বাবুল আক্তারের চাকরি গেল, এরপর কী?

Slider টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

9ddbba74d2d3ada5694eac31bbd87ab4-SP-Babul-Akhter_01.0

ঢাকা: মিতু হত্যা ঘটনার তদন্ত চলছে। যদি তদন্তে বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ কে এম শহীদুল হক, আইজিপি

স্ত্রী খুন হওয়ার পর চাকরি গেল পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’ যদিও বাবুল ও তাঁর শ্বশুরের ভাষ্য, স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেছিলেন।

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, সে বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। কেন বাবুলের চাকরি গেল, তার সন্তোষজনক জবাবও দেননি কেউ। তবে পুলিশ সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্ত্রী হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাঁকে চাকরিতে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক  বলেন, ‘মিতু হত্যা ঘটনার তদন্ত চলছে। যদি তদন্তে বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাবুলের অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারির পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অব্যাহতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়ার আভাস দিয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর ডিবির সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামানের কাছে গতকাল সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, মিতু হত্যার এক আসামিকে ধরতে তিনি চট্টগ্রামের বাইরে আছেন। ঘটনার সঙ্গে বাবুলের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে কি না, সে বিষয়েও কিছু বলেননি তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেছিলেন, বাবুলের পদত্যাগ করাটাকে তিনি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। কারণ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর যদি চাকরি করার মানসিকতা না থাকে, তবে জোর করে চাকরি করানো যায় না। এ জন্য পদত্যাগপত্র দাখিল করার প্রায় দেড় মাস পর সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ১২ জনের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে আটজন কারাগারে। দুজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। আর কামরুল শিকদার ওরফে মুছা ও কালু নামের দুজন পলাতক। মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, গত ২২ জুন মুছাকে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।

মিতু হত্যার পর প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকেই বলা হয়, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাবুলের সাহসী ভূমিকা ছিল। এর প্রতিশোধ হিসেবে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই অবস্থান পাল্টায় পুলিশ। গত ২৪ জুন গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ঢাকা মহানগর ডিবির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ১৫ ঘণ্টা ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ শেষে আবারও তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ঘুরে যায় ঘটনার মোড়। মিতু হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা আলোচিত হতে শুরু করে। ওই জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই বাবুলকে পদত্যাগপত্রে সই করানো হয় বলে সূত্রগুলো জানায়।

এরপর হত্যা ছাপিয়ে বাবুলের চাকরি থাকা না-থাকার বিষয়টিই আলোচিত হতে শুরু করে। বেশ কিছুদিন সেই পদত্যাগপত্র পুলিশ সদর দপ্তরে থাকার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত ৩ আগস্ট বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন বাবুল পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজি (প্রশাসন) বরাবর লিখিতভাবে যোগদানপত্র জমা দেন। এতে তিনি অনুপস্থিতির সময়টা ছুটি হিসেবে নিয়ে তাঁকে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদান করতে না পেরে সই করা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য গত ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে আবেদন করেন বাবুল। এতে তিনি বলেন, গত ২৪ জুন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে তাঁকে চাকরির অব্যাহতিপত্রে সই করতে হয়।

বাবুল যে স্বেচ্ছায় অব্যাহতিপত্রে সই করেননি, এ কথা তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেনও একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর শ্বশুর পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আপনার সঙ্গে যদি আমার মনের মিলই না থাকে, তাহলে তো আর সেখানে যুদ্ধ করে আগানো ঠিক হবে না। আর যদি মনে হয় যে আইনি প্রক্রিয়ায় আগাব…তাহলে সেদিকে যেতে হবে। হয়তো এ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও নাই।’ গতকাল রাত আটটায় তিনি বলেন, বাবুল বেলা ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছেন, এখনো ফেরেননি। ফিরলে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে তাঁরা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *