মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে নির্বিকার ইসি

Slider জাতীয়

untitled-9_178546

 

 

 

 

 

 

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মেতেছে মাঠ প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রের নির্দেশের যথাযথ প্রতিফলন ঘটছে না মাঠ পর্যায়ে। মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় ইসি। অনেক স্থানেই তাদের বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠছে। এসব অভিযোগ কমিশনের কাছে দেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নির্বিকার। জানতে চাইলে কমিশনের একাধিক সদস্য বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে আপিল কর্তৃপক্ষ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল ছাড়া কমিশনের কাছে আবেদনে কোনো লাভ নেই। তারা আরও বলেন, প্রার্থী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও ভোটার সবাই মিলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। শুধু কমিশন চেষ্টা করে খুব একটা লাভ হবে না।

তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। দু’একটি স্থানে নির্বাচন স্থগিত করে দিয়ে কমিশনের তদন্ত করা উচিত। তাহলেই অন্য সব কর্মকর্তার মধ্যে সাহসের সঞ্চার হবে। অন্যথায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ইসি। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এবার প্রথম সর্বাধিক ৬১ ইসি কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এতে বিশেষ কোনো সুফল মেলেনি। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ আসছে কমিশনের কাছে। গতকাল সোমবার ইসি কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে (সিইসি) অন্য কমিশনারদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকেও এসব
বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
এর আগের নির্বাচনগুলোতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও এবার মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই প্রক্রিয়াতেই গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা, চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভা, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর পৌরসভা, কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভা, মাগুরা সদর পৌরসভা ও হবিগঞ্জের একাধিক পৌরসভায় মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গতকাল কমিশনে জমা হয়েছে।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম লটু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাছাইয়ের দিনে বিরোধী পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা নির্বাচন অফিসার) দ্রুত ফোনে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। কমিশনের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে তার পদত্যাগ দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিশনের তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জেলা প্রশাসকের কাছে ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার পরে পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়েছে। তারপরেও আমিনুল ইসলামের প্রার্থিতা বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উপজেলা) শৈরেন্দ্র নাথ দত্ত সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, উপজেলা আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পদত্যাগপত্র দিতে হবে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অথবা সরাসরি দেওয়া যাবে। তবে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের।
চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেবাশীষ পালিত হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়ার পরেও মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগদলীয় একজন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী গতকাল সংসদ সদস্য মনোগ্রাম সংবলিত গাড়ি নিয়ে কমিশনে এসে এ অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর পৌরসভার মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কমিশনে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সনদের কপি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলেও বাছাইকালে তার এসব ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় একজন মন্ত্রীর নির্দেশনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা এসব কর্মকাণ্ড করছেন বলে সমকালের সঙ্গে আলাপে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদিন।
মাগুরা সদর পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খুরশিদ হায়দার টুটুলের বিরুদ্ধে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়ার পরেও তার প্রার্থিতা বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। জেলা সদরের পৌরসভা হিসেবে এখানে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)। অভিযোগ উঠেছে, শুধু নির্ধারিত ছকের বাইরে সই চলে যাওয়ার মতো ছোটখাটো ভুলেও ওই পৌরসভায় বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ইচ্ছুক মোশাররফ হোসেন বাধার কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট পরে রিটার্নর্িং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পেঁৗছলেও তার মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়নি। তিনি গত শুক্রবার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কমিশন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানানোর কারণে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত তিন দিনের মধ্যে তার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল কমিশন সভায় তার ওই আবেদন নাকচ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। কমিশন এর বাইরে আর কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি।
এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সমকালকে বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে তিন দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে। পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক শুনানির মাধ্যমে এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করবেন। এসব ক্ষেত্রে কমিশনের কিছু করার নেই। আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রকল্প না দিতে ইসির চিঠি :পৌর নির্বাচন শেষ না হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো যেন উত্থাপন না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন-পূর্ব সময় বলতে তফসিল ঘোষণা হতে ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ না হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *