‘যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার নিজামীর’

Slider জাতীয়

 

Nijami_banglanews24_141968202

 

 

 

 

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর আবেদন জানিয়েছেন তার আইনজীবী। নিজামীর আপিল মামলার শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এ আরজি জানান তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

এ ঘটনাটি জানিয়ে এই প্রথমবারের মতো আদালতে জামায়াতের কোনো শীর্ষনেতার পক্ষে তার আইনজীবী একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করলেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বুধবার (০২ ডিসেম্বর) আপিল শুনানির নবম কার্যদিবসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যুক্তিতর্ক শেষ করেন আসামিপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আগামী ০৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার দিন ধার্য রয়েছে।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেছেন, ‘একাত্তরে হত্যা-গণহত্যা হয়েছে। তারা সহযোগিতা করেছেন। নিজামী নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে এ কাজগুলো করেছেন। এগুলো যদি তিনি করেও থাকেন, তাহলেও বয়সের কথা চিন্তা করে যেন তাকে চরম দণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া হয়’।

যুদ্ধাপরাধের কোনো মামলায় এই প্রথম জামায়াতের কোনো শীর্ষনেতার প্রধান আইনজীবী অপরাধ স্বীকার করে নিলেন। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে অব্যাহতি পেতে আবেদন জানিয়েছেন খন্দকার মাহবুব।

প্রথমদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। অর্থাৎ নিজামীর পক্ষের আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য বুধবার সমাপ্ত করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে আমাকে আগামী ০৭ ডিসেম্বর একটি দিন ধার্য করা হয়েছে আমার বক্তব্য প্রদানের জন্য।

অ্যার্টনি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, বক্তব্য শেষ করার শেষ প্রান্তে তারা (আসামিপক্ষ) যেটা বলেছেন, তাদের শীর্ষ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘এটাতো ঐতিহাসিক ঘটনা যে, খুন বা মানুষ হত্যা এগুলো হয়েছে। এবং এগুলোর সঙ্গে জামায়াত সে সময় সহযোগিতাও করেছে। মতিউর রহমান নিজামী তার বিশ্বাস থেকেই এগুলোকে সমর্থন করেছেন’।

শেষ মুহূর্তে তিনি (খন্দকার মাহবুব) বলেছেন, ‘এগুলো যদি করেও থাকেন, তবুও বয়সের কথা চিন্তা করে তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করছি’ বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম মন্তব্য করেন, ‘তারা সাবমিশন যা করেছেন, আমি যা বুঝেছি, তাতে আমার মনে হল, জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের শীর্ষ আইনজীবীরা এই প্রথম তাদের একজন অভিযুক্ত নেতা যে অপরাধী সেটা স্বীকার করে নিলেন এবং স্বীকার করে নিয়ে শুধু মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন। এটা আমি যা বুঝেছি সেটিই আপনাদের বললাম’।

‘ফৌজদারি মোকদ্দমায় এটা একটা আসামি বিকল্প আগুমেন্ট সব সময় করতে পারে। তারা ফ্যাক্টের ব্যাপারে অস্বীকার করে আবার অল্টারনেটিভলি এ কথাও বলতে পারেন, হ্যাঁ, এগুলো করেছেন ঠিকই। তারপর আমি মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাই’।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘জামায়াতের মামলার ব্যাপারে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের থেকে দোষ স্বীকার করে নেওয়ার ব্যাপারে এরকম স্পষ্ট বক্তব্য আমি এই প্রথম দেখলাম। দোষ স্বীকার করে নেওয়ার অর্থ হল, তাদের বক্তব্যের ভেতরে তারা বলেছেন, হ্যাঁ, ঘটনাগুলো ঘটেছে, তারা (যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার-আলবদররা) এগুলোর ভেতর যুক্ত ছিলেন, এটা আজকে ঐতিহাসিক সত্য। তারপরও তারা এটা করেছেন তাদের বিশ্বাসের থেকে। তাই এখন যেহেতু তার (নিজামীর) বয়স হয়ে গেছে ৭৩-৭৪ বছর, তাকে ফাঁসি দিয়ে কী হবে, অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।

অপরাধ স্বীকারের এ রকম স্পষ্ট বক্তব্য এটাই প্রথম বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সাজা বাড়ানো-কমানো আদালতের ব্যাপার। তবে সাজা কমবে- এটা আমি বিশ্বাস করি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *