আশুগঞ্জ নৌবন্দরে অবকাঠামো সমস্যার মধ্যেই নিয়মিত ট্রান্সশিপমেন্ট শুরু হলো। গতকাল দুপুরে বন্দরের জেটিতে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তির আওতায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর আগে মঙ্গলবার বিকাল তিনটা ৪০ মিনিটে ট্রান্সশিপমেন্টের ১ হাজার ৪ টন এসএস রড নিয়ে ভারতের কলকাতার খিদিরপুর থেকে এমভি নিউটেক-৬ নামের একটি জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে পৌঁছে। প্রথমবারের মতো শুল্ক দেয়ার মাধ্যমে এই জাহাজের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় যাবে। আজ সকাল থেকে এই পণ্য পরিবহন শুরু হবে। আশুগঞ্জ থেকে সড়ক পথে যাবে আগরতলায়। পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ টনপ্রতি ১৯২ টাকা ২২ পয়সা পাবে। এরআগে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ২০১১ সালে বিনা মাশুলে এ বন্দর ব্যবহার করে ১০ হাজার মেট্রিকটন চাল ও ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, নৌ-প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তির আওতায় ট্রানজিটে বাংলাদেশ লাভবান হবে। বিপুল রাজস্ব পাবে সরকার। এখন যে শুল্ক ১৯২ টাকা, সেটা হয়তো এক সময় আট শ’ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ট্রানজিটের ফলে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি ট্রাক মালিক-শ্রমিক এবং জাহাজ মালিকরাও লাভবান হবেন। বাংলাদেশ কোনো দেশের লেজুড়বৃত্তি করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের এসব কথা বলে তারাই বিভিন্ন সময় ভারতের লেজুড়বৃত্তি করেছে। পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। এসব উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াত নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে খালেদা জিয়া ‘ইবলিশ’-এর সঙ্গেও হাত মেলাতে পারেন। তারা বিশ্বমানবতার শক্রু ইসরাইলের মোসাদের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়ের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ টনপ্রতি ১৯২ টাকা ২২ পয়সা পাবে। এর মধ্যে শুধু নিরাপত্তা খাতেই পাবে ৫০ টাকা করে। নিয়মিত ট্রানজিট হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে, এতে অর্থনীতি বেগবান হবে। তাছাড়া ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন-ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বীর বিক্রম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজী মো. ছফিউল্লাহ মিয়া। নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সম্পর্কটা হলো ঐতিহাসিক ও আবেগঘন। এই নৌ-ট্রানজিট ত্রিপুরার জনগণের উপকারে আসবে, তাদের জীবনযাত্রা সহজতর হবে। তিনি ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম উদ্বোধনকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে আখ্যা দেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তির অংশ হিসেবে ট্রান্সশিপমেন্টের প্রথম চালান এটি। এদিকে ট্রান্সশিপমেন্ট চালু হলেও আশুগঞ্জ নৌবন্দরে এখনো বিভিন্ন সমস্যা বিরাজমান। বলতে গেলে তেমন কোনো অবকাঠামোগত সুবিধে গড়ে উঠেনি এই বন্দরে।