মসজিদে মুয়াজ্জিন খুন

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা

8572_f5

 

পুরান ঢাকায় মসজিদে মুয়াজ্জিন খুন হয়েছেন। তার নাম মাওলানা মো. বিল্লাল হোসেন (৪৯)। পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, চুরি ঠেকাতে গিয়ে তিনি খুন হতে পারেন। গত রমজান মাসেও ওই মসজিদে তিন দুর্বৃত্ত চুরি করতে ঢুকেছিল। ওই সময় দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে চলে গেছে। ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ মসজিদের ইমাম, দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন ও মার্কেটের দুই নৈশপ্রহরীকে থানায় নিয়ে যায়। তবে খুনের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। দুর্বৃত্তরা তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সুলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) পাঠিয়েছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালি থানাধীন ইসলামপুর রোডের ২৪, ঝব্বু খানম মসজিদের প্রধান মুয়াজ্জিন ছিলেন বিল্লাল হোসেন। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তৃতীয় তলার সিঁড়িতে তার রক্তাক্ত শরীর পড়ে থাকতে দেখেন ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা তাজুল ইসলাম। তখন তিনি চিৎকার দিয়ে মসজিদের অন্য মুসল্লিদের ডাকেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জনবহুল এলাকা ইসলামপুর রাস্তার পাশেই ঝব্বু খানম মসজিদ। মসজিদের সামনে স্থানীয়দের জটলা। মসজিদে তালা লাগানো। মসজিদটি চারতলা। নিচতলায় মার্কেট। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। তৃতীয় তলায় পূর্বের একপাশে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দুটি কক্ষ আছে। মসজিদের নিচের মার্কেটে তিনজন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। তবে ওই মসজিদের কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। মসজিদের ইমাম মাওলানা তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি থাকেন পাটুয়াটুলীর একটি বাড়িতে। বাড়ি থেকে তিনি নামাজ পড়াতে আসেন। প্রধান মুয়াজ্জিন মসজিদেই একটি কক্ষে থাকতেন। মুয়াজ্জিন আজান দেয়ার পর মসজিদের মধ্যে তার নির্ধারিত স্থান ইমামের পেছনে বসেন। গতকাল ভোরে মসজিদে এসে তাকে আমি দেখতে পাইনি। একামতের সময় হয়ে আসার কারণে আমি নিজেই তাকে ডাকতে তৃতীয় তলায় যাওয়ার সময় সিঁড়িতে তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখি। ইসলামপুরের বাসিন্দা মসজিদের মুসল্লি ব্যবসায়ী হাজী মহসিন আলী জানান, তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। আরেক মুসল্লি রুহুল আমিন জানান, ২৮ বছর ধরে তিনি ওই মসজিদে প্রধান মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এলাকার লোকজনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি আরও জানান, রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি বাইরে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন, চা পান করেছেন। গত রমজানে ভোররাতে তিনজন দুর্বৃত্ত মসজিদের মধ্যে ঢুকে তাকে মারধর করে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়েছিল।
নিহতের ছেলে কোতোয়ালি হাফেজিয়া মাদরাসায় ছাত্র ইয়াসিন আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, রোববার রাতে তিনি তার বাবার কাছে ওই মসজিদে গিয়েছিলেন। তিনি ওই মসজিদেই থাকতেন। ১৫ দিন পর পর গ্রামের বাড়িতে যেতেন। জানামতে তার বাবার কোনো শত্রু ছিল না। তিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার পূর্ব দাশরা এলাকায়।
পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে তাকে খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মসজিদের ইমাম, দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন এবং দুই নৈশপ্রহরীকে আনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিহতের মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। এর আগেও দুর্বৃত্তরা ওই মসজিদে হানা দিয়ে চুরি করে টাকা পয়সা নিয়ে গিয়েছিল। চুরিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *