ঢাকা: মজুরি বাড়ানোসহ মূলত চার দফা দাবিতে নৌযানশ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠনের ডাকা ধর্মঘট চলছে। সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় শুরু হওয়া লাগাতার এই ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন এলাকার নৌযাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। সব নদীবন্দরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। যাত্রীরা নৌবন্দরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে লঞ্চ না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ কেউ বিকল্প পথে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
লাগাতার কর্মবিরতি পক্ষে থাকা সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। তবে মূল দাবি হচ্ছে চারটি নৌযানশ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, নৌদুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, নদীপথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা এবং নৌপথের নাব্যতা বাড়ানো। তিনি বলেন, এসব দাবি আদায়ে নৌযানশ্রমিকদের আরও ছয়টি সংগঠন ধর্মঘটে সম্পৃক্ততা ঘোষণা করেছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নৌযানশ্রমিকদের ধর্মঘট চলবে।
এর আগে ২০ এপ্রিল থেকে নৌযানশ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে সারা দেশে নৌযানশ্রমিকেরা ধর্মঘট শুরু করেন। ছয় দিনের মাথায় মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বৈঠক করে সর্বনিম্ন ধাপের মজুরি ৭ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। এ সিদ্ধান্তে তখন শ্রমিকেরা ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তবে মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট আবেদন করে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার ঢাকার সদরঘাট থেকে বিভিন্ন পথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সকালের দিকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি পথ থেকে আসা লঞ্চগুলো টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে অন্যত্র সরে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, দুপুরে চাঁদপুরের উদ্দেশে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এ ছাড়া সারা দিনে আর কোনো লঞ্চ যায়নি।
লঞ্চ না ছাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা টার্মিনালের পন্টুনে দীর্ঘক্ষণ হতাশ হয়ে চলে যান। চাঁদপুরগামী আবদুল মান্নান বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটায় টার্মিনালে এসেছি। চাঁদপুরের মতলব যাব। পরিবার-পরিজন নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে টার্মিনালে বসে আছি।’
বরিশাল অফিস জানায়, বরিশাল নৌবন্দর থেকে ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো সকালে বরিশাল নৌবন্দরে নোঙর করলেও বন্দর থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। দুপুরে লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা করে শ্রমিকেরা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন এবং নৌযানশ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব একিন আলী বলেন, সর্বনিম্ন বেতন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিতে এর আগে দুবার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। বারবার আবেদন-নিবেদন করা হলেও সরকার কিংবা মালিকপক্ষ দাবি পূরণ করেনি। কেবল আশ্বাস মিলেছে। তাই বাধ্য হয়ে আবার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
খুলনা অফিস জানায়, ধর্মঘটের কারণে ভোর থেকে খুলনার ভৈরব ও রূপসা নদীতে লঞ্চ, কার্গো ও লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ রয়েছে। নগরের ৪,৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে কার্গো ও লাইটার জাহাজগুলো নদীতে নোঙর করে থাকলেও সেগুলোতে মালামাল বোঝাই ও খালাস হয়নি। তবে তেলবাহী ট্যাংকার এ ধর্মঘটের আওতামুক্ত রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না। এতে সার ও সিমেন্ট জাহাজে পড়ে আছে। ধর্মঘটের কারণে আমদানিকারকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরাও শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে চাই। তবে তাঁদের দাবি করা মজুরি অযৌক্তিক।’
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের কারণে চাঁদপুর থেকে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, শরীয়তপুরসহ ১৭টি পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করেনি বা বন্দর ছেড়ে যায়নি। তবে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল ও খালাস অব্যাহত রয়েছে।