‘পাকিস্তানি চর’ খুঁজছে গোয়েন্দারা, নজরদারিতে অনেকেই

Slider জাতীয়

 

 

2016_02_13_02_34_30_V5gIRUY8FM3ptNjiV5aRAddyc84YXC_original

 

 

 

 

ঢাকা : পাকিস্তানের কিছু নাগরিক ছদ্মবেশে বাংলাদেশে গুপ্তচরবৃত্তি করছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর। তারা বিভিন্ন পরিচয়ে ঘাপটি মেরে থাকলেও তাদের আসল লক্ষ্য এ দেশে জঙ্গিবাদ ও জাল মুদ্রা ছড়িয়ে দেয়া। গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান হাইকমিশন কর্মী মাজহার খান ও গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তবে মূল হোতা এখনো ঢাকায় সক্রিয় বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে ‘টানাপড়েনের’ মধ্যে এমন তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

সম্প্রতি গুপ্তচর সন্দেহে দুই পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজনের নাম মোহাম্মদ রেহেমান। অপরজন পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সেলরর আমব্রিন জানের ব্যক্তিগত সহকারী আবরার আহমেদ খান। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর মুচলেকা নিয়ে আবরার আহমেদকে ছেড়ে দিলেও মোহাম্মদ রেহেমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে।

রিমান্ডে মোহাম্মদ রেহেমান স্বীকার করেছে, ছয় মাস আগে করাচি থেকে তিনি ঢাকায় আসেন। তার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেহেমান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে দেশে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতো। তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জাল মুদ্রা ব্যবসায়ী চক্রের ঘনিষ্ঠতার তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি কাজ করছিলেন।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো বেশ ক’জন সন্দেহভাজন পাকিস্তানি নাগরিকের নাম পাওয়া গেছে, যারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে বাংলাদেশে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। তাদের সঙ্গে উগ্র-জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ নিয়ে কাজ করছে।

র‌্যাব-২ এর পরিচালক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ  বলেন, ‘সম্প্রতি তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ রেহেমানসহ আরো দু’জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জাল ডলারসহ পাকিস্তান ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশে তার কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক ছিল।’

জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে তারা এ উপমহাদেশে জাল মুদ্রা ব্যবসার পাশাপাশি পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা স্বীকার করেন। স্থানীয় কিছু ‘শুভাকাঙ্ক্ষীর’ কাছ থেকে তারা তথ্য পেতেন। আর ওই শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থ যোগান দিতেই জাল মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যবসার কাজ করতেন তারা। বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণিতেও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানি নাগরিকসহ তিনজনকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সোপর্দ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেন  বলেন, ‘গত ২০ জানুয়ারি রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন পলিটেকনিক্যাল কলেজের পিছনের রাস্তা থেকে পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ রেহেমান এবং মোজাম্মেল হক ও ফারুক আহম্মেদ নামে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জানা যায়, তারা জাল মুদ্রার ব্যবসায় সম্পৃক্ত। এদের মধ্যে রেহমানকে পাকিস্তানি গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে এ ধরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।’
পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানায়, মোহাম্মদ রেহেমান বাংলাদেশি বংশদ্ভুত পাকিস্তানি নাগরিক। তার বাবার নাম আবদুল মান্নান (পাকিস্তানি)। তিনি পাকিস্তানের করাচির কায়েদাবাদ থানাধীন শেরপাও কলোনির তিন নম্বর গলির বাসিন্দা। সেখানকার ১৯৩ নম্বর নিজ বাড়িতে স্ত্রী (পাকিস্তানি) ও তিন সন্তান নিয়ে থাকেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, বাংলাদেশে তার ঠিকানা বরিশালের গলাচিপা থানার চরশিবা। পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসার পর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাগের জনৈক হারুনের বাড়ি ভাড়া নেন। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মোজাম্মেল হক চাপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ থানার সাতরশিয়া গ্রামের সবেদ আলীর ছেলে। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া ফারুক আহমেদের বাবার নাম একরামুল হক। তার গ্রামের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার চৌকা গ্রামে।

র‌্যাব দাবি করেছে, তাদের কাছ থেকে তিন লাখ ভারতীয় রুপি, ৭০০ (ইউএসএ) ডলার ও দুই হাজার ৭৭০ পাকিস্তানি রুপি জব্দ করা হয়। এছাড়া পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ রেহেমানের কাছ থেকে একটি পাকিস্তানি পাসপোর্ট, একটি পাকিস্তানি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। এই তিনজনের কাছ থেকে ৮৯ হাজার ৪৬২ টাকা জব্দ করা হয়। জাল বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করে তারা ওই টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

এদিকে পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সেলর আমব্রিন জানের ব্যক্তিগত সহকারী আবরার আহমেদ খানের বিরূদ্ধেও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ঢাকায় তিনি আটক হওয়ার সময় তার কাছে অন্তত সাড়ে তিন হাজার ভারতীয় মুদ্রা পাওয়া যায়। দূতাবাস কর্মী হওয়া সত্বেও তিনি সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুতভাবে সাদা নম্বর প্লেটযুক্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। নিয়মানুযায়ী, হলুদ প্লেটযুক্ত নম্বর প্লেট (দূতাবাসের জন্য প্রযোজ্য) ব্যবহার করার কথা ছিল তার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আবরার আহমেদ খানের সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে কয়েক মাস ধরেই তিনি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নজরে ছিলেন। তিনি ২০১১ সাল থেকে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। তার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দেখা গেছে, তিনি প্রায়ই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতেন ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেন। এটি তার কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

জানা গেছে, এর আগে ডিবি পুলিশ ইদ্রিস আলীসহ আরো ১১ জন পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারে। আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ও জেএমবিকে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তারা জড়িত। আর এ অবস্থায় ‘পাকিস্তানি চর’দের খুঁজছে গোয়েন্দারা। আর সেই নজরদারিতে রয়েছে অনেকেই।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *