গাজীপুর জেলা পরিক্রমা-৬- “খালেদা জিয়ার জনসভা ব্যর্থ করেছিল বিএনপি!”

Slider গ্রাম বাংলা টপ নিউজ বাংলার মুখোমুখি রাজনীতি

bnp brifing

 

জাহিদ হাসান/আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে ফিরে; আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোল যখন চাঙ্গা তখন ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা ব্যর্থ করে দিয়েছিল গাজীপুর বিএনপি এমন অভিযোগ এখনো ভাসছে। সীমাহীন আভ্যন্তরীন কোন্দলে বিবাদমান দুটি গ্রুপ জনসভার সফলতা নিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ায় বেগম জিয়ার জনসভা পন্ড হয়ে যায়।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গাজীপুর বিএনপি মুলত দুটি ভাগে বিভক্ত। কারারুদ্ধ গাজীপুর সিটির বরখাস্তকৃত মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মান্নান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে আভ্যন্তরীন বিরোধ দীর্ঘ সময়ের। এই বিরোধের কারণে গাজীপুরে বিএনপি আজ ছন্ন ছাড়া। দলীয় কর্মকান্ডের সময় অসময়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আ স ম হান্নান শাহ কখনো মান্নান কখনো বা হাসান সরকারের পক্ষে কাজ করায় বিরোধ মিমাংসা হয়নি। আর বরাবরই বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, হাসান সরকারের পক্ষে থাকেন। বিএনপির এই দুটি গ্রুপের কারণে জেলার অনেক জায়গায় দুটি করে কমিটি এখনো জীবিত আছে। ফলে গাজীপুর জেলায় বিএনপি সুবিধা করতে পারছে না।  আর এই সূযোগ নিয়েছেন কথিত  জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকতা। কতিপয় সাংবাদিক বিএনপির অংগ সহযোগী সংগঠনের পদ নিয়ে সাংবাদিকতা করে বিএনপির সময় সুবিধা লুফে নিয়েছেন। ভাল সময়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এখন তারা আওয়ামীলীগের খাঁটি লোক হয়ে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করে আছেন। গোপন সূত্র বলছে, বিএনপির একাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি পন্থী সাংবাদিকদের সহযোগিতায়।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে বেগম জিয়ার আগমন উপলক্ষ্যে  জনসভার ডাক দেয় স্থানীয় বিএনপি। গোপন সূত্র বলছে, বেগম জিয়া ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে জনসমুদ্র সৃষ্টি করে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা স্থায়ী করবেন যা গণঅভ্যত্থানে রুপ নিবে এমন পরিকল্পনা ছিল দল ও জোটের। কিন্তু সরকারী দল আওয়ামীলীগ গোপন খবর জেনে ফেলায় একই স্থানে একই সময়ে আরেকটি জনসভা আহবান করে। একই দিন একই স্থানে একই সময়ে দুটি দলের দুটি জনসভার ডাক গাজীপুর সহ সারা দেশে হৈ চৈ ফেলে দেয়। ঢাকা থেকে সকল মিডিয়া গাজীপুরেও চলে আসে দেশের শেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট কাভার করার জন্য। এই অবস্থায়  অধ্যাপক এম এ মান্নান ও ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নিকট ২৯ ডিসেম্বরের জনসভার নিরাপত্তা চেয়ে একটি স্বারক লিপি দেন। এরপর প্রশাসন জনসভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারী করে।

গোপন সূত্র বলছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অধ্যাপক এম এ মান্নানকে ডেকে নিয়ে গাজীপুরে জনসভা করার জন্য পরামর্শ করেন। যেহেতু এম এ মান্নান গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের বিপুল ভোটের মেয়র  তাই দলীয় চেয়ারপারসন তাকেই দায়িত্ব দেন। পরবর্তি সময় জনসভাকে ঘিরে জাতীয় উত্তেজনা তৈরী হওয়ায় সরকার পতনের একটি সম্ভাবনার আশংকা দেখা দেয় বিএনপিতে। জনসভা সফল হয়ে গেলে মান্নান আরো উপরে উঠে যেতে পারেন এই আশংকায় অপর গ্রুপ প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে গোপন লিঁয়াজো করে জনসভাকে ব্যর্থ করে দেয়। এর ফলাফল হিসেবে বনে যায় যখন মেয়র মান্নান একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন তখনও জেলা বিএনপি কোন কর্মসূচি ঘোষনা করেনি।

এদিকে দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, দলের মধ্যে দুটি শক্তিশালী গ্রুপ থাকায় গাজীপুরে বিএনপি সংগঠিত হতে পারছে না। অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়র হওয়ার পর দলীয় নেতা কর্মীদের তেমন কোন মূল্যায়নও করেন নি। শুধুু মান্নান পন্থীদের মূল্যায়ন করায় দলে বিভক্তি আরো চরম আকার ধারণ করে। মেয়র থাকাকালীন সময়ে অধ্যাপক মান্নান দলীয় কর্মসূচিতেও তেমন যেতেন না। মেয়র পদটি টেকানোর জন্য মেয়র মান্নান আওয়ামীলীগের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। অভিযোগের সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে তখন, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হিসেবে গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে জনসভায় আসেন। কারণ তখন মেয়র মান্নান আওয়ামীলীগ প্রধানের আগমন উপলক্ষ্যে মহাসড়কে একাধিক তোড়ন নির্মান করেছিলেন যা তিনি করতে পারেননি। কারণ ওই জনসভা ছিল আওয়ামীলীগের দলীয় জনসভা রাষ্ট্র্রীয় নয়। এগুলো ছাড়াও ৩টি মামলার আসামী হয়ে মেয়র মান্নান টঙ্গীতে বিশ্বইজতেমার একটি প্রস্তুতি সভায় অংশ নিয়েছিলেন তবুও গ্রেফতার হননি। ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী, এমপি ও আইজি সহ সরকারের উপর মহলের লোকজন ছিলেন। কিন্তু বিধিবাম হল তখন যখন এম এ  মান্নান গ্রেফতার হলেন।

দলীয় নেতা কর্মীদের অভিযাগ, এক এক নেতার ৩/৪টি করে দলীয় পদ থাকলেও  দলে কোন্দল থাকায় ত্যাগী নেতা কর্মীরা পদ পাচ্ছেন না। এছাড়া একাধিক ব্যবসায়ী বড় বড় পদ ধরে রেখে গোপনে সরকারী দলের সঙ্গে লিঁয়াজো করে নিজের ব্যবসা বানিজ্যকে নিরাপদ করছেন যা বিরোধী রাজনীতির জন্য অন্তরায় সৃষ্টি হচ্ছে।

বাকী অংশ আগামীকাল–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *