গুলশানে হামলাকারী শফিকুলের ঘনিষ্ঠ মিলন গ্রেপ্তার

Slider টপ নিউজ

0774eef9dfc2768d68f0e2ef8a2cc02b-119_SAVAR-JONGI-MILON

 

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারী নিহত পাঁচ জঙ্গির একজন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে মিলন হোসাইন নামের এক শিক্ষককে গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানার পুলিশ। পরে আজ রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
শফিকুল দীর্ঘদিন ঢাকার আশুলিয়ার ভাদাইলে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। মিলন হোসাইন তাঁকে ওই চাকরি জোগাড় করে দিয়েছিলেন।
মিলন লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বেতকিবাড়ি গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি সর্বশেষ আশুলিয়া থানা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) পাশে পবনারটেক এলাকায় পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করছিলেন। এর আগে তিনি পাশের এলাকা ভাদাইলে মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক ছিলেন।
পুলিশ জানায় গতকাল শনিবার রাতে ভাদাইল এলাকা থেকে মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ​ও মিলনের স্ত্রী দাবি করেন, গত বুধবার পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মিলন হোসাইন ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মিলনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল। এর আগে তাঁরা একই থানার (আশুলিয়া) জামগড়া এলাকায় ন্যাশনাল ইনিসিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি করতেন। পারিবারিক সমস্যার অজুহাতে শফিকুল গত বছর ১০ ডিসেম্বর চাকরি ছেড়ে চলে যান। আর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে চাকরি ছেড়ে পাশের পবনারটেকে পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নেন মিলন হোসাইন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে ইলিয়াস আলী ও নূর মোহাম্মদ নামের আরও দুই শিক্ষক ছিলেন। এ দুজনের সঙ্গে মিলন ও শফিকুলের ঘনিষ্ঠতা ছিল। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নূর মোহাম্মদকে আটক করে। এর আগেই ইলিয়াস চাকরি ছেড়ে গা ঢাকা দেন।

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আশুলিয়ায় অবস্থানকালে শফিকুল ইসলাম মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক নূর মোহাম্মদের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর সঙ্গে ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক মিলন হোসাইন, ইলিয়াস আলী ও নূর মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এঁদের মধ্যে শফিকুল জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত হয়েছেন। মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নূর মোহাম্মদকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। আর ইলিয়াস পলাতক রয়েছেন।

এসআই বলেন, এসব তথ্যের ভিত্তিতেই গতকাল শনিবার মিলনকে আটকের পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নাজমুর রহমান নিপু পাঁচ দিন মঞ্জুর করেন।

তবে মিলনের স্ত্রী জহুরা বেগম বলেন, জঙ্গি তৎপরতায় তাঁর স্বামীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। চাকরি সুবাদে শফিকুলসহ অন্যদের সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক ছিল। এর অর্থ এই নয় যে তিনি জঙ্গি।

আশুলিয়া থানার একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়া এলাকায় কয়েক শ কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলের বেশ কটিতে জামায়াত ও জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ওই স্কুলগুলোকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, মিলন হোসাইনের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জঙ্গি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *