১২শ’ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

Slider জাতীয়

 

 

untitled-6_181919

 

 

 

 

 

খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সারাদেশের ২৩৩টি পৌরসভার সাড়ে তিন হাজার কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ১২শ’ কেন্দ্রকে, যা মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৩৫ শতাংশ। ইসির এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, পৌর নির্বাচনের পরিবেশ ক্রমে সহিংস ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক পৌর নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে সর্বত্র।

 

ইসির প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগ খুলনায়। চিহ্নিত কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সব দিক বিবেচনায় নিয়েই এসব কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত রাখতে কমিশন বদ্ধপরিকর।’ ভোটারদের নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ও আসার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ইসির ওই প্রতিবেদনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের আগে থেকে এবং নির্বাচনের পরও সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোট গ্রহণের
দিনসহ আগে ও পরে দু’দিন করে মোট পাঁচ দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের মোট ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী থাকায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৩টিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ছয়টি পৌরসভায় একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ২৩৩ পৌরসভায় মেয়র পদে ৯২৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীর বাড়ির কাছাকাছি ছাড়াও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশি সমর্থক আছে এমন কেন্দ্রকে। রাজনৈতিক দলের বিবেচনায় দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নির্বাচন কমিশনের খাতায় ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী। এ ছাড়া নেত্রকোনার ১৩টি ভোটকেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে ওঠার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর উগ্র সমর্থকসহ সুবিধাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাধাসহ ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে।’

তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি টহল টিম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ছয়জন অস্ত্রধারী পুলিশসহ মোট ২০ সদস্যের বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া গত শনিবার ইসির সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বৈঠকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ ও অপেক্ষমাণ বাহিনীর কাজ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিভাগভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এর পরই রংপুর বিভাগের অবস্থান। এই বিভাগের ৩০৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা বিভাগে ৯৯১টির মধ্যে ৩৪৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। রাজশাহী বিভাগের ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৬টি। সিলেট বিভাগের ১৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫টি। বরিশাল বিভাগের ১৬৭ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৩টি আর চট্টগ্রাম বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮০টির মধ্যে ১৬৮টি।

নির্বাচন শুরুর পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারে প্রতিদিন ঘটছে সহিংস ঘটনা। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগেরও অন্ত নেই। শুধু বিএনপির প্রার্থীরাই নন, অনেক স্থানে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীরাও ইসিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ভোটারদের নিরাপদ উপস্থিতি নিশ্চিত করেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সে উদ্দেশ্যেই কমিশন এ তালিকা প্রণয়ন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *