রাজনীতিতে ফুল, কাল হয়ে আসছে!

Slider বাংলার আদালত বাধ ভাঙ্গা মত রাজনীতি সম্পাদকীয়

13051591_10207318820343519_2008880694818698794_n

 

 

 

 

 

 

রাজনীতিতে কারাবরণ একটি ফ্যাশন হয়ে গেছে বলা যায়। কারণ যে নেতা বেশী মামলার আসামী ও অনেক সময় কারাবাস করেছেন তাকেই ত্যাগী নেতা বলা হয়। দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ফুল আর যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন হাজত এখন নিয়মিত রুটিন ।  কারামুক্তির পর কারাফটকে ফুল হাতে অনেক নেতাকে আবার কারাগারে ফেরতও যেতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি বড়ই নিষ্ঠুর। বিরোধী দলে থেকে যে সিনিয়র নেতা পুলিশের মার খেয়ে রক্তাক্ত হয় ওই দল ক্ষমতায় গেলে অনেক সময় অতীতের রক্তমাখা নেতাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী পরিষদ সদস্য করা হয়। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এই রীতিটা অনেকটাই চলমান। আবার  কারাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ওই কারাগারেই বন্দি থেকেছেন। এই রীতি আমাদের রাজনীতিকে কুলষিত করছে। যার পরিণাম নিকট ভবিষৎ হয়ত বলে দেবে।

সম্প্রতি বেশ কিছু জাতীয় নেতাদের মধ্যে অনেকে কারামুক্তির পর বার বার গ্রেফতার হচ্ছেন। গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান

গ্রেফতারেরআগের রাতে নেতা-কর্মীদের দেয়া ফুলের শুচ্ছোয় সিক্ত হন। কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে মেয়রের চেয়ারে বসছেন জেনে দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে দফায় দফায় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু এর পরদিন তিনি গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর তাকে মহিলা হাজতে রাখা হয়। হাজতে ঢুকানোর সময় মেয়র বার বার চিৎকার করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তাকে যেন দেখিয়ে হাজতে ঢুকানো হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে রীতিমত অসম্মান করে হাজতে ঢুকিয়ে দেয়। মেয়রের স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, তার স্বামীকে আটকের দুই ঘন্টা পর গ্যাস সিলিন্ডারে বাসে আগুন লাগে বলে তারা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছেন। তাই তিনি তার স্বামীর মুক্তির দাবি করেন।

একটি প্রসঙ্গ সকলের মনে দানা বাঁধছে যে, কারামুক্তির পর উচ্চ আদালতের রায়ে মেয়র মান্নান পুনরায় চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন। তাহলে তিনি কেন বাসে আগুন দিতে যাবেন। আর েএখন  তো বিরোধী দলের কোন কর্মসূচিও ছিল না। তাহলে কি বাসে আগুন দিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসতে চেয়েছিলেন মান্নান? আর ওই আগুন দেয়ার সময় তিনি সিটিকরপোরেশনের ৯জন কাউন্সিলর ও তার সকল ব্যাক্তিগত লোকদের নিয়ে নাশকতাটি সম্পন্ন করেছেন?

বাংলাদেশ সরকারের বিধি বিধানে মেয়র উপ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। যখন উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন কোন জনপ্রতিনিধিকে অপরাধ সম্পর্কে না জানিয়ে জোর করে হাজতে ঢুকানো হয় তখন সাধারণ মানুষের জানার অধিকার কতটুকু থাকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রাজনীতি আছে থাকবে। তবে পরমত দমনের ক্ষেত্রে অনেকটা সতর্ক ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ক্ষমতার চেয়ারে বসে বিরোধী দলে থাকার চিত্র চোখে না ভাসলে রাজনীতি অকার্যকর হয়ে যাবে। রাজনীতিতে পরস্পরিক শ্রদ্ধা ওসম্মানবোধ যদি জীবিত রাখা না যায় তবে যিনি অস্মান করছেন তাকেও অসম্মান হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এমন প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে এক সময় দেশে রাজনীতি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়ে নিরাকার হয়ে যেতে পারে। তাই রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সঠিক গনতন্ত্র চর্চা এখন জীবন রক্ষার সেলাইন হয়ে গেছে।

 

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *