কেরির সফরে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়

Slider টপ নিউজ সারাবিশ্ব

29202_keri

 

এক ঝটিকা সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি কাল ঢাকা আসছেন। তাকে বহনকারী যুক্তরাষ্ট্র এয়ারফোর্সের বিমানটি সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মন্ত্রীকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর থেকে সন্ধ্যা অবধি সরকার প্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও উদীয়মান তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ে ব্যস্ত সময় কাটাবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জন কেরি এমন এক সময় ঢাকা সফর করছেন যখন দেশটিতে নির্বাচন এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের দামামা বাজছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও সহিংস-চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই অব্যাহত রেখেছে। সেখানে দেশি-বিদেশি সমন্বিত প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে? তা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরে আলোচনা হবে। সেখানে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস-চরমপন্থা মোকাবিলায় পরস্পরিক সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ভাষ্য মতে, গুরুত্বপূর্ণ ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই কথা হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র, পরিচালক এলিজাবেথ ট্রুডো সফরটির বিষয়ে দেয়া আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি ও বিস্তৃত সম্পর্ক আরো জোরদারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। সফরকালে বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। সেখানে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার বিষয়ে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব আরো শক্তিশালী করার ওপরে জোর দেবেন জন কেরি। ঢাকার কূটনীতিকরাও এমনটাই বলছেন। তাদের মতে, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সমন্বিত ওই প্রস্তাব নিয়ে তার প্রতিনিধি হিসেবে মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালসহ একাধিক প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে ঢাকা সফর করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটও এ নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বাংলাদেশ অবশ্য ‘প্রয়োজনের নিরিখে’ মার্কিন সহায়তা নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। কিন্তু কোন ফর্মে বা কাঠামোতে ওই সহায়তা নেয়া হবে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। কূটনৈতিক অঙ্গনে সামপ্রতিক সময়ে যে তথ্যটি বেশ আলোচনায় তা হলো- সহিংস চরমপন্থিদের মোকাবিলায় বিশেষ করে গুলশানের মতো ঘটনা ঠেকাতে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত ত্রিদেশীয় উদ্যোগ হতে পারে। কিন্তু আদৌ কি হবে তা কেরির সফরে স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখে ঢাকাস্থ দূতাবাস ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের বিষয়ে গতকাল বলেছে, একটি গণতান্ত্রিক, উদারমনা ও সহিষ্ণু বাংলাদেশের অভিন্ন স্বপ্ন রয়েছে আমাদের, যেখানে এ দেশটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সেতু হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর এলাকায় স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির সমন্বয়কারী হবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে- স্পন্দনশীল, নিরাপদ গণতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশকে তাদের সত্যিকারের সম্ভাবনা পূরণের জন্য এখানে ক্রমবিকাশমান রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ‘ফেক্ট শিট: ইউএস বাংলাদেশ রিলেশনশিপ’ শিরোনামে দূতাবাসের ওই বিবৃতিতে বলা হয়- যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সহিংস জঙ্গিবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরালো হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ দুই দশক ধরে অসামান্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া, দারিদ্র্য নিরসন, মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মধ্যআয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সহযোগিতা দিতে পেরে গর্বিত অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র।
প্রস্তুতি-সংশ্লিষ্টরা সিরিজ বৈঠকে ব্যস্ত, সূচিতে কাঁটছাট চলছে: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফর সফল করতে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ দেশটির দূতাবাস এবং ওয়াশিংটন থেকে আসা কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে চলেছেন। শুক্রবার ছুটির দিনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে সফর-প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। গতকালও পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা অফিস করেছেন। ওয়াশিংটন থেকে আসা মার্কিন মন্ত্রীর সফরের এডভান্স টিমের সদস্যরা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের বৈঠক করেছেন। তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসহ কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ভেন্যু পরিদর্শন করেন। সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মার্কিন মন্ত্রীর সফর সূচিতে প্রতিনিয়ত সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে জানিয়ে সেগুনবাগিচার একাধিক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, সফরসূচির অনেক কিছু শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে। তবে সরকারি সূচিগুলো মোটামুটি চূড়ান্ত করা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ। ১টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির নেতৃত্বাধীন দেশটির প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সেটি আলোচনা হবে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, কেরির সম্মানে মন্ত্রী মাহমুদ আলী একটি ভোজের আয়োজন করছেন। আলোচনা শেষে কাছাকাছি ভেন্যুতে সেই ভোজ হওয়ার কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন মন্ত্রীর ঢাকা সফরটি হবে প্রায় ৮ ঘণ্টার। সকাল ১০টার আগেই তাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকায় পৌঁছাবে এমন ধারণা দিয়ে এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম দু’ঘণ্টা দূতাবাসের কর্মসূচি। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল আড়াইটা পর্যন্ত সরকারি কর্মসূচি। আর বিকালে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছেন তারা। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নাম পাওয়া না গেলেও বৈঠকটি যে হচ্ছে সে বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও দূতাবাস সূত্র মোটামুটি নিশ্চিত করেছে। ঢাকা সফর শেষ করার আগে রাজধানীর একটি তৈরি পোশাক কারখানাও পরিদর্শনে যেতে পারেন জন কেরি। তার সফরের বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতিও দেয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন সফরের বিষয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ বলেই জন কেরি এখানে আসছেন। তার সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরো ক্ষেত্র অনুসন্ধানের সুযোগ বাড়বে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সামপ্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে ওই কূটনীতিক বলেন, দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে এটি অব্যাহত থাকবে আশা করে তিনি বলেন, সামপ্রতিক সময়ে মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা  দেশাই বিসওয়াল ঢাকা সফর করেছেন। সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যে কোনো সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে গেছেন তিনি। সেই সহায়তা বাংলাদেশ কিভাবে নেবে? কেরি সফরে তা নিয়ে আলোচনা হবে এবং এটি আরো স্পষ্ট হবে বলে মনে করেন ওই কূটনীতিক। উল্লেখ্য, প্রায় চার বছর ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা জন কেরির এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এখান থেকে তিনি দিল্লি যাবেন। ২০১২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা হিলারি ক্লিনটন সর্বশেষ ঢাকা সফর করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *