ছয় পৌরসভাতেই কারচুপির শঙ্কা

Slider জাতীয়

034445Pic-07

 

 

 

 

 

সিরাজগঞ্জে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করার মধ্য দিয়ে ভোটের আগের দিনটি পার করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সিরাজগঞ্জের ছয়টি পৌরসভাতেই ব্যাপক ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগের দাবি, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং জয়ী হতে পারবে না নিশ্চিত জেনে বিরোধী দল থেকে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সরকারদলীয় মেয়র পদপ্রার্থীরা আশঙ্কা করছেন, যেসব এলাকায় বিএনপির ভোট দুর্গ, সেখানে তারা ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখল করতে পারে।

জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল মাহমুদ টুকু সকালে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দল একতরফাভাবে বিজয়ী হওয়ার জন্য বিএনপির প্রার্থী, সমর্থক

ও দলীয় নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে। তবে যতই হামলা-নির্যাতন করা হোক, গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপি মাঠে থাকবে। হোসেনপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, এর সবগুলোই ভিত্তিহীন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে তারা সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি। এসব গ্রেপ্তারের সঙ্গে পৌর নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে আজ সিরাজগঞ্জের ছয়টি পৌরসভার মধ্যে অন্তত তিনটিতে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থীরা উত্তাপ ছড়াতে পারেন বলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তিনজনই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন, নির্বাচনের মাঠে তাঁরা সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না পেয়ে ওই তিনজন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন সৈয়দ আবদুর রউফ মুক্তা। বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন অ্যাডভোকেট মোকাদ্দেস আলী, আর স্বতন্ত্র মেয়র পদে নির্বাচন করছেন টি আর এম নূর ই আলম হেলাল। স্থানীয়রা বলছে, সদর পৌরসভায় মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত লড়াই হবে এই তিনজনের মধ্যে। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্চলিকতার টানে বিএনপির কয়েকটি ভোট দুর্গে হানা দিতে পারেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর ই আলম হেলালও তাঁর শক্তি জানান দিতে পারেন। তিনি সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বেলকুচি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন তিনজন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেগম আশানুর বিশ্বাস ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আল আমিন ভূঁইয়ার মধ্যে। আশানুর বিশ্বাস সাবেক মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী হওয়ায় নির্বাচনে জয়ী হতে সব ধরনের চেষ্টা করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আশানুর বিশ্বাসের কর্মীরা নিজ এলাকার আশপাশের কয়েকটি কেন্দ্র দখল করে ভোট কারচুপি করবে।

রায়গঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন গাজী আবদুল্লাহ আল পাঠান। বিএনপি থেকে লড়ছেন নূর সাঈদ সরকার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মোশাররফ হোসেন আকন্দ। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনজনের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

শাহজাদপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত হালিমুল হক মীরু, বিএনপির নজরুল ইসলাম (সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে জয়ী) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্র্রোহী প্রার্থী আব্দুর রহিমের মধ্যে।

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক  সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিএনপি দলীয় এজেন্টদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। মঙ্গলবার দুপুরে  দাঁরিয়াপুর মহল্লার বিএনপির কর্মী মাসুদকে  হামলা করে আহত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মীরা বিভিন্নভাবে বিএনপির এজেন্ট ও কর্মীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রহিম জানান, গত সোমবার রাতে তাঁর এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

এ ছাড়া উল্লাপাড়া পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী বেলাল হোসেন নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে কাজীপুর পৌরসভায় বিএনপিদলীয় প্রার্থী মাসুদ রায়হান মুকুল আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *