১২ বছরে মাদক মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮৫টি। অথচ গত ২ বছরে এ সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। ২০১৫ সাল ছিল মাদক মামলার রেকর্ডের বছর। ওই এক বছরেই পুলিশ ও বিজিবির দায়ের করা মামলা হয়েছে ৫১ হাজার ৩২০টি। আগের বছর ওই সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৬৩৭টি। সর্বমোট মামলা ৯৬ হাজার ৯৫৭।
এদিকে মামলার পাশাপাশি মাদকদ্রব্য উদ্ধারেও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তারা শেষ ২ বছরে শুধু বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে ৫ লাখ বোতলের বেশি।  ফেনসিডিল আটক করেছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ বোতল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটি সংসদীয় কমিটিকে দেয়া হয়েছে। মাদক মামলা ও উদ্ধারের এ রেকর্ডকে দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান। গতকাল তিনি মানবজমিনকে বলেন, পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দেশে মাদকের বিস্তৃতি বেড়েছে। প্রশাসনের একটি বিভাগের পক্ষে মাদকের ভয়াল থাবা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সামষ্টিক পদক্ষেপ। অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও র‌্যাব সমন্বিত চেষ্টা চালালে মাদকের বিস্তৃতি কমবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় মাদক মামলার সংখ্যা বেড়েছে। প্রশাসনের তৎপরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অধিদপ্তরের ডিজি। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছরই মাদক মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
২০১২ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৩৭ হাজার ২৬৪টি, ২০১৩ সালে ৩৫ হাজার ৪৩২টি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৯টি ও ২০১৫ সালে ৪৯ হাজার ৭৫২টি। এসব মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে দায়ের করা মামলার মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে ৪৪ হাজার ৫২টির। চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে ৪৪টি, আর এখনও তদন্ত করা হচ্ছে ৩টি মামলার। প্রতিবেদনে ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৬টি মামলার। এখনও তদন্ত চলছে ৫৪টির। আর চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ৩২টি মামলার। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে মাদকদ্রব্য উদ্ধার, মামলা ও আসামি আটক নিয়ে বিজিবির তৎপরতা আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র ও অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ করতে দেশে ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্তে ৬৩১টি বিওপি সক্রিয় রয়েছে। সীমান্তের বিওপিগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে (যেখানে এক বিওপি হতে অন্য বিওপির দূরত্ব বেশি) এ পর্যন্ত মোট ১২৪টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে মাদক চোরাচালন এবং অবৈধ অস্ত্র পাচার রোধে বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়াও সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের বাইরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে যৌথ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। বিজিবির মাদকদ্রব্য উদ্ধার পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত ২ বছরে তারা ৯ লাখ ২৯ হাজার ২৯৯ বোতল ফেনসিডিল, ১৬ হাজার ৩০৮ কেজি গাঁজা, ৫ লাখ ২ হাজার ৩৯৮ বোতল বিদেশি মদ, ১৬ হাজার ৮৬০ লিটার দেশি মদ, ৯৭ হাজার ২৮৬ বোতল বিয়ার, প্রায় ২৭ কেজি হেরোইন, ৭৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। ওই ২ বছরে বিজিবি মোট মামলা দায়ের করেছে ৩ হাজার ১০৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ১৯১ জনকে। এসব মামলার মধ্যে ২০১৪ সালে করা হয় ১৫৩৮টি ও ২০১৫ সালে ১৫৬৮টি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজিবির দায়ের করা এসব মামলা বিচারাধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *