দ্বিতীয় ঘটনাটি জিয়ার সেনাপ্রধান হওয়ার পরের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্টের। কর্নেল শাফায়াত জামিল জিয়ার অফিসে বসে আছেন। এমন সময় হঠাৎ সেই ঘরে ঢুকলেন সদ্য পদোন্নতি পাওয়া মেজর জেনারেল এরশাদ। প্রশিক্ষণের জন্য তখন তার দিল্লিতে থাকার কথা। তাকে দেখে জিয়া রেগে গিয়ে বেশ রুঢ়ভাবেই জিজ্ঞেস করলেন, অনুমতি ছাড়া তিনি কেন দেশে ফিরে এসেছেন। জবাবে এরশাদ বললেন, দিল্লিতে অবস্থানরত তার স্ত্রীর জন্য তিনি একজন গৃহভৃত্য নিতে এসেছেন। এটা শুনে জিয়া রেগে গিয়ে বলেন, আপনার মতো সিনিয়র অফিসারদের এই ধরনের লাগামচাড়া আচরণের জন্যই জুনিয়র অফিসাররা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করে দেশের ক্ষমতা দখলের মতো কাজ করতে পেরেছে। জিয়া তার ডেপুটি এরশাদকে পরবর্তী ফ্লাইটেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাকে বঙ্গভবনে যেতেও নিষেধ করলেন। কিন্তু সেনাপ্রধানের নির্দেশ অমান্য করে রাতে এরশাদ বঙ্গভবনে যান এবং অনেকরাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থানরত অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের লেখা ‘বিএনপি সময়-অসময়’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত এ বইয়ে আরও লেখা হয়েছে, ১৫ আগস্টের ঘটনাবলির পেছনে জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র আছে- এমন একটা অভিযোগ শোনা যায়। এই অভিযোগ কতটা অনুমাননির্ভর এবং কতটা যৌক্তিক এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মুখরোচক আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে তেমন কোন অনুসন্ধান কিংবা গবেষণা হয়নি। এটা ঠিক যে, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের ফলে জিয়া সেনাপ্রধান হতে পেরেছিলেন। শেখ মুজিব নিহত না হলে জিয়ার উত্থান হতো না, এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা চলে। কিন্তু এটাও ঠিক যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে সফিউল্লাহ নন, জিয়াই হতেন সেনাপ্রধান। জিয়া সেনাবাহিনী ছেড়ে অন্য কোন অসামরিক পদে চাকরির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। বলা যায়, তিনি মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তার বাহিনীর চূড়ায় আরোহনের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। একটা নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। জিয়াউর রহমান এ ধরনের কোন পরিকল্পনা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে কোনো অ্যাকাডেমিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ হয়নি। জিয়ার দিকে সন্দেহের তির ছুড়ে দেওয়ার পক্ষে একটিমাত্র উদাহরণের উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আর তা হলো- তার সঙ্গে দেখা করে রশিদের কথাবার্তা বলার ঘটনাটি। শৃঙ্খলাভঙ্গের এই অপরাধের কথা তিনি তার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ, অর্থাৎ সেনাপ্রধান সফিউল্লাহকে জানাননি- সন্দেহের উৎস এখানেই। তবে দুটো ঘটনার উল্লেখ করা চলে যাতে মনে হতে পারে যে জিয়া নিজে সরাসরি কোন ষড়যন্ত্র করেননি, ষড়যন্ত্রের সুবিধা ভোগ করেছেন।
প্রথম ঘটনাটি ১৫ আগস্ট সকাল ছয়টার। রশিদ নিজ মুখে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, উই হ্যাভ কিলড শেখ মুজিব।’ শাফায়াত তার ব্রিগেড মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমেই গেলেন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায়। শাফায়াতের কাছে সব শুনে জিয়া একটু হকচকিত হয়ে গেলেন। তবে বিচলিত হলেন না তিনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, সো হোয়াট, প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড? ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। গেট ইয়োর ট্রুপস রেডি। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’ (রাষ্ট্রপতি মারা গেছেন, তাতে কী হয়েছে? উপরাষ্ট্রপতি আছেন। তোমার সৈন্যদের প্রস্তুত রাখো। সংবিধান অনুযায়ী চলো)।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের লেখা ‘বিএনপি সময়-অসময়’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত এ বইয়ে আরও লেখা হয়েছে, ১৫ আগস্টের ঘটনাবলির পেছনে জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র আছে- এমন একটা অভিযোগ শোনা যায়। এই অভিযোগ কতটা অনুমাননির্ভর এবং কতটা যৌক্তিক এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মুখরোচক আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে তেমন কোন অনুসন্ধান কিংবা গবেষণা হয়নি। এটা ঠিক যে, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের ফলে জিয়া সেনাপ্রধান হতে পেরেছিলেন। শেখ মুজিব নিহত না হলে জিয়ার উত্থান হতো না, এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা চলে। কিন্তু এটাও ঠিক যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে সফিউল্লাহ নন, জিয়াই হতেন সেনাপ্রধান। জিয়া সেনাবাহিনী ছেড়ে অন্য কোন অসামরিক পদে চাকরির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। বলা যায়, তিনি মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তার বাহিনীর চূড়ায় আরোহনের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। একটা নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। জিয়াউর রহমান এ ধরনের কোন পরিকল্পনা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে কোনো অ্যাকাডেমিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ হয়নি। জিয়ার দিকে সন্দেহের তির ছুড়ে দেওয়ার পক্ষে একটিমাত্র উদাহরণের উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আর তা হলো- তার সঙ্গে দেখা করে রশিদের কথাবার্তা বলার ঘটনাটি। শৃঙ্খলাভঙ্গের এই অপরাধের কথা তিনি তার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ, অর্থাৎ সেনাপ্রধান সফিউল্লাহকে জানাননি- সন্দেহের উৎস এখানেই। তবে দুটো ঘটনার উল্লেখ করা চলে যাতে মনে হতে পারে যে জিয়া নিজে সরাসরি কোন ষড়যন্ত্র করেননি, ষড়যন্ত্রের সুবিধা ভোগ করেছেন।
প্রথম ঘটনাটি ১৫ আগস্ট সকাল ছয়টার। রশিদ নিজ মুখে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, উই হ্যাভ কিলড শেখ মুজিব।’ শাফায়াত তার ব্রিগেড মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমেই গেলেন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায়। শাফায়াতের কাছে সব শুনে জিয়া একটু হকচকিত হয়ে গেলেন। তবে বিচলিত হলেন না তিনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, সো হোয়াট, প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড? ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। গেট ইয়োর ট্রুপস রেডি। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’ (রাষ্ট্রপতি মারা গেছেন, তাতে কী হয়েছে? উপরাষ্ট্রপতি আছেন। তোমার সৈন্যদের প্রস্তুত রাখো। সংবিধান অনুযায়ী চলো)।