ঢাকা : একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদ বেদিতে নেতাকর্মীদের জুতা পায়ে প্রবেশ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএনপি।
দলটি বলছে, এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য। কারণ, শহীদ মিনার পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সরকারের অঙ্গ সংগঠনগুলোও সেখানে তৎপর। সুতরাং তারাই এটি করতে পারে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের প্রেসক্রাইব বক্তব্যের বাইরে কোনো কথা বলতে পারবেন না, বলেনও না। কারণ, উনারা সরকারের চাকুরি করেন। অথচ এটি নিশ্চিত যে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যারা নেতাকর্মী তাদের মধ্য থেকেই সেখানে দায়িত্ব পালন করছে।
প্রসঙ্গত, একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে রোভার স্কাউটের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাক্কায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান।
অভিযোগ উঠেছে, খালেদা জিয়া নিজে নিয়ম ভেঙেছেন। শহীদ বেদিতে খালি পায়ে পা রাখার রেওয়াজ থাকলেও শহীদদের প্রতি এক প্রকার অসম্মান দেখিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই জুতা নিয়ে সেখানে ওঠেন। জুতা পরে অবাধ বিচরণের পাশাপাশি সেখানে তাদের জুতা হাতে নিয়ে ছোড়াছুড়ি করতেও দেখা গেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ২৫ মিনিটে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক এ সময় খালেদা জিয়াকে এগিয়ে আনতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে শহীদ বেদির দিকে এগিয়ে আসেন। এ সময় ঢাবির ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান মাটিতে পড়ে যান।
শহীদ মিনারে খালেদা জিয়ার ফুল দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রেখেছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু সেই স্থানে ফুল না দিয়ে খালেদাসহ দলের নেতা-কর্মীরা মূল বেদিতে ওঠার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা শহীদ বেদিতে উঠতে গেলে সেখানে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা বাধা দেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এতে রোভার স্কাউটের সদস্য মো. তানসির রাব্বি (বাঁধন), রিয়াজ ও জুবায়েরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই সেখানে (শহীদ মিনারে) ছিলাম। আমরা নিজেরাও সেখানে দায়িত্ব পালন করেছি। খালি পায়ে শহীদ মিনারের যে মার্যাদা সেটাকে অক্ষুন্ন রাখতে আমরা সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেছি। সেখানে কাউকে জুতা পায়ে আসতে দেখেনি।’
মিডিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া এ বিষয়ে একটি বানোয়াট ফুটেজ দেখিয়েছে। কারণ, অনেক মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন সরকারি দলের অত্যন্ত অনুগ্রহভাজন ও প্রিয়ভাজন। একটি বিশেষ দিবস উপলক্ষে তারা বিএনপির ভাবমূর্তিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়। এ জন্য সরকার যেমন নানা বিষয়ে নানা কথা বলছেন, ঠিক তেমনই মিডিয়াও বিএনপির ভাবমূর্তিকে একইভাবে কালিমালিপ্ত করার জন্য প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা করছেন, এটি তারই অংশ।’
এ প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একুশ হচ্ছে আমাদের প্রথম জাতিসত্ত্বার পরিচয়ের দিন। আর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত যে পরিণতি তার প্রথম সোপান হচ্ছে আমাদের ভাষা আন্দোলন- অনেক ভাষাসৈনিক বিএনপিই তা মনে করেন’- এমন দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এটিতে (শহীদ মিনার) শাসকগোষ্ঠীর (আওয়ামী লীগ) যারা লোকজন আছেন, শুধুমাত্র তাদেরই খুব শ্রদ্ধাবোধ আছে, আর আমাদের নেই- এটি ঠিক না। তাহলে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, কাজী মাহবুব হোসেনের মতো লোকেরা যারা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তারা বিএনপি করতেন না। এটি বানোয়াট, মিথ্যা ও অসত্য।
একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে তাহলে কারা জুতা পায়ে প্রবেশ করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘এটি পরিচালনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সরকারের অঙ্গ সংগঠনগুলোও সেখানে তৎপর। সুতরাং এটি তারাই করতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রমুখ।