বরিশাল বাস মালিক সমিতির সদস্য নারীলিপ্সু মামুনের লালসার শিকার স্কুল ছাত্রীসহ ১২ নারী

Slider নারী ও শিশু

 

 

1448366920

 

 

 

 

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশাল বাস মালিক সমিতির সদস্য ও ‘মক্কা’ পরিবহনের মালিক নারীলিপ্সু মামুন খানের শিকার হল আগৈলঝাড়ার ৯ম শ্রেণী পড়–য়া স্কুল ছাত্রী ববিতা। গত ৪ মার্চ ববিতাকে অপহরণের অভিযোগে আগৈলঝাড়া থানায় তার মা অভিযোগ দায়ের করেছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নারীলিপ্সু মামুনের নারী শিকার ও প্রতারণার অভিনব চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে প্রভাব আর টাকার কারণে বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে মামুন খান।
কৌশলে স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রীদের অপহরণ করে ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের নামে প্রহসন করে কয়েকদিন স্ফূর্তি করে শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। এরপর তাড়িয়ে দেয়া হয় সেই নারীকে। এভাবে লম্পট মামুন কর্তৃক ১১ জন নারীর সর্বনাশের খবর পাওয়া গেছে।  প্রতারক ও লম্পট মামুনের ঘনিষ্ট স্বজনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী পৌর এলাকার কাশেমাবাদ (বর্তমান দক্ষিণ বিজয়পুর) মহল্লার বাসিন্দা জালাল খানের ছেলে মামুন খান (৩৬) দীর্ঘদিন ছিলেন সৌদি আরব প্রবাসে। ১৫ বছর পূর্বে সৌদি আরবে বসবাস করার সময় কৌশলে সেখানে বসবাসরত মিশরীয় দুই মেয়েকে একে অপরের অজান্তে বিয়ে করে মামুন। ওই দুই মিশরীয় নারীর গর্ভে তার দু’টি সন্তান জন্ম নেয়। উভয় স্ত্রী মামুনের বিয়ের কথা জানার পর তারা আইনের আশ্রয় নিলে প্রাণভয়ে মামুন সৌদি আরব থেকে পালিয়ে দেশে আসে। দেশে ফিরেই লম্পট মামুন কৌশলে গৌরনদীর লেবুতলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খন্দকারের নাবালিকা মেয়ে সোহাগী আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের কয়েকদিন যেতে না যেতেই সোহাগীকে অমানুষিক নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয় মামুন। পরবর্তীতে কাশেমাবাদ গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে মরিয়মকে বিয়ে করে সে। মরিয়মের গর্ভে এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার পরই নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বরিশাল নগরীর বিএম কলেজের সামনের একটি বিউটি পার্লারের কর্মী লাবণী আক্তারকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে। বিয়ের কয়েকদিন পর একলাখ টাকা লাবণীকে ধরিয়ে দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে উজিরপুরের হাবিবপুর গ্রামের মনি আক্তার নামের এক যুবতীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রহসনের বিয়ে করে নারীলিপ্সু মামুন। মনির গর্ভে মামুনের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে তাকে তাড়িয়ে দিতে অমানুষিক নির্যাতন করায় আদালতের শরণাপন্ন হয় মনি। যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ মামুন ও তার মা নাছিমা বেগমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে নারীলোভী মামুন বিমানবন্দর থানা এলাকার দুই স্কুল ছাত্রীকে একমাসের ব্যবধানে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রহসনের বিয়ে করে। একই এলাকার দুই মেয়েকে বিয়ের তথ্য ফাঁস হওয়ায় উভয় স্ত্রী পুলিশের সহায়তা নেয়। পুলিশ মামুনকে আটক করলেও বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতির মধ্যস্থতায় ৫লাখ টাকার বিনিময়ে উভয় ছাত্রীর সাথে নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়। এছাড়াও মামুন নিজেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আগৈলঝাড়ার ঘোড়ারপাড় গ্রামের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী রতœা মন্ডলকে নিয়ে চম্পট দেয়। এঘটনার পরে মামুনের পরিবারের উপর ওই ছাত্রীর পরিবার চাপ সৃষ্টি করলে বাধ্য হয়ে রতœা মন্ডলকে পরিবারের কাছে ফেরৎ দেয় মামুন। ওইসময় আগৈলঝাড়ার প্রভাবশালী একটি মহল মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মামলা থেকে রেহাই দেয় নারী লোভী মামুনকে। এভাবেই দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল-কলেজ পড়–য়া অন্তত ১১ জন মেয়েকে কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের পর কয়েকদিন ভোগ করে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়াই হচ্ছে মামুনের নেশা। সর্বশেষ নারীলিপ্সু মামুনের লালসার শিকার হয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের দুবাই প্রবাসী মোস্তফা আকনের মেয়ে ও রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ববিতা আক্তার (১৪)। গত ৩ মার্চ ভোর রাতে অজু করতে গেলে মামুন ববিতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এঘটনায় ববিতার মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে মামুন খানসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই অভিযোগ এখন পর্যন্ত থানায় রেকর্ড হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *