দেড়শ’ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব ফেরত গেছে

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

 

22_217085

 

 

 

 

 

নবগঠিত টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের অধীনে দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তির অনলাইন কার্যক্রম যেমন ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগিংয়ে নজরদারি ও হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকবে। একই সঙ্গে অনলাইন সংবাদমাধ্যমসহ সব ধরনের ওয়েবসাইট থেকে যে কোনো বিষয়বস্তু অপসারণের ক্ষমতা পাবে অধিদপ্তর।
অধুনা বিলুপ্ত বিটিটিবি এবং বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিটিসিএলের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত অধিদপ্তরে সাইবার নিরাপত্তা কিংবা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ না থাকায় এ ধরনের জটিল প্রযুক্তিগত প্রকল্প প্রস্তাব এবং এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে।

বৈঠক সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনে সাইবার নিরাপত্তা কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও নবগঠিত টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের অধীনে প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূলত, অধিদপ্তর গঠিত হয়েছে বিলুপ্ত বিটিটিবির ক্যাডার কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন এবং অবসর সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এর বাইরে কিছু প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করবে তারা। কিন্তু বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সক্ষমতা অর্জন না করেই অধিদপ্তর ব্যয়বহুল ও জটিল কারিগরি প্রকল্পের প্রস্তাব করায় বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দের প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্রও নেয়নি টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর। ফলে প্রকল্প প্রস্তাবটি আরও পর্যালোচনা ও স্পষ্টকরণের জন্য ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এ প্রসঙ্গে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, কমিশন কোনো কাজ নিয়ে বিরোধ চায় না। এ কারণে সাইবার নিরাপত্তা মোকাবেলার দায়িত্ব কাদের কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে তা জানাতে বলা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এখন প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম  বলেন, এ ধরনের একটি প্রকল্প প্রস্তাব কবে কীভাবে পরিকল্পনা কমিশনে গেছে সে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় এবং জনস্বার্থে প্রয়োজন না হলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হবে না।

কী আছে এতে :প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে চার ধরনের কর্ম পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, এর মাধ্যমে যে কোনো ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশের অনুপযোগী বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) অপসারণ করা হবে; সরকার বা অন্য কোনো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ঘোষিত নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা; চিহ্নিত অপরাধীদের ব্যবহৃত ইন্টারনেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে সহায়তা দেওয়া এবং প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করা।

প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের পুরো অর্থের জোগানই আসবে সরকারি তহবিল থেকে।

সূত্র জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অনলাইনে নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকছে।

পরিকল্পনা কমিশনে অনুুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে দুটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ডটের প্রতিনিধি জবাবে জানান, এ প্রকল্পের পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো এমনভাবে স্থাপনের কথা বলা হয়েছে যার ধারণ ক্ষমতা ইন্টারনেট গেটওয়ের চেয়ে বেশি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিকল্প যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে একটি অকার্যকর হলে অপরটি চালু থাকবে। নজরদারির কারণে ইন্টারনেটের গতিতে যেন প্রভাব না পড়ে সে কারণে বাইপাস সংযোগেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নির্দেশনা অনুযায়ী অধিদপ্তর পদক্ষেপ নেবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

একাধিক বিভাগের আপত্তি :পরিকল্পনা কমিশনের ওই বৈঠকে আইএমইডির প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে ডিপিপি যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। এর ফলে প্রকল্প অনুমোদনের পর তা নতুন করে সংশোধন এবং ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। এ কারণে প্রকল্পের জন্য কী ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় কেনা হবে তা সুনির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছে।

এতে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্প প্রস্তাবে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের জন্য পৃথক জনবলের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। অথচ এ জন্য নতুন গাড়ি (জিপ) কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। জনবল ছাড়া গাড়ি কেনার বিষয়টি যৌক্তিক নয় বলে মত দেওয়া হয়। আইএমইডির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সম্পদ সংগ্রহের নামে বিশেষ কমিটি গঠন করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার বরাদ্দ, পূর্ত কাজের জন্য ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত নয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবে অর্থের অপচয় বা দুর্নীতির সুযোগ থেকে যায়।

বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা নামে একটি কর্মসূচি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন আছে এবং একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা গঠনের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন। ফলে দুটি সংস্থার অধীনে একই ধরনের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে কি-না সেটাও যাচাই করা প্রয়োজন। পরে সভায় দুটি সংস্থার প্রকল্পে বিরোধ রয়েছে কি-না তা যথাযথ পর্যালোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে বলা হয়।

একই সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবের প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত ছিল না। ফলে সচিবের প্রত্যয়নসহ প্রয়োজনীয় সংশোধন করে আবার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *