এনজিওর কৃষি ঋণ যাচ্ছে অন্য খাতে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
taka_215163
এতদিন অভিযোগ ছিল ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে। গ্রহীতারা ব্যাংক থেকে যে উদ্দেশ্যে ঋণ নিচ্ছেন, বাস্তবে টাকা খাটাচ্ছেন অন্য কাজে। কেউ ব্যাংক থেকে শিল্প ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন বা কেউ চলতি মূলধন নিয়ে জমি কেনেন। এ অভিযোগ এবার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতাদের বেলায়ও উঠেছে। এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) বলছে, এনজিওগুলো থেকে যে কৃষি ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তার বেশিরভাগ অংশ কৃষি কাজে ব্যবহার না হয়ে অন্য খাতে ব্যয় হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষুদ্র ঋণ গ্রাহক নির্দিষ্ট কাজের কথা বলে ঋণ নিয়ে তা মূলধন খাতে ব্যবহার করছেন। এতে কৃষি খাতে যে পরিমাণ ঋণ যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে এর যেমন সত্যতা থাকছে না, আবার এক খাতের জন্য বিতরণ করা অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করায় ঝুঁকিও বাড়ছে।

পরিদর্শনে এমন তথ্য পেয়ে এমআরএ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করেছে। ভবিষ্যতে এক খাতের জন্য বিতরণ করা ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এমআরএর পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের অজান্তে কৃষি ঋণ নিয়ে তা অন্য কাজে ব্যবহার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমআরএর পক্ষ থেকে এনজিওগুলোকে অধিক সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে ৬৮২টি প্রতিষ্ঠান সংস্থাটির লাইসেন্স নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই কৃষি ঋণ বিতরণ করে থাকে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এনজিওগুলো ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। আদায় শেষে কৃষি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এনজিওদের কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের সুদ হার ২৫ শতাংশ (ডিক্লাইনিং রেট)। এ ছাড়া কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে, যে তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে কোনো কোনো ব্যাংক এনজিওদের মাধ্যমে বিতরণ করছে। ১০ টাকার অ্যাকাউন্টধারী কৃষক এই ঋণ পেয়ে থাকেন। ইতিমধ্যে ৩৩টি ব্যাংক এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ৪৭১ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। এনজিওদের মাধ্যমে কত বিতরণ হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে অধিকাংশ ব্যাংক এই তহবিলের অর্থ এনজিওদের মাধ্যমে বিতরণ করছে। এনজিওগুলো ওই তহবিলের যে ঋণ বিতরণ করে তার সুদ হার ১৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের এক কর্মকর্তাও এনজিওদের বিতরণ করা কৃষি ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, কৃষি ঋণ কৃষি খাতে ব্যবহার না করে গ্রহীতা অন্য কাজে ব্যবহার করছেন। এ ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও দেখা গেছে। এ ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বিষয়টি মনিটর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এক খাতের ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার হলে যেমন ঋণ আদায়ের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি ঋণের তথ্য সঠিক না হওয়ায় জাতীয় পরিকল্পনাও যথাযথভাবে নেওয়া যায় না। কারণ কৃষি খাতে কত ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তার সুদ ইত্যাদির ওপর কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ নির্ভর করে। আবার সরকারের ভর্তুকিসহ অন্যান্য পরিকল্পনাও করা হয় এসব ঋণের তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে।

আবার সুনির্দিষ্ট খাতে বা প্রকল্পে (যেমন গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ ইত্যাদি) ঋণ নিয়ে তা অন্য কাজে বিশেষ করে মূলধন (ব্যবসায় লেনদেন) খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী  বলেন, ঋণ গ্রহীতা নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। কেন ঋণ গ্রহীতা কৃষি খাতের ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার করছেন, তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অনেক সময় এমন হয়, কৃষি ঋণ পাওয়া সহজ, সেজন্য গ্রহীতা কৃষির নামে ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগ করছে অন্য খাতে। যেখানে কৃষির চেয়ে লাভ বেশি। চাহিদা বিবেচনায় ঋণ দিতে হবে এনজিওগুলোকে।

এমআরএর এক কর্মকর্তা  জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কম সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য গ্রাহক মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। কারণ কৃষি ছাড়া অন্যান্য ঋণে সুদহার বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *