৭ বছর পর লড়াইয়ে নৌকা-ধানের শীষ

Slider টপ নিউজ

033500Pic-22

 

 

 

 

 

দীর্ঘ সাত বছর পর আজ বুধবার নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে ভোটের লড়াই হতে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এই দুই প্রতীকে।

আজকে পৌরসভা নির্বাচনে উৎসবের আমেজ ছাপিয়ে আশঙ্কার কথাই বেশি শোনা যাচ্ছে। অনেকে বলছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য এ নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে আজকের ভোটের ফলাফলে ক্ষমতার পরিবর্তন না হলেও দেশের দুই প্রধান দলের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। দুই দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।

ভোটের এক দিন আগে গতকাল আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের আচরণে আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেন, ইসি আওয়ামী লীগের প্রতি নির্দয় হয়ে বিএনপির প্রতি অতি সদয় আচরণ করছে। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলও গতকাল সিইসির সঙ্গে দেখা করে ফলাফল পরিবর্তনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, যদি ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে ফলাফল হয়, তাহলে বিএনপি তা মেনে নেবে।

এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনার কারণে প্রতিটি পৌরসভায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ জন সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ ৪৫ হাজার, বিজিবি ৯ হাজার ৪১৫, র‌্যাব আট হাজার ৪২৪, কোস্টগার্ড ২২৫, অঙ্গীভূত আনসার ৪৯ হাজার ৭২৮ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার চার হাজার ৫১২ জন রয়েছেন। আরো আছেন ১২ শতাধিক নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে।

২২ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সরাসরি ভোটযুদ্ধ : আজ যে ২২৭টি পৌরসভায় মেয়র পদসহ অন্যান্য পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার মধ্যে চারটিতে বিএনপির প্রার্থী নেই। এ চার পৌরসভা হচ্ছে—ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, মাদারীপুরের কালকিনি ও শিবচর এবং চট্টগ্রামের চন্দনাইশ। ২২ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে। এগুলোতে অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। পৌরসভাগুলো হচ্ছে—সান্তাহার, কাকনহাট, ভবানীগঞ্জ, উল্লাপাড়া, ঈশ্বরদী, কেশবপুর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, স্বরূপকাঠি, মির্জাপুর, দেওয়ানগঞ্জ, গাফরগাঁও, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, কুলিয়ারচর, ডামুড্যা, চুনারুঘাট, মাধবপুুর, দাগনভূঞা, বাঁশখালী, বারইয়ারহাট ও সন্দ্বীপ।

মেয়র পদে ১৫ নারী : মেয়র পদে মোট ১৫ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন আওয়ামী লীগের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চার, স্বতন্ত্র তিন এবং বিএনপির একজন। তাঁরা হচ্ছেন—পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের জাকিয়া খাতুন, ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের মোছা. তহমিনা আখতার মোল্লা, বদরগঞ্জে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোছা. শামীম আরা বেগম, চারঘাটে আওয়ামী লীগের মোসা. নার্গিস খাতুন, গোপালপুরে (লালপুর) আওয়ামী লীগের রোকসানা মোর্তজা লিলি, নাটোরে আওয়ামী লীগের উমা চৌধুরী, বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের বেগম আশানুর বিশ্বাস, কুষ্টিয়ার মিরপুরে স্বতন্ত্র নাসরিন ফেরদৌস, কালিয়ায় স্বতন্ত্র সোহেলি পারভীন (নিরী), কুয়াকাটায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাবেয়া খাতুন, নরসিংদীতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফারজানা আক্তার, তারাবতে আওয়ামী লীগের হাছিনা গাজী, ভেদরগঞ্জে স্বতন্ত্র তানিয়া বেগম, শায়েস্তাগঞ্জে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির খালেদা বেগম এবং লাকসাম পৌরসভায় বিএনপির শাহনাজ আক্তার।

সাত পৌরসভায় মেয়র পদে ভোট হচ্ছে না : আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সাত পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে না। পৌরসভাগুলো হচ্ছে—পিরোজপুর, মাদারগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, ফেনী, পরশুরাম, চাটখিল ও ছেঙ্গারচর। এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৪০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচনে যত প্রার্থী : নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুসারে ২৩৪ পৌরসভার নির্বাচনে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ৯৪৪ জন। এর মধ্যে সাত পৌরসভায় সাতজন একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ২২৭টিতে এখন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৯৩৭ জন। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুসারে এসব প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাত পৌরসভায় একক প্রার্থীসহ ২৩৪ জন, বিএনপির ২২৩, জাতীয় পার্টির ৭৪, জাসদের ২১, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৭, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫৭, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আট, সিপিবির চার, জাতীয় পার্টির (জেপি) ছয়, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের তিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চার এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, পিডিপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও খেলাফত মজলিশের একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ২৮৫ জন।

২৩৪ পৌরসভায় দুই হাজার ১৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা আট হাজার ৭৪৬ জন। ৭৩১টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই হাজার ৪৮০ জন।

ভোটার ও ভোটকেন্দ্র : তিন হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটকক্ষের সংখ্যা ২১ হাজার ৫৭১। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে একজন করে তিন হাজার ৫৫৫ জন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে একজন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে দুজন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ করবেন ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা। পৌরসভাগুলোতে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ এবং নারী ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন।

উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় বাড়তি নিরাপত্তা : জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে যাতে সহিংসতা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

সাধারণ ছুটি : নির্বাচনের কারণে আজ বুধবার ২৩৪টি পৌরসভায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

দ্রুত ফলাফল পাঠাতে রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশনা : পৌর নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে দ্রুত ফলাফল পাঠাতে রিটার্নিং অফিসারদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত সোমবার বিকেলেই এ বিশেষ নির্দেশনা সব রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *