গুলশানে হামলাকারী জঙ্গি ছেলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আ.লীগ নেতা

Slider জাতীয়

2016_07_06_04_57_45_GSNKV9TDhWscvdLRxlRCjp99jrA35J_original

 

 

 

 

ঢাকা : গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন সন্দেহভাজন এক আইএস জঙ্গির বাবা। মঙ্গলবার ভারতীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি দেশবাসীর কাছেও ক্ষমা চান। তিনি হলেন জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল। যিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সাইক্লিস্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি।

তার ছেলে রোহান রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোহান এ বছরের জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না রোহানের। তার বাবা

ঘটনার দুইদিন পর মোহাম্মদপুরে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইমতিয়াজ খান বাবুল। অবশ্য এ কদিন তিনি বাসায় ছিলেন না। কথা বলার সময় মনে তেমন বল পাচ্ছিলেন না বাবুল। বলেন, ‘আইএসের প্রকাশিত ছবিতে রোহনকে দেখে আমি স্তম্ভিত! সেখান থেকেই ছেলেকে চিহ্নিত করতে পারি।’

ইমতিয়াজ খান জানান, পড়াশোনার বরাবরই ভালো ফল করে এসেছে ছেলে রোহান। ক্লাশে টপারও ছিল। অংকেও দারুণ। পড়াশোনা ঢাকার অভিজাত স্কুল স্কলাসটিকাতে। এরপর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকে পড়ছিল সে। কিন্তু, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্ধ ভক্ত রোহন যে কী করে হামলাকারী হয়ে উঠল সে অংক এখনও মেলাতে পারছেন না বাবা।

তিনি জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছিল রোহন। তারপর থেকেই সে নিখোঁজ। এতোদিন সে কী করছিল তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুরো পরিবার। বললেন, ‘আমরা সব জায়গাতেই রোহনের খোঁজ চালিয়েছি। শেষমেশ গত ২ জানুয়ারি পুলিশকে খবর দেই। রোহনের মোবাইল সুইচড অফ ছিল। ফেসবুকেও তাকে পাওয়া যায়নি তারপর থেকে। বাড়ি ফিরে আসার কথা জানিয়ে ফেসবুকে বহু মেসেজ পোস্ট করলেও তার কোনো উত্তর মেলেনি।

আইএসের প্রকাশিত ছবিতে বন্দুক হাতে রোহনের ছবিও অচেনা লাগছে ইমতিয়াজ খানের। বিস্মিত ইমতিাজের প্রশ্ন, ‘কোথা থেকে বন্দুক চালানোর ট্রেনিং পেল সে? যে ছেলে একটা তেলাপোকার মারারও সাহস পেতো না। গত ছয় মাসই বা কোথায় ছিল রোহান? সে যে সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠছে তা কখনোই টের পাইনি।

ইমতিয়াজ বলেন, ‘তার মধ্যে কখনো কোনো রকম অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করিনি। এমনকী, রোহনকে কখনও জিহাদি বইপত্রও পড়তে দেখিনি। তবে কীভাবে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়ালো সে?

এদিকে হামলাকারীদের হাতে নিহত বিদেশিদের মধ্যে একজন ভারতীয় রয়েছে। ১৯ বছরের ওই তরুণী নাম তারিশি জৈন। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের অর্থনীতির স্নাতকস্তরের ছাত্রী ছিলেন। ঢাকায় এসেছিলেন ইন্টার্নশিপের কাজে। ঘটনার দিন গুলশনের ক্যাফেতে তার দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তারিশি। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। জঙ্গিদের হাতেই মরতে হয়েছে তাকে।

তারিশির মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইমতিয়াজ খান। তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে একজন ভারতীয় ছাত্রী। সেই ছাত্রীর মা-বাবা আর ভারতের কাছে আমি শুধু ক্ষমাই চাইতে পারি। তবে শুধু এটাই বলতে চাই, ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনো ভাষাও এখন আমার নেই।’

উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল সসস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার এবং ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি নাগরিক। বাকিরা বাংলাদেশি। এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *