ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

Slider গ্রাম বাংলা

57ca8c13f4725a1c4fb0f5e2f1925ab2-15

ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলাগুলো হলো জামালপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ। অপরিবর্তিত রয়েছে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি। তবে লালমনিরহাট ও নীলফামারীর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কিছু আশার খবর জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কমতে পারে। আগামী তিন দিন এ ধারা চলতে থাকবে। তবে গঙ্গা-পদ্মার পানি বাড়তে পারে।
প্রথম আলোর ঢাকার বাইরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার ১২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের শিশুয়া গ্রামে লায়লা আক্তার (৭) বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। গত নয় দিন জেলার ৪৮টি ইউনিয়নের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের দুরমুঠ এলাকায় লাইনে পানি উঠেছে। এতে দুপুরে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন আটকা পড়ে। পরে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে ট্রেনটি ওই অংশ পার হয়।
সরিষাবাড়ীর চর রৌহা গ্রামের আলম মিয়া (৪৭) বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে ঘরে পানি ঢুকলেও এখনো কেউ সাহায্য দেয় নাই।’
জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ত্রাণসামগ্রী প্রতিদিন যাচ্ছে। দুর্গম এলাকাতেও বিতরণ হচ্ছে। নতুন করে আরও ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলেছে, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছয়টি ফেরি এবং দুটি ঘাট বন্ধ থাকার কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে আটকা পড়েছে অনেক যানবাহন। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালী ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়কের দুটি স্থান গতকাল ভেঙে গেছে।
পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় শরীয়তপুরের ১৫টি ইউনিয়নের ৬০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্য ও খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হয়েছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা ঘরে উঁচু মাচা তৈরি করে বসবাস করছে। গ্রামের উঁচু রাস্তায় গবাদিপশু রাখা হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, বন্যার পানি বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ায় মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ তৎপরতা চালানো হবে।
ফরিদপুরের সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মধুখালী উপজেলার গয়েষপুর গ্রামে মধুমতী নদীর ভাঙনে ১০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে।
গাইবান্ধায় গতকাল ১০টি নদ-নদীর মধ্যে গতকাল ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যান্য নদীর পানি বাড়লেও সেগুলো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষত রান্নাবান্না ও গবাদিপশু নিয়ে লোকজন বিপাকে পড়েছে। গাইবান্ধার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, পানি বেড়ে যাওয়ায় চার উপজেলার প্লাবিত ৩৩টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা নিমজ্জিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রৌমারী স্থলবন্দর, গবাদিপশুর করিডর ও রাজীবপুরের বালিয়ামারী সীমান্ত-হাট ডুবে গেছে। সীমান্তে পাঁচটি বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে পানি উঠেছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন তালুকদার বলেন, কয়েকটি গণমাধ্যমে রৌমারীকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে মর্মে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। জেলা প্রশাসনের হিসাবে, ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৭১৯টি গ্রাম এখন পানির নিচে।
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুইয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে তৃষা খাতুন (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
লালমনিরহাটের তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত ১৩ দিনে বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ২ হাজার ১২২ হেক্টর জমির ফসল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সরওয়ারুল হক বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হয়েছে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *