সংসদে প্রধানমন্ত্রী জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর আমিই সর্বপ্রথম নিন্দা জানিয়েছি

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

3e8fed2d24f93d3c784344cac8766511-Untitled-25

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমি সর্বপ্রথম নিন্দা জানিয়েছি। তিনি বলেন, জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ভৈরব থেকে আমি একটি বিবৃতি লিখে ঢাকায় পাঠাই, যার মূল বক্তব্য ছিলÑ ‘দেশ সংবিধান অনুসারে চলবে, এর ব্যত্যয় যেন না ঘটে। অর্থাৎ কোনো সেনাকর্মকর্তা যেন ক্ষমতা দখল না করে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।
ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির  প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী  আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে জেনারেল জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। আমি শেখ হাসিনা ও আমার ছোটবোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলাম বলে প্রাণে বেঁচে যাই। আমরা দুই বোন দেশে ফেরার চেষ্টা করলেও জিয়া সব সময় বাধা দিয়েছেন। আমরা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকি। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও গণতন্ত্র পুনর্বহালের জন্য বিশ্ব জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করি। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দলের কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। শত বাধা অতিক্রম করে আমি দেশে ফিরে আসি। আমি ২৮ মে সিলেটে যাই, হজরত শাহজালাল (রহ:)-এর মাজার জিয়ারত করি। পরদিন রাতে আমরা ট্রেনে উঠি ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। পথে বন্যায় একটি ব্রিজ নষ্ট হয়ে যায় বলে আমরা আটকা পড়ি। সকালে ব্রিজটি ঠিক হলে আমরা আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে আসি, তখন জানতে পারলাম জিয়া চট্টগ্রামে নিহত হয়েছেন। ঢাকাগামী সব ট্রেনের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি জানান, এর পর আমরা ট্রেন থেকে নেমে রবিউলের বাসায় যাই, সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকায় চড়ে ভৈরবে আইভী রহমানের (সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী) বাবার বাড়িতে গিয়ে উঠি। ট্রেনের অনেক যাত্রী আমাদের দলের, তাই ছোট ছোট গ্রুপ করে একেক গ্রুপ একেক বাড়িতে উঠি। কথা হয় যে, সবাই আইভী রহমানের মায়ের কাছে যাব, সেখান থেকে ঢাকায় যাব। ভৈরবে পৌঁছার পরের দিন আমি একটা বিবৃতি লিখে মোস্তফা মহসীন মন্টুর (বর্তমানে গণফোরাম নেতা) হাতে দিয়ে ঢাকায় পাঠাতে বলি। সেখানে মূল বক্তব্য ছিলÑ দেশ সংবিধান অনুসারে চলবে এর কোনো ব্যত্যয় যেন না ঘটে, অর্থাৎ কোনো সেনাকর্মকর্তা যেন ক্ষমতা দখল না করে। ট্রেন চালু হলে আমরা ঢাকায় ফিরে আসি। সংসদ নেতা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দেশে প্রতিদিন কার্ফ্যু ছিল। রাত ১০-১১টার পর বাইরে বের হওয়া যেতো না। যাতায়াত করা খুবই কঠিন ছিল। আমাদের দিনে দিনে ঢাকায় ফেরার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।
মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, কোরবানি ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সড়ক-মহাসড়ক জরুরি মেরামতসহ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি জানান, পবিত্র ঈদের সময় যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিনÑ মোট ছয় দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপরে ও পাশে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরুর হাট বসানোর জন্য ইজারা প্রদান করা হবে না। ঢাকা শহরের প্রবেশ ও নির্গমন মুখ বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো স্থানেও গরুর হাট বসার জন্য ইজারা প্রদান না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সড়কপথে যাতায়াতকারী বাসযাত্রীদের কাছ থেকে সরকার অনুমোদিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় না করা এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল বহন কেউ না করতে পারে সে জন্য গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের জন্য তিনটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে। তিনি আরো জানান, ঈদ উপলক্ষে সিএনজি স্টেশনগুলো ১ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। সড়কপথে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, মহেন্দ্র, ভটভটি ইত্যাদি অননুমোদিত যান এবং যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ, রুটপারমিট ও ফিটনেসবিহীন যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
২৮ হাজার ৬৯১ জনকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে অনুদান
পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক কল্যাণ তহবিল নামে কোনো তহবিল নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রয়োজন মোতাবেক সাংবাদিক ও অন্যান্য ব্যক্তিকে আমরা আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৬১৯ ব্যক্তিকে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান, সাংবাদিক সহায়তা ভাতা বা অনুদান নীতিমালা, ২০১২ প্রণীত হওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অসুস্থ, অসচ্ছল, আহত ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যের অনুকূলে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫০ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৮৫ জন সাংবাদিককে এক কোটি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৮১ সাংবাদিককে এক কোটি ১০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *