মে মাসেই বজ্রপাতে নিহত ১৩২। সাম্প্র্রতিক সময়ের রেকর্ড ভঙ্গ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি সারাদেশ

images (2)

ঢাকা; বছরে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে মে মাসে। ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাসের তথ্য বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। দেখা গেছে, বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি লোক নিহত হওয়ার ঘটনা মে-জুনের দিকে বেশি ঘটে থাকে। এর মধ্যে মে মাসেই বেশি।

বেসরকারি সংগঠন দুর্যোগ ফোরামের কাছে থেকে এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পত্রিকার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বজ্রপাতের তথ্য সংগ্রহ করে।

গবেষক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা সাধারণত মার্চ থেকে ঘটতে শুরু করে। অক্টোবর মাস পর্যন্ত তা চলে। গত চার বছরের তথ্যে দেখা গেছে, এই আট মাসের মধ্যে মে মাসে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ মারা যায়।

২০১৩ সালে দেশে বজ্রপাতে ২৮৫ জন নিহত হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মে মাসে মারা যায় ১২৮ জন। এ বছর বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনার ৪৪ শতাংশ ঘটে মে মাসে। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাতে বেশি লোক হতাহত হয়। বছরের ৬ মে বজ্রপাতে নিহত হয় ৩৩ জন। এ বছর এক দিনে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি লোক নিহত হয়।

২০১৪ সালে বজ্রপাতে নিহত হয় ২১০ জন। এর মধ্যে ৭৯ জনই মারা যায় মে মাসে। এটি সারা বছরে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনার ৩৭ শতাংশ। মে মাসের পর জুনে মারা গেছে ৪২ জন।

বজ্রপাতে ২০১৫ সালের মে মাসে মারা যায় ৯১ জন। গত বছর বজ্রপাতে এ মাসেই সবচেয়ে বেশি লোক মারা যায়। সারা বছর বজ্রপাতে মারা যায় ২৬৫ জন। অর্থাৎ, বজ্রপাতে ৩৪ শতাংশের মৃত্যু হয় মে মাসে। ২ মে বজ্রপাতে নিহত হয় ১৯ জন। মে মাসে এক দিনে এটাই ছিল সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।

দুর্যোগ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সারা দেশে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ১৮৯ জন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বজ্রপাতে নিহত হয় একজন। মার্চে ৩৩ ও এপ্রিলে ২৩ জন নিহত হয়। কেবল মে মাসেই মারা গেছে ১৩২ জন। গত ১২ মে বজ্রপাতে নিহত হয় ৪৭ জন। গত চার বছরের মধ্যে এক দিনে মৃত্যুর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ।

মে মাসে বজ্রপাতের সংখ্যা বা এতে মৃত্যুও ঘটনা এত বেশি কেন?

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এম আমানতউল্লাহ খান বলেন, এ মাসে বেশি মৃত্যুর ঘটনা নতুন একটি তথ্য। এর সঠিক কারণ বলার জন্য প্রয়োজনীয় উপাত্ত নেই।

অধ্যাপক আমানত বলেন, ‘এ সময়টা কালবৈশাখীর। কালবৈশাখী শেষ হয়ে এ মাসেই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। তাই একটা ধারণা করতে পারি, বর্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে কালবৈশাখী এবং এর সঙ্গে আসা বজ্রপাতের পরিমাণ মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ।’ তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পরও দেশে টর্নেডো আঘাত হানে। এ সময়ও বজ্রপাত হয়। তবে বর্ষা মৌসুম অপেক্ষাকৃত কম হয়।

গত চার বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বজ্রপাতে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাই বছরের আগামী দিনগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমানোর জন্য জোরালো উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে প্রতিটি ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বলা হয়েছে। এ মাস থেকেই সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার শুরু হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জারি গান বা গম্ভীরার মতো লোকজ উপাদান ব্যবহার করে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *