চুরি যাওয়া বাংলাদেশের টাকা চীনা ব্যবসায়ীর কাছে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

2016_03_15_19_34_08_DfcovFCGwOa8sOj6VL4EMQrlZVMlf7_original

 

 

 

 

ঢাকা : ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার মাইয়া সানতোস দেগুইতার নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ দেয়া হয় চীনা ব্যবসায়ী ওয়াইক্যাং ঝুকে। মার্কিন ডলার ও স্থানীয় মুদ্রা পেসোতে দু’দফায় ওই টাকা পৌঁছে দেয় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী একটি প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার সরকার অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা মঙ্গলবার ফিলিপাইন সিনেট কমিটির শুনানিতে এ তথ্য জানান। বেশ কয়েক দফায় তিনি নিজে চীনা ব্যবসায়ীকে ১৮ মিলিয়ন ডলার ও স্থানীয় মুদ্রায় ৬শ মিলিয়ন পেসো দিয়েছেন।

ফিলিপাইন সিনেট কমিটি মঙ্গলবার স্মরণকালের বৃহত্তম এ ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় শুনানি গ্রহণ করে। শুনানিতে কমিটির সভাপতি সিনেটর সার্জিও ওসমেনাসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এতে রিজাল ব্যাংকের মাকিাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিটের শাখা ম্যানেজার মাইয়া সানতোস দেগুইতাসহ সন্দেহভাজন সবাইকে ডাকা হয়।

শুনানিতে ফিলরেম সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার সানতোস দেগুতার নির্দেশে এ টাকা চীনা ওই ব্যবসায়ীকে দেয়া হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীকে তিনি চেনেন কি না জানতে চাইলে বাতিস্তা বলেন, ওয়াইক্যাং ঝু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের একজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী।

এসময় সিনেট কমিটির সভাপতি সিনেটর সার্জিও ওসমেনা শুনানিতে উপস্থিত ব্যাংক ম্যানেজার সানতোস দেগুইতার কাছে চান এ বক্তব্য সত্য কি না। জবাবে দেগুইতা বলেন, কমিটির বিশেষ সেশনে তিনি অভিযোগের বক্তব্য দেবেন। কমিটির সভাপতি এ সময় দেগুইতার কাছে জানতে চান তিনি চীনা ওই ব্যবসায়ীকে চেনেন কি না। দেগুইতা উত্তরে বলেন, চেনেন না।

এসময় সিনেট কমিটির সভাপতি তার কাছে জানতে চান যে, যাকে আপনি চেনেন না বলে বলছেন, তাকে কীভাবে এতগুলো টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন? এ জিজ্ঞাসার কোনো জবাব দেননি ব্যাংক ম্যানেজার দেগুইতা।

এদিকে সিনেট কমিটি জালিয়াতির এ অভিযোগ গোপন সভায় শুনার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। ব্যাংক সিক্রেসি আইনে যুক্তি দেখিয়ে গোপন শুনানির এ অনুরোধ জানানো হয়। কমিটির সভাপতি তখন বলেছেন, অর্থ জালিয়াতির ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ ব্যাংক। সিনেটের উন্মুক্ত এ শুনানি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকের পক্ষে আপত্তি তোলা হয়নি। তাই এ শুনানিতে কোনো বাধা নেই। তবে কারা এ গোপন শুনানি চেয়েছে তা তিনি খোলাসা করেননি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে গত ৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে সুইফট কোর্ড ব্যবহার করে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোপাট করা হয়। সরিয়ে নেয়া অর্তের ৮১ মিলিয়ন পাঠানো ফিলিপাইনের রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার এক অ্যাকাউন্টে। বেশ ক’মাস আগে অ্যাকাউন্টটি এক ব্যবসায়ী খোলেন। পরে তা আরো চার ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেয়া হয়। বাকী ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকার একটি ব্যাংকে। তবে প্রাপক সংগঠনের নাসের বানান ভুলে টাকার গন্তব্য নিয়ে সন্দেহ হলে ব্যাংক কর্মকর্তারা তা আটকে দেন।

ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর ইতিহাসে ভয়াবহ এ ব্যাংক জালিয়াতির উপর অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ম্যানিলাভিক্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনকোয়েরার। শুরু হয় তোলপাড়। বিশ্ব গণমাধ্যমেও এ জারিয়াতির বেশ গুরুত্ব পায়। ফিলিপাইনের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান শুরু করে। সর্বশেষ সিনেটের অর্থ বিষয়ক কমিটিও শুনানির আয়োজন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *