বিমানবন্দর নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস হাসিনা-আবে বৈঠক

Slider জাতীয়

 

16006_f2

 

 

 

 

ঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে দেশে নতুন আরেকটি বিমানবন্দর নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ আশ্বাস দেন। ঢাকার অদূরে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় ওই বিমানবন্দর নির্মাণে সহায়তা দিতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। গতকাল (স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়) জাপানের নাগোয়ায় মারিওট অ্যাসোসিয়া হোটেলে হাসিনা-আবের ওই বৈঠকটি হয়। সন্ধ্যায় রাজধানী টোকিওর মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও  অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন যৌথ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তারা দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সচিবরা জানান, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক যোগাযোগের (কানেক্টিভিটি) প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণে সহায়তার প্রস্তাব করেন। জবাবে জাপানের তরফে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দেন। বৈঠকে শিনজো আবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও সহযোগিতা করার কথা জানান। তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণে সহযোগিতায় থাকবে জাপান। বৈঠকে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের স্থান নিয়েও আলাপ হয়েছে বলে জানান সচিবরা। তারা বলেন, এই বিমানবন্দর ঢাকা থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরত্ব এলাকার মধ্যে হবে।

তার আগে অবশ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও করবে জাপান।
উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি: দেশের সার্বিক উন্নয়নে জাপান পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। জাপান সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে দেশটির দ্বীপ এলাকা নাগোয়ার একটি হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পরে বিকালে টোকিওতে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওই বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আলোচনা অনেক ফলপ্রসূ হয়েছে। সেখানে নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছে। সার্বিক উন্নয়নে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে শিনজো আবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এই সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো গভীর হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপান আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তেও দেশটির সহযোগিতা ছিল। এটি বাংলাদেশ চিরকাল স্মরণ করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। যারা আমাদের সংকটকালে পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের কথা আমরা কোনোদিন ভুলে যেতে পারি না। কেবল স্বাধীনতা  বা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনেই নয়, উন্নয়নে এখনও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু, রূপসা সেতু নির্মাণ জাপানের সহযোগিতায় হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়নেও এগিয়ে এসেছিল জাপান। দেশে যখন কোনো আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ছিল না, তখন হোটেল সোনারগাঁও তৈরিতে জাপানই হাত বাড়িয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পে জাপান অর্থায়ন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের সমুদয় অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
নতুন দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনীকে ‘সত্যি আনন্দের দিন’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে আমাদের একটা ঠিকানা হলো। পুরোটাই আমাদের বাংলাদেশ মনে হচ্ছে। এই সুন্দর ভবনটি হবে জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের প্রতীক। এর মধ্য দিয়ে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে বলে আশা রাখি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
টোকিও’র বক্তৃতায় বিশ্বের শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জোট জি-৭’র এবারের আউটরিচ মিটিং সফল হয়েছে মন্তব্য করে সেখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেট বিশাল আকারের হবে।

এত বড় বাজেট আগে কখনো  দেয়া হয়নি। এই সক্ষমতাও আমরা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে মন্তব্য করে তা ধরে রাখতে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭১৪ বর্গমিটার এলাকায় টোকিও’র কেন্দ্রস্থলে কিওইচো, ছিওদা-কু এলাকায় বাংলাদেশের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীতে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগের মহাসচিব ইচিরো তাসুকাদা এমপি এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, জাপানের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য অকিহারো নিশিমুরা, জাপানে  সৌদি আরব, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, টোগো, কোস্টারিকা,  নেপাল, রোয়ান্ডা, কম্বোডিয়া, জাম্বিয়া, জর্ডান, ইউএই, থাইল্যান্ড ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত  ছিলেন।
লঙ্কান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক: জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে সফররত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় নাগোয়ার ম্যারিয়ট হোটেলে ওই বৈঠক হয়। জাপানের নাগোয়ায় জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং ভেন্যু এলাকায় হোটেলটির অবস্থান। লঙ্কান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, জি-৭’র  আউটরিচ মিটিংয়ে দুই নেতাই বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নিয়েছেন। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ওই মিটিংয়ে জি-সেভেনভুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া আলেন্দ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং সম্মেলনের আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও চাদের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমন্ত্রিত ছিলেন। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের প্রধানও আউটরিচ মিটিংয়ে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন আজ: চার দিনের জাপান সফরের শেষদিন আজ। দিনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাপানি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট  বৈঠকে মিলিত হবেন এবং সেখানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সংস্থা এফবিসিসিআই এবং জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সংস্থা ‘জেটরো’র মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিকালে প্রধানমন্ত্রী জাপান প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় জাপানের হেনাডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিমানের একটি ফ্লাইটে টোকিও ত্যাগ করবেন তিনি। রাতেই তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *