আজ প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহর জন্য আম, লিচু নিয়ে যাচ্ছেন

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব

16752_b2

 

দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে তার আমলে এটি তার প্রথম সৌদি সফর। ৫ই জানুয়ারির বহুল আলোচিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটি শেখ হাসিনার প্রথম সৌদি যাত্রা। পাঁচদিনের সরকারি সফরে পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম ও নিরাপত্তা দলসহ প্রায় ৮০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও সৌদি সফরে থাকছেন। হাই প্রোফাইল ওই সফরের বিষয়ে বুধবার বিকালে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। সেখানে তিনি সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলন এবং পরবর্তীতে সরকারি সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিকাল ৪টায় বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা হবেন। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় তাকে বহনকারী বিমানটি জেদ্দা কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করবেন। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, জেদ্দাস্থ কনসাল জেনারেলসহ বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে  অভ্যর্থনা জানাবেন। সেখানে গার্ড অব অনার পরিদর্শন এবং অন্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে জেদ্দা রাজকীয় কনফারেন্স প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হবে। রাতেই পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশে জেদ্দা থেকে মক্কার পথে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যরাতে তিনি হারাম শরীফে পৌঁছাবেন, সেখানে ফজর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। ওমরাহর আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৪ঠা জুন জেদ্দায় ফিরবেন শেখ হাসিনা। ওই সন্ধ্যায় দেশটিতে নবনির্মিত চ্যান্সারি কমপ্লেক্স এবং বাংলাদেশ হাউজ, রিয়াদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে তার।
বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকে জনশক্তি পাঠানোর আলোচনা হবে: ৫ই জুন সকালে সৌদি সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। দুপুরে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। তারা আগে জেদ্দার আল সালাম প্যালেসে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সন্ধ্যায় সৌদি প্রতিরক্ষা উপ-মন্ত্রী সালমান বিন সুলতান আল সৌদ এবং বাদশাহর রাজকীয় পরিষদের উপদেষ্টা ইয়াসের আল মিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সৌদি বাদশাহর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দ্বিপক্ষীয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সৌদি সহায়তা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা, হজ ব্যবস্থাপনাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। সেখানে ফরেন অফিস কন্সালটেশন (এফওসি) বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হওয়া ছাড়াও সংস্কৃতি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতায় দুটি পৃথক চুক্তি বা সমঝোতা সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরকালে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশি পুরুষ শ্রমিকদের ভিসা পুরোপুরি উন্মুক্তকরণে বাংলাদেশ কতটা আশাবাদী? বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে মানবজমিনের এমন প্রশ্ন ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আগে আলোচনা হোক, দেখা যাক কি হয়? মন্ত্রীর কথা শেষ হওয়ার পরপরই পররাষ্ট্র সচিব আশাবাদের কথা শোনান। বলেন, আমরা অবশ্যই আশাবাদী। ৬ই জুনেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাক্ষাতের সূচি রয়েছে। ওইদিনে বিমানযোগে জেদ্দা থেকে মদিনায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। সেখানে মদিনার গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর তাকে স্বাগত জানাবেন। মসজিদ-ই নববিতে আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করা ছাড়াও ওই রাতেই মহানবীর রওজা শরিফ জিয়ারত করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তারাবির নামাজ আদায় এবং সেহরি করবেন। ৭ই জুন সকালে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফাইটে মদিনা থেকে সরাসরি ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রীর।
সফরসঙ্গীর ৭০ সরকারি, ব্যবসায়ী ১০:  প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরসঙ্গীর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মন্ত্রীর সহধর্মিণী শাহিন আলী, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. মো. আবদুস সোবহান মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. শফিকুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি (চট্টগ্রাম) শহীদুল আলম, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আলিমা সারোয়ার, সাহিনা মাহবুব, হামিদা ওয়াদুদ, শেখ সালাউদ্দিন, সাহানা ইয়াসমিন, শেখ ফারদিন নাসের, শেখ ফারজান নাসেরসহ প্রায় ৭০ জন রয়েছেন। ওই তালিকায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্‌, উপ-রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম, জেদ্দায় নিযুক্ত কনসাল জেনারেল এ কে এম শহীদুল করিমও রয়েছেন। সরকারি প্রতিনিধি দলের বাইরে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ. রহমানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। সেখানে এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ, দুজন সহসভাপতি, একজন পরিচালক, বিজিএমইএর সভাপতি, ওষুধ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি, আল মুনিম সুগার রিফাইনারির এমডি, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মেঘনা গ্রুপের এমডি রয়েছেন।
বাদশাহর জন্য আম-লিচু ও চিত্রকর্ম, পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে চাল উপহার: সরকারপ্রধানের ওই সফরে সৌদি বাদশাহর জন্য মৌসুমি ফল আম, লিচু পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বাদশাহকে ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বিশেষ চিত্রকর্ম উপহার দেয়া হবে। যেখানে বর্ষার বাংলাদেশকে শিল্পী তার তুলিতে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সরকারি সূত্রগুলো জানিয়ে, সরকারপ্রধানের উপহার ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু উপহার পাঠাচ্ছেন। মন্ত্রী তার নিজ জেলা দিনাজপুরে উৎপাদিত কিছু সুগন্ধি চাল সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়েরের জন্য পাঠাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব যান। ওই সফরের পরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সফর বিনিময় হয়েছে। দেশটিতে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে সৌদি শ্রমবাজারে আধাদক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সৌদিতে আরো বেশি জনশক্তি পাঠানোর সুযোগটি কাজে লাগাতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *