তৈয়ব আলির আনন্দের একদিন

সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

 

2015_12_16_00_34_27_jPR9dpBTwTDaiCjQZ5uhOHVZoS9za0_original

 

 

 

 

 

ফিনিক্স ফ্রেন্ডসের ছেলেমেয়েরা বিগ্রেডিয়ার হাসানের ঘরে ঢুকে হকচকিয়ে গেছে। যিশাকে হতভম্ব দেখাচ্ছে। আলিশান বাড়ি হয় সে শুনেছে। আলিশান ঘর হয় বলে সে জানে না। এখন দেখছে।  সে তাকিয়েছে রাব্বির দিকে। রাব্বি তাকিয়ে আছে টেবিলের উপর রাখা বিশাল কাচের ঘোড়ার পানে। তার চোখ ছানাবড়া।

ডুপ্লেক্স বাড়ির ঘরের মেঝে কাঠের। কী কাঠ সেই সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। মেঝে থেকে আলো ঠিকরে আসছে। ঘরের ভেতর কোনো বাতি দেখা যাচ্ছে না। তবু ঘর আলোময়। ঘরের বাতাসে হালকা শীতল ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। দামি আসবাব আর শোপিসে সাজানো ঘর। রাব্বির মনে হলো বিগ্রেডিয়ার হাসান একজন সৌখিন মানুষ।

তিনি বসে আছেন সোফার উপর। তার ভেতর আয়েশী ভাব। পরনে শ্যাওলা সবুজ রঙের প্যান্ট। গায়ে সাদা টি-শার্ট। বয়স তাকে কাবু করতে পারেনি। এখনো তুখোড় গলফ খেলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। পরে বিগ্রেডিয়ার হয়ে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন পুরোপুরি বিশ্রামে আছেন।

বিগ্রেডিয়ার হাসান আগ্রহ নিয়ে তাকালেন ফিনিক্স ফ্রেন্ডসের ছেলেমেয়েদের দিকে। সকলেই বয়সে তরুণ। তাদের চোখমুখ উজ্জ্বল। দেখতে ভালো লাগছে। বিগ্রেডিয়ার হাসান তাদের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। তিনি তাদের বসতে বলেছেন। তারা সারিবদ্ধভাবে বসে পড়ল। তিনি বললেন, বলো, কী বলতে এসেছ। রাব্বি বলল, আমরা সবাই স্টুডেন্ট। ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। বিভিন্ন ভার্সিটিতে। বন্ধু বলতে পারেন। কিংবা সহযোদ্ধা। মাঝেমধ্যে আমাদের দেখা হতো। কারও কারও সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ। এখন আমরা নিয়মিত দেখা করি। আমরা ঠিক করেছি সবাই মিলে কিছু করব।
কী করবে?
ওরা দুই তিনজন একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। তারপর সবাই একসঙ্গে থেমে গেছে। আবার হুট করে একসঙ্গে কথা বলে উঠল। বিগ্রেডিয়ার হাসান হেসে ফেললেন। তিনি যিশার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি বলো।
যিশা বলল, ১৯৭১ সালে আপনাদের মতো কয়েকজন মানুষ হাতের মুঠোয় জীবন বাজি রেখেছিলেন। এই দেশকে একটা লাল-সবুজ পতাকা এনে দিয়েছেন।
রাব্বি বলল, তাদের অন্তত কয়েকজনের মুখে হলেও আমরা হাসি ফোটাতে চাই।
উৎস বলল, আমাদের স্বপ্নগুলো হয়তো খুব ছোট। তবে ঠিক ছোট না। অনেক বড়।
যিশা বলল, আমাদের সামর্থ কম। আমরা যতখানি পারি করব। যতজন মুক্তিযোদ্ধার দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নেব।
বিগ্রেডিয়ার হাসানের ভালো লাগছে। তিনি কৌতুহল নিয়ে তরুণদের কথা শুনছেন। একটি দেশ মানে শুধু একটি পতাকা নয়। আরও অনেককিছু। তিনি সেই আলোচনায় গেলেন না। তাদের ভেতর আবেগ আছে। তারা খলবল করে কথা বলছে। তিনি শুনে আনন্দ পাচ্ছেন। আগ্রহ নিয়ে বললেন, আমার কাছে কেন এসেছ?
আমরা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করতে চাই। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। ‘মুক্তিযোদ্ধা’ এই অহংকারমাখা উপাধি ছাড়া তাদের আর কোনো সম্বল নেই। জীবনের শেষ বেলায় এসে তাদের পরিবারের জন্য আমরা একটুখানি নিশ্চয়তা দিতে চাই।
আপনাকে যেতে হবে আমাদের সঙ্গে। আমরা একজন মুক্তিযোদ্ধার নড়বড়ে ঘর ঠিক করে দেব। তিনি ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেন। আমরা বাজারে তাকে একটা স্থায়ী দোকান করে দেব।
যারা এই দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের প্রতি এই দায়টুকু আমাদের আছে।
বিগ্রেডিয়ার হাসান বললেন, আমি যাব। কোথায় যেতে হবে?
যিশা বলল, আপনি যেখানে যুদ্ধ করেছেন। ২নং সেক্টরের একটি গ্রামে।
বিগ্রেডিয়ার হাসান রাজি হলেন।

নয়নপুর ইশকুল মাঠে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। বিগ্রেডিয়ার হাসানকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে। তিনি প্রবল আবেগে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকদিন পর এখানে এসেছেন। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এখানে ছিলেন। মেজর খালেদ মোশাররফ আর ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দারের সঙ্গে এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে সফল গেরিলা অপারেশন চালিয়েছেন।

সেইসব দিনের কথা মনে পড়ছে। তার চোখ ঝাঁপসা হয়ে এসেছে। তিনি চোখ থেকে চশমা নামালেন। মাথা খানিকটা ঝুঁকিয়ে নিচে নিয়ে এলেন। আলতো করে রুমালে চোখ মুছলেন।সামনে কয়েকশ’ মানুষ। তারা এসেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানাতে। নয়নপুর অনেক বড় গ্রাম। এখানে বিনোদনের অভাব নেই। শীত এলেই নানারকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সার্কাসের দল আসে। মানুষজন টিকিটি কেটে সার্কাস দেখে। মেলা হয়। গ্রামের ছেলেরা উৎসাহ নিয়ে নাটক করে। তবু মানুষ বিনোদনের কিছু পেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মাইকে দেশাত্ববোধক গান বাজছে। মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। মাঠের পাশে ছোলা ভাজা, পাপড় ভাজা আর খেলনার দোকান বসে গেছে।  মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কিছুক্ষণের ভেতর অনুষ্ঠান শুরু হবে। এলাকার মানুষজন অপেক্ষা করছে।

বিগ্রেডিয়ার হাসান সামনের দিকে তাকিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। মাঠের উত্তর পাশ দিয়ে একজন মানুষ হেঁটে আসছে। সে হাঁটছে দুলে দুলে। তার কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলছে। ব্যাগটা ভারী। প্রায় মাটি ছুঁয়েছে। তাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে। তিনি চিনতে পারছেন না। তার অস্বস্তি বাড়ছে। তিনি প্রবলভাবে এই মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করছেন। বেঁটেখাটো মানুষটা তার ভীষণ পরিচিত। কিন্তু সে কে মনে করতে পারছেন না। তার মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করেছে।

সেই মানুষটা সামনে এসে মুখে আলো ছড়িয়ে হাসল। তার হাসি সুন্দর। তাকে দেখতে সুন্দর লাগছে। সে বলল, স্যার ভালো আছেন?
অমনি বিগ্রেডিয়ার হাসানের মনে পড়ে গেল এই মানুষটার নাম তৈয়ব আলি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ছিল নিতান্ত কম বয়সের একজন ছেলে। ক্যাপ্টেন হায়দারকে গিয়ে বলল, স্যার আমাকে একটা এলএমজি দেন।
তার কথায় আঞ্চলিক টান ছিল। ক্যাপ্টেন হায়দার হাসলেন। হাসিমুখে বললেন, এলএমজি কি চাইলেই পাওয়া যায়? তাছাড়া এটাকে সহজে লুকানো যায় না। এখনো কোনো গেরিলাকে এলএমজি দেওয়া হয়নি।
যুদ্ধ করব স্যার সিংহের মতো। অস্ত্র লুকাব কেন? আপনি স্যার ইচ্ছে করলেই দিতে পারেন। আপনার কাছে কত অস্ত্র। আমাকে শুধু একটা এলএমজি দেন। মাত্র একটা স্যার।
ক্যাপ্টেন হায়দারের ঠোঁটে নতুন চাঁদের মতো হাসি। তৈয়বের আগ্রহ দেখে তার ভালো লাগছে। তিনি বললেন, আচ্ছা বেশ। আগে যুদ্ধ কিছু করো। তারপর এলএমজি পাবে।
তিনদিন পর তৈয়ব আলি ক্যাপ্টেন হায়দারের সামনে এসে হাজির। সে খালি হাতে আসেনি। তার হাতে গামছা। তাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনের র‌্যাংক ব্যাজ, বেল্ট, টুপি, বুট আর পিস্তল। তৈয়ব আলি সেগুলো ক্যাপ্টেন হায়দারের সামনে রেখে বলল, স্যার যুদ্ধ করে এনেছি। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন শেষ। এইবার আমাকে এলএমজি দেন।
বিগ্রেডিয়ার হাসানের চোখ আবার ঝাঁপসা হয়ে এসেছে। তিনি বললেন, তৈয়ব আমি ভালো আছি। তোমার শরীর এখন কেমন? কী করছ?

যুদ্ধের আগে মাথায় ঝুড়ি নিয়ে তরকারি বিক্রি করতাম। এখনো তাই করি। দিনকয়েক আগে কয়েকজন ছেলেমেয়ে এসে অনেক কথা জিজ্ঞেস করল। সেইসব কথা তারা খাতায় লিখে নিল। আমাকে বাজারে একটা দোকান করে দেবে বলেছে।
বিগ্রেডিয়ার হাসানের অস্থির লাগছে। তারা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। সেদিন গোলার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারতেন। তারা অদ্ভুতভাবে বেঁচে আছেন। মরতে মরতে বেঁচে গেছেন। তৈয়ব আলি একদিন ক্যাপ্টেন হায়দারকে বলল, আমাকে একটা মর্টার দেন।
ক্যাপ্টেন হায়দার বললেন, আচ্ছা বেশ। মর্টার তুমি পাবে। বলো তো ২ ইঞ্চি মর্টারের গোলা কতদূর যায়?
তৈয়ব আলি চারশ’/সাড়ে চারশ’ গজ দূরের একটা চারাগাছ দেখিয়ে বলল, স্যার ওই পর্যন্ত যাবে।
ক্যাপ্টেন হায়দার হাসছেন। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, যদি বলতে পারো কিভাবে মারলে গোলা ওই পর্যন্ত যাবে তাহলে তোমাকে মর্টার দেওয়া হবে।
বাম হাত আড়াআড়ি রেখে ডান হাত তার উপর বাঁকা করে তৈয়ব আলি বলল, শোয়ায়ে না। আবার খাড়া করেও না। ঠিক এইরকম করে মাঝামাঝি স্যার।
নির্ভুল উত্তর। সে হাত দিয়ে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাংগেলের কথা বলেছে। যেভাবে মর্টারের গোলা ছোড়া হয়।

আয়োজকরা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে। সকলকে শান্ত হয়ে বসতে বলা হচ্ছে। যিশা এসে তৈয়ব আলিকে বিগ্রেডিয়ার হাসানের পাশে বসিয়ে দিয়ে গেছে। তৈয়ব আলি বসে আছে বিগ্রেডিয়ার হাসানের বামপাশে। ডানপাশে বসে আছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এলাকার আরও গণ্যমান্য অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন।
তৈয়ব আলি ফিসফিস করে বলল, স্যার আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলব। খালেদ স্যারকে তো পাব না। হায়দার স্যারও নেই। আপনিই ভরসা।
বিগ্রেডিয়ার হাসান বিস্মিত হয়েছেন। তার বলার সুরে অন্য কিছু আছে। তৈয়ব আলি কী বলতে চাইছে তিনি বুঝতে পারছেন না।
তৈয়ব আলি আগের মতো ফিসফিস করে বলল, আপনাদের মিলিটারি বড় যন্ত্রণা করে।
বিগ্রেডিয়ার হাসান চমকে উঠেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী ছিল বাংলাদেশের জনগণের। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। এই দেশ মুক্ত করেছে। আজ সেনাবাহিনী জনগণের কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়েছে। তৈয়ব আলি বলছে, আপনাদের মিলিটারি!
তৈয়ব আলি বলল, তাদের ধারণা আমার কাছে অস্ত্র লুকানো আছে। ওদের কোনো দোষ নেই। জিনিস আমি একটা লুকিয়ে রেখেছি। সেটা কোনোদিন কাউকে দিইনি। এখনো দেব না। সেটা আমার কাছে থাকবে।
বিগ্রেডিয়ার হাসানের ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়েছে। তার মনে হচ্ছে হঠাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেছে। মাথায় বিনবিনে ঘাম। এতদিন ধরে একজন মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে! তাও আজ তাকে সাক্ষি মেনে সেই অস্ত্র নিজের কাছে রেখে দিতে চাইছে। ঘটনা ভালো হচ্ছে না।
বিগ্রেডিয়ার হাসান বুকের ভেতর লম্বা শ্বাস টেনে নিলেন। তৈয়ব আলি বলল, আপনি আর্মির বড় অফিসার। মন্ত্রী ছিলেন। আপনি বলে দিলে ওরা কেউ আমার কাছ থেকে এই জিনিস নিতে পারবে না।
বিগ্রেডিয়ার হাসান বুঝে উঠতে পারছেন না তৈয়ব আলি কী লুকিয়ে রেখেছে। তিনি পাশে রাখা কাপড়ের ব্যাগের দিকে তাকালেন। তার অস্থির লাগছে। রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছেন।

তৈয়ব আলির এলএমজির সখ ছিল। সে ক্যাপ্টেন হায়দারের কাছে মর্টার চেয়েছিল। বিগ্রেডিয়ার হাসান ধন্দে পড়ে গেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কী করবেন। তৈয়ব আলি যদি নিজের কাছে মেশিনগান বা রিকয়েললেস রাইফেল রেখে দেয়? নাহয় এনারগা-৯৪ গ্রেনেড। পুলিশকে জানানো দরকার। লোকাল থানাকে ইনফর্ম করতে হবে।

ঘটনা কী ঘটতে পারে তিনি অনুমান করতে পারছেন না। কোনো কারণে তৈয়ব আলি ভায়োলেন্ট হয়ে উঠতে পারে। নিজের কাছে নিজেকে বোকা লাগছে। তিনি কোনো প্রটেকশন নিয়ে আসেননি। ছেলেমেয়েদের কথা শুনে হুট করে চলে এসেছেন। বিগ্রেডিয়ার হাসান অসহায় চোখে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দিকে তাকালেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে শহর থেকে আসা ফিনিক্স ফ্রেন্ডসের ছেলেমেয়েদের কর্মকা- দেখছেন।

তৈয়ব আলি বলল, আপনি আসবেন শুনে স্যার জিনিসটা সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
মঞ্চে কয়েকজন ছেলেমেয়ে কোরাস গাইছে। তাদের গলায় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গান। মাগো ভাবনা কেন/ আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে/ তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি/ তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।
তৈয়ব আলি ব্যাগের ভেতর থেকে একটা মিটার বের করেছে। সে সেটা বিগ্রেডিয়ার হাসানের দিকে এগিয়ে দিল। জাহাজের দিক নির্দেশক জাইরোকম্পাসের রিপিটার। অতি সামান্য জিনিস।
ফস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিগ্রেডিয়ার হাসান বললেন, এই কম্পাস দিয়ে কী হবে?
বড্ড ভুল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে পথ খুঁজে পাই না। কম্পাস রেখে দিয়েছি। নাতি নাতনিরা এর কাঁটা দেখে পথ খুঁজে নেবে সেই আশায়। এই কম্পাস নিয়ে গেলে আমার আর কী থাকে?
বিগ্রেডিয়ার হাসান জাইরোকম্পাসের রিপিটার তৈয়ব আলির হাতে ফিরিয়ে দিলেন। তিনি ভরসা দেওয়া চোখে বললেন, তোমার কাছ থেকে এই কম্পাস কেউ নেবে না।

তিনি জানেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলির কাছে যুদ্ধের এই স্মারক তার গর্বের প্রতীক।
গান শেষ হয়েছে। মাইকে মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলির কথা বলা হচ্ছে। বিগ্রেডিয়ার হাসান উঠে দাঁড়িয়েছেন। উঠে দাঁড়িয়েছে তৈয়ব আলি। বিগ্রেডিয়ার হাসান তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। মঞ্চে উপবিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সামিয়ানার নিচে, আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত শত মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছে। তারা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানাচ্ছে।
তৈয়ব আলি কাঁদছেন। তার চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে দুই গালে। চোখের পানিতে গাল ভিজে উঠেছে। আজ তার বড় আনন্দের দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *