শিক্ষকের মাথা ফাটালেন ছাত্রলীগের নেতা!

Slider গ্রাম বাংলা টপ নিউজ

download

যশোরের কেশবপুরে এক শিক্ষককে মারধর করে কোমল পানীয়র বোতল দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক নেতা ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। শিক্ষক কে এম ফিরোজ এখন কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।

কে এম ফিরোজ উপজেলার দোরমুঠিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আর ছাত্রলীগের নেতা হলেন, কেশবপুর পৌর ছাত্রলীগের সদস্য আকাশ খান। আকাশের মা কেশবপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রাবেয়া ইকবাল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কেশবপুর পৌর ছাত্রলীগের সদস্য আকাশ খান তাঁর ১০-১২ জন সঙ্গী নিয়ে শহরের পৌরসভা সড়কে একটি ক্লিনিকে ঢোকার মুখের রাস্তায় দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বসে ছিলেন। এ সময় শিক্ষক ফিরোজ সুলতান ওই পথ দিয়ে একটি কাজে (রাইসকুকার সারাতে) যাচ্ছিলেন। তিনি রাস্তায় বসে থাকা ছেলেদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে ছেলেরা তাঁর ওপর চড়াও হন।
শিক্ষক ফিরোজের ভাষ্যমতে, রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে আকাশ ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে গালাগাল করেন। তখন তিনি প্রতিবাদ করেন। এ সময় আকাশের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে কিল ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে কোমল পানীয়র কাচের বোতল দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করলে মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রিপন রায় জানান, শিক্ষক ফিরোজের মাথায় এক ইঞ্চির মতো কেটে গেছে। আর কাটার ক্ষত মাথার হাড় পর্যন্ত লেগে গেছে। তাঁর মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে।
এ ঘটনায় ফিরোজের ভগ্নিপতি মশিউর রহমান বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পুলিশ ছাত্রলীগের নেতা আকাশ খান (২৩), মধ্যকুল গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২২), আলতাপোল গ্রামের রোকন উদ্দীন (২০) এবং মনিরুল ইসলামকে (২০) গ্রেপ্তার করে।
হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ডি আর কাফী খান জানান, শিক্ষক ছাড়াও ওই তিনজনের শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া হালকা উঠে যায়।
এদিকে মামলা প্রত্যাহার এবং কর্মীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার দাবিতে গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা শহরের ত্রিমোহিনী মোড়ে যশোর-সাতক্ষীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে থানা-পুলিশ অবরোধকারীদের লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় সাধারণ পথচারী ও দোকানদাররাও লাঠিপেটার শিকার হন।
জানতে চাওয়া হলে কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী আযাহারুল ইসলাম ওরফে মানিক বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাই। ওই শিক্ষকই আগে আকাশের গায়ে হাত তুলেছে।’ রাতে প্রতিবাদকারীরা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের কর্মী বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে জানান, আকাশ খান পৌর ছাত্রলীগের সদস্য।
আকাশে খানের মা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রাবেয়া ইকবাল বলেন, ‘আমার ছেলেসহ কয়েকজন ক্লিনিকের নিচে বসে চা খাচ্ছিল। এ সময় ওই শিক্ষক তাঁকে প্রশ্ন করেন, এখানে কেন বসে আছো? তখন আমার ছেলে চোখ রাঙালে ওই শিক্ষক আমার ছেলেকে দুটি চড় দেয়। আমার ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে ওর বন্ধুরা শিক্ষককে মারপিট করে।’
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম বলেন, মারামারি এবং রাস্তা অবরোধের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটির বাদী মশিউর রহমান। অন্যটার বাদী কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক শাহাজাহান আলী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *