পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়নের জন্য ভোট, টাকাসহ দরখাস্ত আহ্বান

Slider রাজনীতি

 

 

 

 

 

কেন্দ্রের নির্দেশনার আগেই নাটোরের বড়াইগ্রাম ও লালপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ভোটের আয়োজন করা হয় এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ১০ হাজার টাকাসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে—এমন খবর প্রচারের পরপরই নাটোরের বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও সাংসদদের কাছে ধরনা দিতে শুরু করেন। বড়াইগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হক গত শনিবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে দলীয় প্যাডে চিঠি পাঠান। চিঠিতে প্রার্থীদের নগদ ১০ হাজার টাকাসহ লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। প্রার্থী মনোনয়নের জন্য গত সোমবার বড়াইগ্রাম টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়। সভায় পৌর ও নয়টি ওয়ার্ড কমিটির মোট ৪৫৯ জন কাউন্সিলর (ভোটার) ভোট দিয়ে প্রার্থী মনোনীত করার জন্য জড়ো হন। প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুরের সাংসদ আবদুল কুদ্দুস উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল প্রামাণিক ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক সরকারকে হরিণ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হক ওরফে বাচ্চুকে ছাতা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল বারেককে মাছ ও মাজেদুল বারী নয়নকে চেয়ার প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভোট নেওয়ার জন্য ব্যালট, ভোটবাক্স, বুথ তৈরিসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। প্রার্থীরা ১০ হাজার করে টাকা ও আবেদনপত্র জমা দেন। দুপুরের পর ভোট গ্রহণের মুহূর্তে সাংসদ আবদুল কুদ্দুস তা স্থগিত করেন। তিনি এ ব্যাপারে তফসিল ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে ঘোষণা দেন। মুহূর্তেই নেতা-কর্মী ও প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে সভাস্থল ছেড়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতজন কাউন্সিলর প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে না। তাই এই নাটক করার দরকার ছিল না। তাঁরা এ ঘটনার জন্য সাংসদ ও স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার রশি টানাটানিকে দায়ী করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমাদের নিয়ে রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়েছে। নেতাদের মন জয় করতে যে যা করতে বলছেন, আমরা তা-ই করছি।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল প্রামাণিক বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের নির্দেশে নির্বাচন ও প্রার্থী ঘোষণা ছাড়াই বর্ধিত সভা শেষ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
এদিকে লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন যুবদল থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ফিরোজ আল হক ভূঁইয়া। গত ২৭ অক্টোবর পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম আজাদ তাঁকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের লালপুর উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। তিনি নিজে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর আসনের সাংসদ আবদুল কুদ্দুস বলেন, মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা তাঁরা এখনো পাননি। তবে তাঁরা বর্ধিত সভা করে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করে রাখছেন। সভার আপ্যায়ন খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রার্থীদের মধ্য থেকে কাউকে চূড়ান্ত করা হয়নি। এটা তফসিল ঘোষণার পর কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হবে। প্রার্থীদের নিয়ে টানাটানির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এটাকে টানাটানি না বলে আগ্রহের ছড়াছড়ি বলতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *