ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে পাচ্ছে জারিফ

Slider নারী ও শিশু

 

 

2016_03_07_11_08_40_0LuUBrYw28izxyj7sqQ0nH7m6uD4N8_original

 

 

 

 

ঢাকা:  ছোট্ট জারিফকে রেখে একে একে বাবা, দুই ভাই চলে গেছে না ফেরার দেশে। মাও পাড়ি দিলেন সেই পথেই। টানা ন’দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রোববার হেরে গেলেন তিনি। ৫ সদস্যের পরিবারের জারিফ বিন নেওয়াজ বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য।

বেলা সোয়া ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) মা সুমাইয়া বেগম মারা যান। তিনি দগ্ধ অবস্থায় টানা ১০টি দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন। গত ১ মার্চ বিকেলে সুমাইয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছিল।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় সেক্টর-১৩, রোড-৩ এর ৮ নম্বর বাড়ির ৭ম তলার ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে ওঠেন মার্কিন দূতাবাসের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার শাহনেওয়াজ শাহিন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বাসার রান্না ঘরের গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে পরিবারের সবাই দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিক নেয়া হয়। সেখান থেকে নিয়ে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিনই বিকেলে শালিন বিন নেওয়াজ (১৫) এবং সন্ধ্যায় শালিনের ১৪ মাস বয়েসি ছোট ভাই জায়ান বিন নেওয়াজের মৃত্যু হয়। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শালিনের বাবা প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ শাহিন (৫০) মারা যান। সর্বশেষ  রোববার না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন জারিফ বিন নেওয়াজের মা সুমাইয়া বেগম (৪০)।

 

বাবা-মা, দুই ভাইয়ের মৃত্যুও কথা এখনো কিছু জানে না শিশু জারিফ। সব হারানোর এ কঠিন কথাটি তাকে জানাননি স্বজনরা। মা-বাবার স্নেহ, বড় ভাইয়ের ভালোবাসার পরশ কোনদিন আর পাবে না সে। ২০ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়েছিল সেও। তার শরীরের ১০ শতাংশ পুড়েছে। চিকিৎসা শেষে স্মৃতি ফিরে পাচ্ছে ছোট্ট জারিফ। মনে পড়ছে ওই দিনের ভয়াবহ স্মৃতি। চাচা, মামাসহ স্বজনরা সবাই মিলে এতিম এ শিশুটিকে হাসি-খুশি রাখার প্রানান্ত চেষ্টা করছে।

জারিফের চাচাতো বোন মিথিলা জামান পান্থি বলেন, ‘জারিফ সুস্থ হওয়ার পথে। তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা চলছে। পরিবারের সবাই তাকে সময় দিচ্ছে। তবে সময় যত যাচ্ছে, উত্তরার ফ্ল্যাটে আগুন লাগার ঘটনা ধীরে ধীরে জারিফের স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে।’

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা জারিফ মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে। কখনো মা, আবার কখনো বাবার কাছে যেতে চায়। কখনোবা বড় ভাই শালিন ও ছোট ভাই জায়ানের কথাও জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু জারিফকে কি করে বলবো, ওই পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। ওই পরিবারের বেঁচে থাকা এগার বছর বয়সী জারিফও মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে সে আশঙ্কামুক্ত। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জারিফ।

 

নিহতের স্বজনরা বলেন, সুমাইয়াকেও স্বামীসহ দুই সন্তানের খোঁজ জানানো হয়নি। যদিও তিনি একাধিকবার তাদের খবর জানতে চেয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন, আমার মনে হয় তারা কেউ বেঁচে নেই। আর এভাবেই স্বামীসহ দুই সন্তানের পথে হাটলেন সুমাইয়া। পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। সুখের সংসার ছিল তাদের। কিন্তু গ্যাস বিস্ফোরণে এলোমেলো পুরো পরিবার। পরিবারের দগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে হারানোর কষ্ট তাদের ভাবিয়ে তুলছে। জারিফের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় তারা।

শাহনেওয়াজের ভাতিজা রাহাত বলেন, ‘নিহত শালিন ও জায়ানের লাশ নানীর বাড়ি বরিশাল সদরের নবগ্রাম রোডে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রোববার রাতে দুই সন্তানের পাশেই সুমাইয়া বেগমকে দাফন করা হয়েছে। যদিও সুমাইয়া বেগমের স্বামী শাহনেওয়াজ শাহিনের লাশ ঝালকাটি সদর সরকারি কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশে দাফন হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *