রাতারগুলকে ছাড়িয়ে গেল নব আবিষ্কৃত ‘মায়াবন’

জাতীয়
 file-2

পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটিতে ভ্রমণ উৎসবে মেতে উঠেছে দেশের মানুষ। ঈদের পর দিন থেকে গোয়াইনঘাটের ৫ টি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ সপরিবারে আবার কেউবা বন্ধু-বান্ধব সাথে নিয়ে ছুটে এসেছেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এর মধ্যে প্রকৃতি কন্যা জাফলং, রাতারগুল সোয়াম ফরেষ্ট, বিছনাকান্দি জিরো পয়েন্ট, পান্তুমাইয়ের ফাটাছড়া ও সংগ্রাম পুঞ্জির ‘মায়াবী’ ঝর্ণাধারা। এছাড়া নব আবিষ্কৃত সিলেটের বৃহত্তর জলারবন জুগিরকান্দি ‘মায়াবন’ পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এ পর্যটন কেন্দ্রগুলো তাদের সৌন্দর্য্যে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতির ঢেলে সাজানো এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ঈদ পরবর্তী ছুটির দিন গুলোতে পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এখানে দেশি-বিদেশী পর্যটকরা ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে সাতার আর জলকেলি করে আনন্দ উপভোগ করছেন। পর্যটন এলাকা জাফলং‘র প্রবেশ দ্বার মামার বাজাররের মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে বল্লাঘাট পর্যন্ত কয়েক শতাধিক পর্যটক-বাহী গাড়ী রয়েছে, রাস্তাঘাট, রেষ্টুরেন্টের সম্মুখ ছাড়াও পাথর রাখার ফিল্ড ও ক্রাসার মেশিন জোন এলাকায়ও প্রচুর পরিমান গাড়ী লক্ষ্য করা যায়। বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, মায়াবী ঝর্ণার জলে ¯œান করে পর্যটকরা আত্মতৃপ্ত হতে চেষ্টা করছেন। সর্ববৃহত সমতল চা উৎপাদক জাফলং চা-বাগানেও পর্যটকদের ঘোরে বেড়াতে লক্ষ করা গেছে। ঈদের পরদিন থেকে ২য় সুন্দরবন খ্যাত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্টও পর্যটকদের পদচরণায় মুখর হয়ে আছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভিড় করে উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে নব আবিষ্কৃত বৃহত্তম মনোরম লোকেশন ‘মায়াবন’। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্টের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ বেশি বিস্তির্ণ এ লোকেশনে ঈদের দিন বিকাল থেকে পর্যটকদের সমাগম লক্ষ করা গেছে। মায়াবনের মায়াবী ইন্দ্রজালে পর্যটকদের আকর্ষণ ছিল বেশ লক্ষণিয়। কেননা মায়াবনে প্রবেশের পর অন্তত ৪/৫ ঘন্টার ভেতরে কেউ বের হতে চাননা। যোগাযোগ মাধ্যম সহজতর ও বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, চা-বাগান ও জাফলংয়ের যাত্রাপথে অবস্থানের কারণে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত মায়াবন ছিল পর্যটকদের পদচারণায় মূখর।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন লোকেশনে অবস্থান করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের সঙ্গে আলাপেনিজেদের ভ্রমণাভিজ্ঞতা নিয়ে তঁদের নানা রকম উচ্ছ্বাস ও অনুভূতির কথা জানা যায়। তবে রাস্তাঘাটের কেহাল অবস্থার জন্য অনেককে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ¯েœহা চক্রবর্তী বলেন, ‘গোয়াইনঘাটে এতো সুন্দর সুন্দর লোকেশন রয়েছে। এতো বেশি মনোরম লোকেশন দেশের অন্য কোন উপজেলায় আছে কিনা জানিনা। এসব লোকেশনের কারণে গোয়াইনঘাট উপজেলাকে পর্যটন উপজেলা ঘোষণা করা দরকার।’ সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ আল মাসুদ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘খারাপ রাস্তার জন্য জাফলং আসতে বেশ কষ্ট হয়েছে। এ দিক থেকে মায়াবনে যাওয়া বেশ আরামদায়ক। জাফলংয়ের সেই পাঁচ কিলোমিটার দূর তামাবিলে গাড়ি রেখে কখনো হেঁটে কখনো রিকশায় বালাঘাট জিরো পয়েন্টে এসেছি।’ জাফলং প্রবেশমুখেই শফিকুল ইসলাম বিক্রমপুরির ‘ক্ষুধা রেস্টুরেন্ট’। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভোজ আয়োজনে পর্যটকদের ভিড়। তবে কেবল খাওয়ার জন্য এ ভিড় নয়। রেস্তোরাঁর পুরো দেয়ালে কবিতার ছন্দে নানা রকম সতর্কবাণী লেখা পোস্টার সাঁটানো। কখন জোয়ার আসবে কখন ভাটা হবে। পিয়াইন নদের কোনো অংশে নামলে বিপদ আছে কোথায় নামলে বিপদ নেই, সবই লেখা আছে দেয়ালে। পাশাপাশি অডিও প্লেয়ারে বাজছে শফিকুল ইসলামের লেখা কবিতার ছন্দে ছন্দে সতর্কবাণী। কবিতার বিষয় শুধু সতর্কবাণী নয়। আছে জাফলং পিকনিক স্পটের বর্ণনা। কোথায় গেলে কী দেখা যাবে। কত টাকা খরচ হবে সবই আছে কবিতার-কথায়। উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যুত্ চলে গেলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি নিজেই আবৃত্তি শুরু করেন। পর্যটকের ভিড় বাড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, আনন্দ-ভ্রমণ সহায়তাকারী পিয়াইন নদের মাঝি, হোটেল ব্যবসায়ী এবং নানা ফেন্সি জিনিসের বিক্রেতারা দারুণ খুশি। সিলেটের খাসিয়া পানের সুনাম দেশে-বিদেশে থাকায় অনেককেই দেখা গেছে জাফলংয়ের খাসিয়াপুঞ্জি (পানের বাগান) থেকে পান কিনতে। পর্যটন স্পট, পিয়াইন নদ, জিরোপয়েন্ট, খাসিয়াপুঞ্জিতে পর্যটকের ভিড় মামার দোকানের খেলনার দোকান, শিল-পাটার দোকানেও। খাসিয়াপুঞ্জি নকশিয়া, লামা, সংগ্রামপুঞ্জি এসব এলাকায়ও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকদের গাড়ির চাপে সিলেট-জাফলং সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। বাপা’র সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন ‘সিলেটের মধ্যে পর্যটনের জন্য অন্যতম গোয়াইনঘাট উপজেলা। এখানকার পর্যটন স্পটগুলো গড়েউঠেছে প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে নব আবিষ্কৃত জুগিরকান্দি মায়াবন ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। অল্প দিনের ব্যাবধানে সকল পর্যটনস্পট গুলোকে ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তার শির্ষে স্থান করে নেবে। ওসি গোয়াইনঘাট মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘ঈদের ছুটিতে এ উপজেলায় পর্যটকদের ভিড় বেশি হয়। তাই আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। সকল পর্যটন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সালাহউদ্দিন বলেন ‘ঈদের ছুটি কাটাতে গোয়াইনঘাটে আসা পর্যটকদের কোনো অসুবিধা যাতে না হয়, সে জন্য পুলিশসহ প্রশাসনও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন ‘গোয়াইনঘাট উপজেলা এখন পর্যটন নগরীতে পরিণত হয়েছে। বাহির থেকে আসা পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা দিতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ গোয়াইনঘাটবাসী সার্বক্ষণিক আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *