আইন শৃঙ্খলার উন্নতি না আইজিপির মশকারী!

Slider জাতীয় সম্পাদকীয় সারাদেশ

1434297148

 

খুন অপহরণ বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। চুরি ডাকাতি ছিনতাই তো বাড়ছেই। মানুষ এখন নিরাপত্তাহীন। তবে পুলিশ বলছে যার যার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বেড রুমের নিরাপত্তা দেয়া যাবে না। তাহলে রাষ্ট্রের মালিক জনগনের নিরাপত্তা কে দিবে এটা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা থাকা স্বাভাবিক। এই অবস্থায় গতকাল পুলিশের আইন শৃঙ্খলা সভায় অপরাধের  তুলনামূলক যে চিত্র দেয়া হল তাতে মনে হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নিতি হচ্ছে। আসলেই কি হচ্ছে? যদি উন্নতি হয়েই থাকে তবে পুলিশ প্রধান এমন দায়িত্বহীন কথা বললেন কোন চাপে পড়ে বা বিবেকের কোন দংশনে?  একটি দেশের জননিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান যদি বলেন তাদের একার পক্ষে জনগনের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। জনগনের নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে? তাহলে ধরে নিতে হবে নিরাপত্তা দিতে তারা অপারগ। তাহলে এমন কথা কি ভাবে বললেন আইজিপি। তাহলে কি তিনি মশকারী করলেন?

গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে বিভিন্ন রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন এলাকার কমিশনার ও ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।

বৈঠকে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা ২৯টি হামলা করেছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি হয়েছে গত বছরেই। ২০১৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি কথিত নাস্তিক ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেয় ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা। এরপর মাঝের এক বছর বিরতি থাকলেও গত বছরের বিভিন্ন সময়ে একাধিক গুপ্ত হত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে ২৭শে ফেব্রুয়ারি টিএসসিতে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা, ৩০শে মার্চ তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান হত্যা, ১২ই মে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যা, ২৮শে সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালীয় নাগরিক হত্যা, ৩রা অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশিও কুনি হত্যাকাণ্ড, ৫ই অক্টোবর বাড্ডায় খিজির খান নামে এক কথিত পীরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। একই দিন পাবনার ঈশ্বরদীতে খ্রিষ্টান যাজকের ওপর হামলা, ৭ই অক্টোবর ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল হত্যা, ২২শে অক্টোবর গাবতলী পুলিশ চেকপোস্টে হামলা, ২৩শে অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানের তাজিয়া মিছিলে হামলা, ২রা নভেম্বর একই সঙ্গে লালমাটিয়ায় ব্লগার-প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলের কার্যালয়ে ও শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ব্লগার-প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের ওপর হামলা চালানো হয়। ৪ঠা নভেম্বর আশুলিয়ায় পুলিশের চেকপোস্টে হামলা, ১৮ই নভেম্বর দিনাজপুরে ইতালীয় এক পাদরিকে হত্যাচেষ্টা, ২৬শে নভেম্বর বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা, ৫ই ডিসেম্বর দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দিরের রাসমেলায় হামলা ও ১০ই ডিসেম্বর দিনাজপুরে ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। চলতি বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের মঠ প্রধানকে হত্যা, ২২শে মার্চ কুড়িগ্রামে ধর্মান্তিরত এক খ্রিষ্টানকে হত্যা, ৭ই এপ্রিল পুরান ঢাকায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদ হত্যা, ২৫শে এপ্রিল কলাবাগানে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক ম্যাগাজিন রূপবান সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থায় কর্মরত জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ ১লা মে টাঙ্গাইলে এক হিন্দুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
তিন মাসের অপরাধ পর্যালোচনা
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি জহিরুল ইসমাল ভূঁইয়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। দেশব্যাপী অপহরণ, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু পাচার, অস্ত্র উদ্ধার, মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সভায় পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় ভালো বলে দাবি করা হয়। গত বছরের শেষ তিন মাসে মোট মামলা হয়েছিল ৪৪ হাজার ২১৫টি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মামলার সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ২৬৯টি। এমনকি সারা দেশে আলোচ্য সময়ে খুন, দ্রুত বিচার, দাঙ্গা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন ইত্যাদি মামলার পরিমাণ কমেছে বলে জানানো হয়। অপরদিকে ডাকাতি, দস্যুতা, অপহরণ, সিঁধেল চুরি, চুরি মামলার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য এবং চোরাচালান দ্রব্য জব্দ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণও বেড়েছে বলে জানানো হয়। গতকাল বৈঠকের বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মোটর কার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটরসাইকেল, বেবি ট্যাক্সিসহ বিভিন্ন ধরনের ৫৬২টি গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। ২০১৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ কোয়ার্টারে গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৬২৩টি। আলোচ্য কোয়ার্টারে ৫৬২টি চুরি যাওয়া গাড়ির মধ্যে ৪৪৬টি গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। গাড়ি উদ্ধারের হার শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ বলে জানানো হয়। এই তিন মাসে পুলিশ হতাহতের ঘটনায় সারা দেশে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সভায় আইজিপি প্রতিটি খুনের মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য সকল জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন।

বাস্তবতা ও পুলিশের অপরাধ চিত্র দুটো ভিন্ন চিত্র। পুলিশের অপরাধ চিত্রের দিকে তাকিয়ে জীবন চলতে থাকলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিঁখোজ হয়ে যাবে। তাই আবোল তাবোল না বলে সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ ও কর্তব্যপরায়নতাই প্রত্যাশা থাকল।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *