গুলশান হামলা ; হামলাকারীদের সঙ্গে ২ দিন আগে বৈঠক করে তামিম

Slider টপ নিউজ

d55ee5a3c9ff895545d5cf957d178279-C_05

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সমন্বয়কারী ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ দাবি পুলিশের। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, হামলার দুই দিন আগে আক্রমণকারীদের সঙ্গে তামিম সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বৈঠক করেছিলেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় ওই বৈঠক হয়েছিল এবং সেখান থেকেই হামলাকারীরা হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলেছে, গুলশানে হামলার পরিকল্পনাকারী, সমন্বয়ক, অর্থদাতা এবং হামলায় সহযোগিতা করেছেন এমন ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ‘নব্য জেএমবির’ নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে তামিম পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। তবে মূল পরিকল্পনাকারী আরেকজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বসুন্ধরার একটি বাসায় তামিম চৌধুরীর বৈঠক করার বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরেছে।
এ ছাড়া মূল পরিকল্পনাকারী, সমন্বয়ক, অর্থদাতাসহ গুলশানের হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে।
পুলিশ ইতিমধ্যে গুলশানে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী এবং ব্লগার হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, তামিম ও জিয়া যেখানেই থাকুন, কেউ দেখলে বা সন্ধান পেলে যেন সরাসরি পুলিশকে জানান। প্রয়োজনে তাঁর (আইজিপি) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে আহত জঙ্গি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানসহ বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার থাকা জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিরা প্রথমে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ভাড়া করা একটি বাসায় উঠেছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা হামলার দুই দিন আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাড়া করা বাসায় গিয়ে ওঠেন। ওই দিনই সেখানে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন তামিম চৌধুরী। ওই বৈঠকে আক্রমণকারীদের হামলার ছক বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ১ জুলাই রাতে ওই বাসা থেকেই পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালান।

ওই দিন রাত ৮টা ৪২ মিনিটে জঙ্গিরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমায় নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনা নেতৃত্বে সেনা অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের ১২ ঘণ্টার জিম্মি সংকটের অবসান হয়। ওই অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। আহত হন র্যা ব ও পুলিশের ৩২ জনসহ মোট ৪১ জন।
জঙ্গি তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তামিম চৌধুরী ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এসেছেন। দুবাই থেকে এক ব্যক্তি হুন্ডিতে তামিমের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। অন্তত ছয় মাস আগে গুলশানে হামলার পরিকল্পনা করেছেন জঙ্গিরা। এরই অংশ হিসেবে জঙ্গিরা প্রথমে ঢাকার তিনটি স্থানে মেস ভাড়া নিয়ে হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দেন। এরপর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের একটি চরে নিয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষকদের মধ্যে একজন হলেন রায়হান কবির ওরফে তারেক, যিনি কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত নয়জনের একজন। কল্যাণপুরের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তামিম চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের কাছে তথ্য আছে যে তামিম চৌধুরী বর্তমানে ঢাকায় আছেন। তিনি দ্রুত স্থান পরিবর্তন করেন। কয়েক দিন আগে পর্যন্ত পুলিশের কাছে খবর ছিল, তামিম ঘুরেফিরে বনানী, বারিধারা ও গুলশান এলাকায় অবস্থান করছেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

হাসনাত ও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদ: গুলশানে হামলার ঘটনায় আট দিনের রিমান্ডে থাকা প্রকৌশলী হাসনাত রেজা করিম ও কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গতকাল তাঁদের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন পার হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যে হাসনাত করিমের মুঠোফোনে ‘অ্যাপ উইকার’ ডাউনলোড করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, এই অ্যাপ ব্যবহার করেই জঙ্গিরা হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে বাইরে যোগাযোগ করে থাকতে পারেন। তাই মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজমের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, হাসনাত করিমের মুঠোফোনটি পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। হাসনাত ও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
হাসনাত রেজা করিম ও তাহমিদকে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ গুলশানে হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায়। এরপর তাঁদের আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
লাশ হস্তান্তর হয়নি: হলি আর্টিজানে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ এখনো ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখা আছে। গত ৩৪ দিনে এসব লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ছয়জনের স্বজনের অভিভাবকত্ব নির্ণয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন জঙ্গি দলের সদস্য মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *