গাজা ইস্যুতে ওয়ার্সির পদত্যাগ

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ সারাবিশ্ব

35290_f4

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিদ্রোহ হয়েছে বৃটিশ সরকারের ভেতরে। এ হামলায় বৃটিশ সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের সিনিয়র মন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সি। সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, গাজা সঙ্কটে বৃটিশ সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে নৈতিকতার দিক থেকে তার পক্ষে থাকা যায় না। সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলার নিন্দা, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করছে। এর সঙ্গে সর্বশেষ যুক্ত হলেন সাঈদা ওয়ার্সি। অন্য দেশগুলোতে প্রতিবাদ বিক্ষোভের চেয়ে তার পদত্যাগের বিষয়টি ভিন্ন। যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। তিনি এখন মন্ত্রী। এর আগে তিনি ছিলেন রক্ষণশীল দলের চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ সালে যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তাকে বৃটেনে প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রী করা হয়। তিনি বেড়ে উঠেছেন ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের ডিউসবারিতে। রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগে তিনি একজন আইনজীবী হিসেবে কাজ করছিলেন। ২০১২ সালে তাকে মন্ত্রিসভার মন্ত্রী পদ থেকে অবনমন করে ফরেন অফিসের মধ্যস্তরের একটি পদ দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে বানানো হয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আস্থা বিষয়ক মন্ত্রী। তাই গতকাল এ রিপোর্টটি বিশ্বের প্রতিটি মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সি তার টুইটারে লিখেছেন, তিনি গভীর অনুতাপ নিয়ে সরকার থেকে সরে যাচ্ছেন। তিনি সরকারে থেকে বা বিরোধী দলে থেকে যে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাকে ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ক’ বা চমৎকার কাজ বলে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন গাজায় শর্তহীন যুদ্ধবিরতি। চ্যান্সেলর জর্জ অসবর্ন তার পদত্যাগকে হতাশাজনক ও অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার সাঈদা ওয়ার্সি টুইটারে লিখেছেন, গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আজ সকালে আমি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পদত্যাগপত্র লিখে তা জমা দিয়েছি। গাজা নিয়ে সরকারি নীতিকে আমি আর সমর্থন করতে পারছি না। রিপোর্টে বলা হয়, রক্ষণশীল দলের ব্যাকবেঞ্চের অনেক এমপি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে অনুরোধ করেছিলেন ইসরাইলের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে। কারণ, গাজায় বৈষম্যহীনভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছিল। এতে উদ্বেগ দেখা দেয়। ব্যারোনেস ওয়ার্সির পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, বৃটিশ সরকারের নীতি এখন আর বৃটেনের জাতীয় স্বার্থে নয়। তাই এ নীতির সমর্থন নৈতিকভাবে আর করা যায় না।

35290_f4

 

 

 

 

ওই নীতির কারণে বৃটেনের সুনাম দীর্ঘ মেয়াদে দেশে ও বিদেশে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাঈদা ওয়ার্সি আরও বলেছেন, তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অতটা সহজ ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাতে ফরেন অফিসে বসে থাকা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তিনি আরও বলেছেন, যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার পক্ষে আমি একাই যথেষ্ট। কিন্তু এ সময়ে সরকারে থেকেও আমি মনে করি না যে, এ সময়ে সরকারে থেকে আমি এমনটা করতে পারতাম। ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র বলেছেন, ব্যারোনেস ওয়ার্সি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এতে অনুতপ্ত প্রধানমন্ত্রী। তিনি মন্ত্রী ও বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় যে চমৎকার কাজগুলো করেছেন তার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ ডেভিড ক্যামেরন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের নীতি একেবারে পরিষ্কার। গাজা পরিস্থিতি অসহনীয়। আমরা দু’পক্ষকেই অবিলম্বে শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে আহ্বান জানিয়েছি। লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন বলেছেন, সাঈদা ওয়ার্সিকে তিনি খুব বেশি শ্রদ্ধা করেন। কারণ, তিনি বৃটেনের জন্য অনেক ভাল কাজ করেছেন। তার ভাষায়, আমি আশা করবো- তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন। ওদিকে বৃটিশ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ বলেছেন, গাজা নিয়ে সরকারের মধ্যে ভিন্নমত ছিল তা আর কোন গোপন কথা নয়। এ বিষয়ে সাঈদা ওয়ার্সির একটি দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এ মুহূর্তে ছুটিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ফলে তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। লেবার দল থেকে ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস আলেক্সান্দার বলেছেন, লেডি ওয়ার্সি যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন বৃটেনজুড়ে অনেক মানুষ তার সঙ্গে একমত হবেন। গাজা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে অন্যায্য পদক্ষেপ নিয়েছেন এটা তারই একটি খারাপ প্রতিক্রিয়া। এ জন্যই এই প্রভাবশালী মন্ত্রী সরকার থেকে সরে গেলেন। উল্লেখ্য, গত ৮ই জুলাই ইসরাইল অপারেশন প্রটেকটিভ এজ শুরু করে গাজায়। প্রথমে অপহরণ, হত্যাকে কেন্দ্র করে এ অভিযান শুরু করলেও পরে তা রূপ নেয় এক হত্যাযজ্ঞে। বিশ্ববাসীকে তোয়াক্কা না করে গাজায় হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে ইসরাইল। গতকাল দু’পক্ষই এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়। ততক্ষণে গাজায় কমপক্ষে ১৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই শিশু ও নারী, বেসামরিক লোকজন। অন্যদিকে ইসরাইলে নিহত হয় ৬৭ জন। এর বেশির ভাগই সেনাসদস্য। ইসরাইলের অসম শক্তি প্রয়োগের ফলে এ সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করে। বিশ্ববিবেকের সামনে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে। তাই ২১শে জুলাই সাঈদা ওয়ার্সি লিখেছেন, নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ হত্যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। দু’পক্ষের নেতাদেরই থামতে হবে। এর তিন দিন পরে তিনি লিখেছেন, শিশুদের হত্যাকে কি জায়েজ বলতে পারেন কেউ। আমাদের রাজনীতি যা-ই হোক না কেন আমরা এর পক্ষে থাকতে পারি না। শুধু গাজা নিয়ে অনুশোচনা করতে পারি। গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরাইল হামলা চালায়। এতে অনেক মানুষ নিহত হয়। এ হামলার তীব্র সমালোচনা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি যথার্থ বলেছেন বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বান কি মুন বলেছেন, এ হামলা নৈতিকতা বিবর্জিত, অপরাধী কর্মকাণ্ড। তার এ মতের সঙ্গে ক্যামেরন একমত কিনা তা বলেননি ক্যামেরন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *