ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা এবং নির্ধারিত তারিখে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাই কোর্ট সরকারকে সাক্ষী সুরক্ষা আইন করার নির্দেশ দিয়েছে, যে দাবি অনেকদিন ধরেই করে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন।
স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
সাক্ষী সুরক্ষা আইনে নির্ধারিত তারিখে সমন পাওয়ার পরও সাক্ষী উপস্থিত না হলে সে বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর এবং পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিধি রাখতে বলেছে আদালত।
যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালে গত কয়েক বছরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। ২০১৩ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও এ আইনের বিষয়ে সরকারকে তাগিদ দেয়।
আর এবার এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা এলো ২০১০ সালের একটি হত্যা মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার প্রেক্ষাপটে।
ওই বছর ১৩ জুন যাত্রাবাড়ি থানার উত্তর কুতুবখালীতে রিংকু নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর নিহতের ভগ্নিপতি নাহিদ হাসান যাত্রাবাড়ি থানায় হীরা ওরফে হারুনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তার হীরাকে ওই বছরের ১২ জুলাই বিচারিক আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
ওই মামলায় নিম্ন আদালতে হীরার জামিন আবেদন না মঞ্জুর হলে চলতি বছরের ১১ নভেম্বর হাই কোর্টে তিনি জামিনের আবেদন করেন। আবেদনকারীপক্ষ জানায়, এ মামলায় গত ছয় বছরে একজনও সাক্ষ্য দেননি।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন, যা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
গত সপ্তাহে আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে এ বিষয়ে জানাতে সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে এবং ৭ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট পিপিকে আদালতে উপস্থিত হতে বলে।
এর ধারাবাহিকতায় ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান রচি সোমবার আদালতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির। জামিন আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ।
পরে আসাদুজ্জামান রচি বলেন, “ওই মামলায় চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি সাক্ষী উপস্থিত করা হলেও হরতাল থাকার কারণে আসামি না আসায় সাক্ষ্য হয়নি। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রয়েছে, ওইদিন সাক্ষী আসবে।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মনিরুজ্জামান কবির বলেন, আদালত হীরার জামিন আবেদন নাকচ করে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতে ও সুরক্ষায় ওই নির্দেশনা দিয়েছে।