পৌর নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে উষ্ণ হচ্ছে জাতীয় রাজনীতি

Slider জাতীয়

 

untitled-3_171654

 

 

 

 

পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিরে উষ্ণ হয়ে উঠছে জাতীয় রাজনীতিও। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে এই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বলে দলের নেতারা বলছেন।
এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও (জাপা) এককভাবে পৌর নির্বাচনে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না থাকলেও জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে গতকাল মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মেয়র পদপ্রার্থীরা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন করবেন। তবে কাউন্সিলর পদের নির্বাচন আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে হবে।
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রস্তুতিতে অনেকটা এগিয়ে আছে। দলটি প্রার্থী নির্বাচন এবং দলীয় প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সাংসদ ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ধরনা দেওয়া শুরু করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত সাংসদদের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদেরই দৌড়ঝাঁপ বেশি বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের নীতিমালা কিংবা কমিটি নিয়ে দলে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। পৌরসভার প্রার্থী মনোনয়নের পদ্ধতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো তাঁর মতামত বা মনোভাব দলীয় কোনো ফোরামে ব্যক্ত করেননি। চলতি সপ্তাহে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে বৈঠকে দলীয় সভানেত্রীর ব্যক্তিগত মনোভাব জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি হতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন।
তৃণমূলে দলীয়ভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে কিছু বলা নেই। আগামী সম্মেলনে সেটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নেতাদের ধারণা, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য সংসদীয় বোর্ডের আদলে একটি কমিটি করে দেওয়া হতে পারে। তবে যেভাবেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হোক না কেন, প্রাথমিক তালিকাটা তৈরি করবেন তৃণমূলের নেতারা। বর্তমান পৌর মেয়রদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে এতে স্থানীয় সাংসদ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের বড় ভূমিকা থাকবে।
জানা গেছে, তৃণমূল, সাংসদ ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা মিলে প্রতিটি পৌরসভার জন্য একজনকে সম্ভাব্য প্রার্থী ধরে একাধিক বিকল্প প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করবেন। সেখান থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একজনকে চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার মেয়র প্রার্থী তৃণমূলই ঠিক করবে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা থাকবে। এটার কাঠামো ও পরিধি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী বৈঠকে সব চূড়ান্ত হবে।
নতুন আইনে অনুষ্ঠেয় এই পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি। দলটি আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নানা সংশয় থাকলেও দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। তাঁরা মনে করছেন, এতে ফলাফল যা-ই হোক, দীর্ঘদিন ধরে থমকে থাকা দলের মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়তা ভাঙার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদেরও নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ মিলবে।
অবশ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনও একতরফা হতে পারে। এর আলামত হিসেবে তাঁরা দলের নেতা-কর্মীদের নতুন করে ধরপাকড় করার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করছেন। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের অনেককে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার, আবার অনেককে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তবে দলের এ দুই পক্ষই মনে করে, নির্বাচনে হারজিত যা-ই হোক, তাতে বিএনপির লোকসান নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে না যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হয় বিএনপি নির্বাচনে না গেলেই তারা খুশি।’
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কিছুদিন ধরে যাঁরা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন থেকে ফেরার জন্য। গতকাল রাত নয়টায় তিনি গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজ রাত নয়টায় বিএনপির চেয়ারপারসন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। তারপর এ বিষয়ে দলীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারপারসন মাত্র দেশে ফিরেছেন। পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের সংশোধনীর বিষয়টি তাঁর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি যথাসময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাপা এককভাবে নির্বাচন করবে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জাপার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করব। আমরা চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন।’
বিএনপির শরিক জামায়াতও পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না থাকায় তারা মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে।
দলটির দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, যেসব এলাকায় দলের অবস্থান ভালো, সেসব পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা বিভাগ থেকে বিভিন্ন জেলা ও থানা কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার এবং আগের দিন সোমবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দুজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একজন বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল নন। আরেকজন বলেছেন, জামায়াত নির্বাচনে যাবে এবং স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দুজনের কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
নির্বাচন পরিচালনাবিধি অনুযায়ী কোনো পৌরসভায় দল থেকে মেয়র পদে একজনের বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। আর আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও সাংসদেরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ গতকাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান অংশীদার হলেও আইন ও বিধিবিধান প্রণয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সরকার আইন করার সময় আমাদের জানায়নি। একবার অধ্যাদেশ জারি করল। পরে তা বাতিল করে সংসদে আইন পাস করল। এ নিয়ে আমাদের দুবার কাজ করতে হয়েছে। সময় কম, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তাই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসার সুযোগ হয়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *