ব্রেক্সিট আটকে দিতে পারে স্কটল্যান্ড

Slider সারাবিশ্ব

 

 

20499_f4

 

 

 

 

 

স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট হলিরুড আটকে দিতে পারে বৃটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) প্রস্থান বা ব্রেক্সিট। কারণ, ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে বৃটিশ পার্লামেন্টের বিলে ‘সম্মতি’ দরকার হবে স্কটিশ পার্লামেন্টের। আর স্কটিশ পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এসএনপি এ সম্মতি দেয়ার বিপক্ষে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও এসএনপি নেত্রী নিকোলা স্টার্জিওনের বরাতে এ খবর দিয়েছে বিবিসি। স্টার্জিওনের দল এসএনপি স্কটিশ পার্লামেন্টের ১২৯টি আসনের মধ্যে ৬৩টিই এসএনপির দখলে। স্টার্জিওন বলছেন, ইইউ-প্রস্থানের বিষয়ে বৃটিশ পার্লামেন্ট আইন পাস হলেও তার বিরুদ্ধে ভেটো তথা অসম্মতি দেয়ার অধিকার রয়েছে স্কটিশ পার্লামেন্টের। আর তিনি সম্মতি না দিতেই আহ্বান জানাবেন স্কটিশ পার্লামেন্টকে।
খোদ বৃটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের আইনি নথিপত্রও স্টার্জিওনের বক্তব্যকে সমর্থন করে। ‘দ্য প্রসেস অব উইথড্রয়িং ফ্রম দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’ বা ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে প্রস্থানের প্রক্রিয়া’ শীর্ষক হাউস অব লর্ডসের ২০১৫-১৬ সেশনের ১১তম রিপোর্টে আছে চমকপ্রদ তথ্য। বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের সাবেক বিচারক স্যার ডেভিড এডওয়ার্ডকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এ ধরনের প্রস্থান প্রক্রিয়ায় স্কটল্যান্ডের সম্মতি প্রয়োজন হবে কিনা। স্যার ডেভিড মতামত দিয়েছিলেন, স্কটিশ পার্লামেন্টের কনসেন্ট প্রয়োজন হবে। শুধু তা-ই নয়। রিপোর্টে হাউস অব লর্ডসের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কমিটি নিজেরাই উল্লেখ করেছে যে, ‘আমাদের মনে না করার কোনো কারণ নেই যে, বাকি ডিসলভড দেশগুলোর (নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসের) ক্ষেত্রেও স্ব-স্ব পার্লামেন্টের সম্মতি প্রয়োজন হবে না।’
বিবিসিকে স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার স্টার্জিওন আরো বলেন, ‘আপনারা যে ইস্যুটি নিয়ে বলাবলি করছেন যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের প্রস্থানের জন্য বৃটিশ পার্লামেন্টে যে আইন উত্থাপিত হবে, তার জন্য স্কটিশ পার্লামেন্টের কনসেন্ট (সম্মতি) প্রয়োজন হবে কিনা?’ উত্তরটি তিনিও দেন। ‘যৌক্তিক দিক থেকে দেখলে, এটি বিশ্বাস করা কঠিন যে, এ ধরনের সম্মতির প্রয়োজন হবে না। আমার সন্দেহ, যুক্তরাজ্য সরকার এ নিয়ে খুবই আলাদা অবস্থান গ্রহণ করবে। আমাদের দেখতে হবে আলোচনা কোথায় গড়ায়।’
স্কটিশ পার্লামেন্টকে ইইউ-ত্যাগের বিলে সম্মতি না দিতে বলবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। যদি স্কটল্যান্ডের জন্য কোনটি সঠিক- তার ভিত্তিতে স্কটিশ পার্লামেন্ট বিষয়টিকে বিবেচনা করে, তাহলে এটা বলার অপশন অবশ্যই থাকতে হবে যে, দেখুন, আমরা এমন কিছুর পক্ষে ভোট দেবো না, যা স্কটল্যান্ডের স্বার্থের বিপক্ষে।’
প্রসঙ্গত, ইইউতে বৃটেনের থাকা কিংবা না-থাকা নিয়ে বৃহসপতিবারের গণভোটে ৫২% মানুষ না থাকার পক্ষে ভোট দেন। ৪৮ শতাংশ ভোট দেন রয়ে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু স্কটল্যান্ডে এ চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেখানে ৬২ শতাংশ মানুষ রয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। মাত্র ৩৮ শতাংশ প্রস্থানের পক্ষে ভোট দেন।
তবে স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ দলের এমপি এমআর মান্ডেল বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, বৃহস্পতিবারের গণভোটের ফলাফলকে সম্মান দেখাতে হবে আমাদের, এমনকি যদি এটা আমাদের পছন্দ না-ও হয়। স্কটিশ পার্লামেন্ট ইইউ প্রস্থান ঠেকিয়ে দিতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, ব্রেক্সিট ঠেকিয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে স্কটিশ পার্লামেন্ট। তবে আপনি যে আইনি নথিপত্রের বরাত দিয়ে নিকোলা স্টার্জিওনের কাছে জানতে চেয়েছেন, তা আমি দেখিনি।’
এর আগে নিকোলা স্টার্জিওন বলেছিলেন, তার দেশের জনগণ ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাই ইইউ’র পক্ষে রয়ে যাওয়াটাই তাদের স্বার্থের পক্ষে। এ কারণে প্রয়োজনে বৃটেন থেকে আলাদা হয়ে ইইউতে যোগদানের ব্যাপারে ব্রাসেলসের (ইইউ সদর দপ্তর) সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি নিশ্চিত করেছেন, স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজন করবেন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালে একটি গণভোটে বৃটেনে রয়ে যাওয়ার পক্ষেই ভোট দিয়েছিলেন স্কটিশরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *