গ্রাম বাংলা ডেস্ক: শুভ্রতা ছড়াতে আবারো এল শরৎকাল। শরতের মুগ্ধতায় সেজেছে প্রকৃতি। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতির ন্যায় মানুষের মনও প্রশান্তি পায় শরতে।
শরৎরূপে মুগ্ধ হয়ে শরৎবন্দনা করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
‘আজি কি তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ঝলিছে অমল শোভাতে।/পারে না বহিতে নদী জলধার,/ মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর/ ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল/তোমার কাননসভাতে!/মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,/ শরতকালের প্রভাতে…।’
বিদায় নিল বর্ষাকাল, বর্ষার বৈশিষ্ট এখনও বহমান। বার মাসে ছয় ঋতুর এদেশে ভাদ্র-আশিন মাস শরৎকাল।
এদশের প্রতিটি ঋতুই বৈচিত্রময়। প্রকৃতি কখনো হয় প্রাণোচ্ছ্বলা চঞ্চলা তরুণী, কখনো হয় দীপ্ত চক্ষু শীর্ণ সন্ন্যাসিনী, কখনো বর্ষশীলা ক্রন্দনরতা অভিমানিনী, কখনো নিস্প্রুভ জরাগ্রস্ত বৃদ্ধা, আবার কখনো বা শান্তশিষ্ট স্নেহময়ী জননী।
ঋতুচক্রে ঝরো ঝরো বর্ষার পরিক্রমায় শরতের আগমন। কাশবনের উপর দিয়ে আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা ভাসিয়ে এসেছে শরৎকাল। বর্ষার বর্ষণের মধ্য দিয়ে শরৎ আসে শান্ত স্নিগ্ধ কোমল রূপ নিয়ে। নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস যার বৈশিষ্ট। মায়াবী রঙিন ভুবন শরতেই পাওয়া যায়।
শরতের এই প্রাণবন্ত রূপ স্পস্ট এখন গ্রাম-গ্রামান্তর। নদীর তীরে ঘন কাশবন সাদা ফুলে ফুলে দোল দিয়ে ভরিয়ে তোলে মনপ্রাণ। আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা অপরূপ করে তোলে প্রকৃতি। কখনও কখনও ডানা মেলে উড়ে চলা সাদা বকের সারি নতুন মাত্রা পায় এ শরৎকাল।
মাঠে মাঠে চিরসবুজ ধান ক্ষেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য জমা পানিতে ফোঁটা শাপলা-পদ্ম, ডাঙ্গায় ফোঁটা শেফালি-শিউলী-জুঁই বিমুগ্ধ করে প্রকৃতি।
বর্ষার ধারা শিশির হয়ে ঝরে শরতে। নির্মল সবুজ ঘাষের ডগায়, গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরে স্বচ্ছ সূর্য কিরণ ঝলমলে করে তোলে এ প্রকৃতি।
দিনের ঝলমলে পৃথিবীকে রাতের ধবধবে জ্যোৎস্না আর ঝাউবনে জোনাকি পোকা আলো দিয়ে সৃষ্টি করে অপরূপ সৌন্দর্য।
বাঙালি হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা এ শরৎকালেই হয়ে থাকে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এ পূজায় বাঙালি পায় অনাবিল আনন্দ।
এ শরৎকে বরণ করতে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শরৎবন্দনা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করে শরৎবরণ।