মায়ের স্বীকারোক্তি; চাপাতি দিয়ে নিজ হাতে ওদের গলা কাটি

Slider টপ নিউজ নারী ও শিশু সারাদেশ

27077_f4

 

রাজধানীর উত্তর বাসাবো এলাকায় দুই শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তাদের মা তানজিনা রহমান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গতকাল পুলিশের কাছে নৃশংস এ হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। চাপাতি দিয়ে নিজ হাতেই গলা কেটে সন্তানদের হত্যার কথা জানান। এ ঘটনায় নিহত শিশুদের পিতা মাহবুব রহমান গতকাল ভোরে তার স্ত্রী তানজিনা রহমানকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে তানজিনাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রিমান্ডে কি কারণে তিনি নিজের সন্তানকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন তা জানা যাবে। এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যেভাবে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, তাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২ নম্বর বাসা থেকে দুই ভাইবোনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত দুই শিশু হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬) ও মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরার (৭)। ‘ষড়ঋতু’ নামের ছয়তলা ভবনটির চিলেকোঠায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর তাদের মা তানজিনা রহমান বাসা ছেড়ে চলে যান। পরে গতকাল ভোর ৪টার দিকে বাসার কাছ থেকে তাকে আটক করা হয়। শিশুদের বাবা মাহবুব রহমান ঢাকা ওয়াসায় চাকরি করেন। মাহবুব রহমান জানান, শুক্রবার তিনি এশার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। বাসায় ফিরে দেখেন, দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। পরে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর একজনের এবং পাশের কক্ষে অন্য সন্তানের লাশ দেখতে পান। ওই সময় স্ত্রী তানজিনা রহমান ঘরে ছিলেন না। নিহত দুই শিশু মাদরাসায় পড়াশোনা করতো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মো. মারুফ হাসান বলেন, একটি লাশ বেডরুমের বিছানায়, অন্যটি পাশের রুমে ছিল। মাহবুব রহমান ওয়াসার কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করেন। তিনি সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যান। পরে ফিরে এসে এ অবস্থা দেখতে পান। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাসা থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।  জানা যায়, গত আট মাস ধরে তারা ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বাড়িটি একবছর আগে  তৈরি হয়েছে। নিহত শিশুদের ফুফু লাইলা নূর বলেন, ২০০৮ সালে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই আমরা তার (শিশুদের মা) মানসিক সমস্যা বুঝতে পারি। এরপর ডাক্তার দেখানোর পর তিনি সব সময় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, তানজিনা রহমান প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্নে দেখতেন, তিনি নিজেই তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছেন। তিনি আরো দেখতেন তার মা তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছেন। তানজিনা রহমান তার স্বামীকে মেরে ফেলেছেন এমন স্বপ্নও দেখতেন মাঝে মধ্যে। তিনি আরো বলেন, গত ৩রা জুন তারা সপরিবারে নারায়ণগঞ্জের আমাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। লাইলা নূর বলেন, খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায় নিহত শিশুদের নানার বাড়ি। তাদের নানা বেঁচে নেই। নানি, মামা ও খালারা সেখানে থাকেন। নিহত আবরার গত এক বছর ধরে স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশুনা করতো। মেয়েটাও কিছুদিন আগে মাদরাসায় ভর্তি হয়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সকাল ৬টার দিকে দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুদের বাবা মাহবুব রহমান। তানজিনাকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর আগে ভোর ৪টার দিকে তাকে বাসার পাশ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছে, চাপাতি দিয়ে নিজ হাতেই তিনি তার সন্তানদেরকে গলা কেটে হত্যার কথা জানান। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ কথা বলার সময় তিনি কাঁদছিলেন। তবে কি কারণে তাদেরকে হত্যা করেছেন তা রিমান্ডে জানা যাবে। এদিকে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিহত শিশুদের মা তানজিনা রহমানের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কুদ্দুস ফকির তাকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। তিনি ১০ দিনের রিমান্ড চান। আদালত শুনানি শেষে তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ নিহত দুই ভাইবোনের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যেভাবে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, তাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। সোহেল মাহমুদ আরো জানান, নিহত হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়ার (৬) গলা ভারী ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এমনভাবে কেটেছে যে, তার গলা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘাড়ের পেছনের চামড়ায় সামান্য লেগে ছিল মাথা। আর মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরারের (৭) ঘাড়ের ডানপাশে দু’টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে তার স্পাইনাল কর্ডসহ ঘাড়ের বেশ কিছু অংশ কেটে গেছে। এই আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *