চট্টগ্রাম : বাংলাদেশের আদর্শ বিবর্জিত পথভ্রষ্ট রাজনীতির এই যুগে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের রাজনীতিতে অটুট বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে আজীবন লড়ে যাওয়া আলহাজ শাহজাহান শিকদার কি এবার মূল্যায়িত হতে যাচ্ছেন? স্থানীয়দের প্রত্যাশা রাজনৈতিক ত্যাগ ও দলীয় ভূমিকার কারণে হয়তো এবার দলীয় সভানেত্রী রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র পদে নৌকা প্রতীক দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করতে যাচ্ছেন! সারা জীবন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাঙ্গুনিয়ার মানুষের পাশে থেকে সেবা করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে মাঠ থেকে ঘাটে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন তিনি। সমাজ সেবার এই কাজটি আরো বৃহৎ ফ্লাটফরম থেকে করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শাহজাহান শিকদার। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র পদে মনোয়ন পেতে তার একাজে সাহস ও সমর্থন যুগিয়ে চলছেন রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার জনগণ, আওয়ামী পরিবারের সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
সব মিলিয়ে দল ও রাঙ্গুনিয়ার মানুষের জন্য বারবার নির্যাতিত হওয়া, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তির হাতে আক্রান্ত হওয়া শাহজান শিকদার এবার চূড়ান্তভাবে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাবেন এমন প্রত্যাশা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্যদের। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে ও স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথার পর জানা গেছে, দলের অতীত কর্মকাণ্ড ও ত্যাগী ভূমিকার কারণে শাহজাহান শিকদারকে মূল্যায়ন করা উচিত। আর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেবেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। হামলা মামলায় বিপর্যস্ত হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আজীবন লড়ে যাওয়া সংগ্রামী এই সৈনিক এবার রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন পাওয়ার মাধ্যমে তিনি মূল্যায়িত হবেন বলে আশা করছেন তার ভক্ত অনুসারী নেতাকর্মীরা।
তবে বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও আলহাজ শাহজাহান সিকদার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি আজীবন বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আর্দশের চর্চা করেই রাঙ্গুনিয়ার মাঠ-ঘাট চষে বেড়িয়েছি। এখনো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ও জননেত্রীর জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গঠনের একজন কর্মী হিসেবে আমার অবস্থান থেকে কাজ করতে চাই। আর সেজন্য ব্যক্তিগত অবস্থানের চেয়ে দরকার একটি নির্বাচিত কোনো ফ্লাটফরম। রাঙ্গুনিয়ার পৌরসভার আওয়ামী পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় জনগণ আমার রাজনৈতিক ত্যাগ, পারিবারিক অবস্থান এবং তাদের একান্তই আপনজন হিসেবে আমাকে তাদের পৌর মেয়র পদে চাইছেন। আমিও তাদের আগ্রহের প্রতি সম্মান জানিয়ে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়তে আগ্রহী। এখন দলের সিনিয়র নেতা ও আমার নেতা রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ এবং আমার আদর্শিক নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমার শিরধায্য।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যাললের অধীনে স্নাতক পাশ করা আলহাজ শাহজাহান শিকদার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সংগীত, ক্রীড়া, মঞ্চ অভিনেতা, বিতার্কিক হিসেবে রাঙ্গুনিয়া তথা উত্তর চট্টগ্রামে সমানভাবে সমাদৃত। পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত শাহজান শিকদার ১৯৭৩ সালে রাঙ্গুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যয়নকালে প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাঙ্গুনিয়ার সাবেক সাংসদ ও ফাঁসির দঁড়িতে ঝোলা যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিরোধী অবস্থান গ্রহণ ও আন্দোলন করতে গিয়ে বারে বারে গভীর ষড়যন্ত্র ও রোষানলের শিকার হয়েছেন শাহজাহান শিকদার। আওয়ামী লীগের দু:সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত শাহজাহান বঙ্গবন্ধুর আর্দশের মশাল হাতে নিয়ে চলতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের আমালে বরাবরই হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। এরপরও তাকে একচুলও সরাতে পারেনি। এতো নির্যাতনের পরও জামায়াত-বিএনপিবিরোধী শক্তি হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে সক্ষম হওয়ায় রাঙ্গুনিয়ার মাটিতে সেই অপশক্তি তাকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছিল।
তারই অংশ হিসেবে বিএনপি আমলে ২০০২ সালে ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে যৌথবাহিনী শাহজাহান শিকাদারকে গ্রেপ্তার করে। এসময় চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাকে নিয়ে চরম নির্যাতন চালানো হয়। দুইদিন পর মুমূর্ষু অবস্থায় যৌথবাহিনী তাকে আদালতে সোপর্দ করে। এরপরও দমবার পাত্র নন তিনি। ৪৫ দিনের মাথায় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আবারও জামায়াত-জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর আর্দশের এই সৈনিক।
যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রক্তচক্ষু ও পেশীশক্তির রাজনীতিকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে নিয়ে চলেছেন তিনি। তারই পরিনাম হিসেবে এক সময়ের ত্রাস সাকা চৌধুরীর ক্যাডার বাহিনী স্থানীয় রোয়াজারহাট বাজারে শাহজাহান সিকদারের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। অগ্নিসংযোগ করা হয় তার পরিবারের অন্য সদস্যদের গাড়িতেও। তাদের উপরও চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। এরপরও তাকে দমাতে না পেরে সেই অপশক্তিটি বেছে নেয় মামলা-হামলা ও হুলিয়ার পথ। একে একে ৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। এতো মামলা হামলার পরও আজ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের পতাকা বাহুতে নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার পথ-ঘাট চষে বেড়িয়ে চলছেন রাঙ্গুনিয়া আওয়ামী লীগের প্রভাশালী ও পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত আলহাজ শাহজাহান শিকদার।
এক-এগারোর সময় দেশে যখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর অসহনীয় অত্যাচার, নিপীড়ন চলছিল, তখন শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল অনেকে। তখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতা যখন প্রকাশ্যে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন, আবার তখনই প্রকাশ্যে রাজপথে এসে রাঙ্গুনিয়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে শেখ হাসিনা বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে সদা স্বোচ্ছার ছিলেন এই শাহাজান শিকদার। আর এটি করতে গিয়ে তাকে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের রক্তচক্ষু ও হুমকি-ধমকির মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা মুক্তি-আন্দোলন থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটিনি এই সাহসী যুদ্ধা।
সর্বশেষ গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রাঙ্গুনিয়ার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ড. হাছান মাহমুদ যখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আসেন তখন এই শাহজাহান শিকদারই সক্রিয়ভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে পড়েন। প্রতিপক্ষ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে বহিরাগত সেন্টিমেন্ট, যুদ্ধাপরাধ ইস্যু সামনে এনে রাঙ্গুনিয়ার সর্বস্তরের মানুষকে সংগঠিত করে ড. হাছান মাহমুদ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এরপর ২০১৩-১৪ সালে সারা দেশে যখন বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও পোড়াও করছিল। কিন্তু ডা.হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে এই রাঙ্গুনিয়ায় কোনো ধরণের নাশকতা হয়নি। যার জন্য সদা মাঠে থেকে পাহারা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে শাহজাহান শিকদারের নামটি অন্যতম। এতো কিছুর পরও দল ও দলীয় সভানেত্রীর প্রতি অগাধ আনুগত্য ও শ্রদ্ধার কারণে প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি গত পৌর নিবাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। যার কারণে এক সময়ে সাকার ঘাটি হিসেবে পরিচিত রাঙ্গুনিয়াতে এমপি পদের পর পৌর মেয়র পদেও বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার শাহজাহান শিকাদরকে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘গতবার প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও আমি দলের প্রতি, নেত্রীর প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। এবারও নেতাকর্মীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে আমি প্রার্থী হতে আগ্রহী। দলের সিনিয়র নেতারাও আমাকে আর্শিবাদ করেছেন। এখন যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে জননেত্রী তার একজন কর্মী হিসেবে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়ে আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দেন তাহলে আমি কথা দিচ্ছি বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি নেত্রীকে আমার মেয়রশিপ উপহার দিতে পারব।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘শাহজাহান শিকদার জেলা কমিটিতে আমার রাজনৈতিক সহকর্মী। দলের দু:সময়ে তার অবদান রয়েছে। ঠিক তেমনি রাঙ্গুনিয়ায় আরো বেশ কয়েকজনও মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে সবার সাথে কথা বলে একজনকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেয়ার জন্য সুপারিশ করে দলীয় সভানেত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। এখন তিনিই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন।’