৭৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সুখবর

Slider শিক্ষা

 

untitled-2_219093

 

 

 

 

 

সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য রয়েছে বড় সুখবর। অবসরজনিত আর্থিক সুবিধা পেতে তাদের আর দীর্ঘ সময় পার করতে হবে না। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দিতে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই অর্থ পেলে ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ ও ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’-এর দীর্ঘদিনের বন্ধ্যত্ব কাটবে। আর্থিক সংকটে পড়েই এ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধুঁকছিল।
সারাজীবন শিক্ষকতার চাকরি শেষে বেসরকারি শিক্ষকরা যৎসামান্য আর্থিক সুবিধা পান। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে প্রাপ্য অর্থ তাদের জীবনের সর্বশেষ সম্বল। তাদের কোনো পেনশন সুবিধা নেই। অথচ এই অর্থ পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর পাড়ি দিতে হয় তাদের। বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময় লাগছে এই অর্থ হাতে পেতে। জীবন সায়াহ্নে থাকা এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেশিরভাগই বয়োবৃদ্ধ, অনেকে গুরুতর অসুস্থ ও কেউ কেউ মৃত্যুপথযাত্রী। অর্থ হাতে পাওয়ার আগেই কেউ কেউ ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। বর্তমানে সারাদেশের ৭৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এই অর্থ হাতে পেতে আবেদন করে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান, একে তো আর্থিক সংকট, অন্যদিকে রয়েছে হয়রানি। এ দুই প্রতিষ্ঠানের অর্থ পেতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অভিযোগ আছে, এই অর্থ পেতে তাদের তদবির আর ঘুষ দিতে হয়। পরিস্থিতি এমন যে, চেক তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও ঘুষ ছাড়া তা ইস্যু করা হয় না। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে অবসর বোর্ডে কয়েকজন কর্মকর্তা, পিয়ন, ড্রাইভারের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে, ওই দপ্তরে অর্থ ছাড়া ফাইল নড়ে না।

এবার বাজেটে অবসর বোর্ডের তহবিলে ৫০০ কোটি টাকার একটি সিড মানি (যা ব্যাংকে রেখে তার সুদ উত্তোলন করা যাবে, মূল টাকা তোলা যাবে না) দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ খাতে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আরও ১০০ কোটি টাকা। কল্যাণ ট্রাস্টে দেওয়া হয়েছে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ। বর্তমানে অবসর সুবিধার জন্য ৪৫ হাজার শিক্ষক এবং

কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২৯ হাজারসহ মোট ৭৪ হাজার শিক্ষকের অর্থ দাবির আবেদন জমা আছে। বাজেটে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করায় বহু বছর পর এবার ভোগান্তি কিছুটা কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাদেশের প্রায় ২৬ হাজার এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর মূল বেতনের ২ শতাংশ অর্থ কল্যাণ ফান্ডে ও ৪ শতাংশ অর্থ অবসর সুবিধার জন্য কেটে নেওয়া হতো। নতুন বরাদ্দের পর একজন শিক্ষকের এমপিও থেকে যথাক্রমে ৬ শতাংশ অবসর তহবিলে ও ৪ শতাংশ কল্যাণ ট্রাস্টে জমা দিতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমকালকে বলেন, বাড়তি অর্থ কেটে নেওয়ার মাধ্যমে অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিল সমৃদ্ধ করা হবে। সরকারি বরাদ্দ ও বাড়তি কেটে নেওয়া অর্থ থেকেই জমে থাকা অর্থের দাবি দ্রুত মেটানো হবে।

এই দুই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সমকালকে বলেন, বর্তমানে আবেদন নিষ্পত্তি হতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন তা তিন মাসে নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো আবেদন এখন আর হাতে হাতে নেওয়া হবে না। অনলাইনে শিক্ষকরা আবেদন করবেন। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের চেক পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষকের আর ঢাকায় আসতে হবে না।

এ ব্যাপারে কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলী সাজু সমকালকে বলেন, মোট ৭৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর প্রাপ্য টাকা বুঝে দিতে গেলে এ মুহূর্তে সরকারকে স্থায়ী সমাধান হিসেবে এই দুটি প্রতিষ্ঠানে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। তাহলে এই দুটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে।

তিনি জানান, অবসর আর কল্যাণ তহবিল বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় ২০ টাকা করে শিক্ষক কল্যাণ চাঁদা রাখার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *