পচা ডিমের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার

Slider বিচিত্র

 

2015_12_18_19_13_08_Ift3LcdDkm4IGw0m919O3PdiUdrq1b_original

 

 

 

 

কয়েকশ বছর আগে বিশেষ ধরনের এক মুখরোচক খাবার উদ্ভাবন করে চীনের গ্রামীণ মানুষেরা। চীন, তাইওয়ান এবং হংকংয়ে এখনও বিপুল জনপ্রিয় খাবারটি। এছাড়া প্রচলিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও। এর নাম ‘সেঞ্চুরি এগ’ বা শত বছরের ডিম।

চীনের শিশুরা বেড়ে ওঠে এই খাবারটি খেয়েই। প্রথমে খেতে না চাইলেও পরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। দেশটির মুদি দোকান থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, সব জায়গায়ই পাওয়া যায় খাবারটি। অনেকে একে বলেন, হান্ড্রেড ইয়ার এগ, থাউজ্যান্ড ইয়ার এগ। আবার অনেকে বলেন, মিলেনিয়াম এগ।

সেঞ্চুরি এগের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ৫০০ বছরেরও বেশি সময় আগে চীনের মিং শাসনামলে এই খাবারটি উদ্ভাবন করা হয়। তবে ডিমটির প্রস্তুতি ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া রয়ে গেছে প্রায় আগের মতোই।

ডিমটি প্রস্তুতের জন্য প্রথমে একটি বড় পাত্রে কড়া রঙ চা, চুন, লবণ এবং ছাইয়ের মিশ্রণ এক রাত রেখে দেয়া হয়। পরের দিন হাঁস, কোয়েল অথবা মুরগির ডিম ওই মিশ্রণের সাথে যুক্ত করা হয় এবং সাত সপ্তাহ থেকে পাঁচ মাস সময়ের জন্য তা পুনরায় রেখে দেয়া হয়।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরপর উজ্জ্বল কমলা কুসুমের সাদা ডিমটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এর রঙ হয়ে যায় ঘন বাদামি আর হালকা সবুজ। অনেকটা ঘোড়ার মূত্রের মতো তীব্র আর ঝাঁঝালো গন্ধের কারণে অনেকে একে বলে থাকেন ‘হর্স ইউরিন এগ’। অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত করার পর এটিকে পচা ডিম বলেই মনে হয়।

৫৫ বছর বয়সী সিএল চ্যান বলেন, ‘আমার মনে আছে, আমার বাবা যখন আমাকে সেঞ্চুরি এগ খেতে দিয়েছিলেন, তখন খুব বাজে গন্ধ আসছিল। তবে আস্তে আস্তে আমার অরুচি দূর হয়ে যায় এবং আমি বুঝতে পারি, এটা একটা ভালো খাবার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমর যখন দাঁতে ব্যথা হতো, আমার মা আমাকে নরম ভাতের সাথে সেঞ্চুরি এগ খেতে দিতো। আর আমার দাঁতের ব্যথা ভালো হয়ে যেতো।’

প্রথমে কয়েকশ বছর ধরে খাবারটি শুধু গ্রামাঞ্চলে দেখা গেলেও ১৯৪০ সালে চীনের গৃহযুদ্ধে অনেক রাঁধুনী শহরে চলে আসেন। তারা সঙ্গে করে আনেন ঐহিত্যবাহী ওই খাবার।

ইউংকি রেস্টুরেন্টের পরিচালক ক্যারেল ক্যাম বলেন, ‘অনেক সময় বিদেশিরা খাবারটি খুঁজতে আসেন। তবে এটার রঙ আর গন্ধে বিরক্তবোধ করেন। ব্যাপারটি আসলে মানসিক। গন্ধটি বাজে হলেও খাবারটি অসাধারণ।’

তবে খাবারটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন হ্যাং হুং কেক শপের নির্বাহী ব্যবস্থাপক ক্জু লিউং। তিনি বলেন, ‘সময় পরিবর্তিত হচ্ছে। এই খাবরাটির প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহও দিন দিন কমে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও সম্ভবত তা আরো কয়েক শতক টিকে থাকবে। যারা আমাদের কাছে এই খাবারটির জন্য আসে তাদের আমরা ছোটবেলার স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে চাই না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *