দিনে ১ কোটি ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপ

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

 

 

55_172869

 

 

 

 

 

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন কলড্রপ হচ্ছে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ মিনিট। প্রতি ১০০ কলে একটি কলড্রপ হচ্ছে। গ্রাহকপ্রতি কলড্রপের হার ১২ শতাংশ। গড় হিসাব যা-ই হোক, এ মুহূর্তে ভুক্তভোগী গ্রাহকরাই।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারিগরি ত্রুটি নয়, কলড্রপের মূল কারণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা। একই সঙ্গে ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) এবং ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণেও কলড্রপ হচ্ছে। এর বাইরে ফাঁকা স্থানে হঠাৎ উঁচু ভবন নির্মাণ এবং থ্রিজি নেটওয়ার্ক কার্পেটিংয়ের কারণেও কলড্রপ হচ্ছে। তবে শতভাগ কলড্রপ নিরসন সম্ভব কি-না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

কলড্রপের পরিমাণ কত? :বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে কলড্রপের পরিমাণ কত, তা নিয়ে বিটিআরসি বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে মোবাইল ফোন
অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ছয়টি অপারেটরের দিনে মোট কলের সংখ্যা প্রায় ১৬০ কোটি মিনিট। এর মধ্যে গড় কলড্রপের হার ১ শতাংশ। সে হিসাবে প্রতিদিন কলড্রপ হচ্ছে এক কোটি ৬০ লাখ মিনিট। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। সে হিসাবে গ্রাহকপ্রতি কলড্রপের হার শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের মানদণ্ডে গড়ে ৩ শতাংশ কলড্রপ গ্রহণযোগ্য। আর বাংলাদেশে গড় কলড্রপের হার ১ শতাংশ। এ হিসেবে বাংলাদেশে কলড্রপের হার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম।
কলড্রপের নেপথ্যে :কলড্রপ কেন হচ্ছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা কলড্রপের বড় কারণ। যেমন_ ঢাকার একটি স্থানে গ্রাহক বেড়ে গেছে কিংবা বড় বড় উঁচু দালান ওঠার কারণে উন্নত সেবা ধরে রাখতে সেখানে আরও বেশি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন বা বিটিএস বসানো প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বিটিএস বসানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। এখন বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা, এমনকি সরকারি অফিসের কর্মকর্তারাও বিটিএস বসানোর জন্য ভবনের ছাদ ব্যবহার করতে দিতে চান না। আবার যেখানে স্থান পাওয়া যায়, সেখান থেকে পুরো এলাকায় বৃত্তাকারে সমমানের নেটওয়ার্ক সেবা দেওয়া যায় না। এর ফল হিসেবে কলড্রপ হয়।
আবার ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জে ত্রুটির কারণে কলড্রপ হয়। এই এক্সচেঞ্জ পৃথক লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে ট্রান্সমিশন কেবল একবার কেটে গেলে সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেই নেটওয়ার্ক ঠিক করতে দু-তিন দিন পর্যন্ত সময় নেয়। এ সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া বিটিএসের পরিবর্তে বিকল্প বিটিএস দিয়ে সেবা দিতে হয়। এর ফলে নেটওয়ার্ক দুর্বল হয় এবং কলড্রপ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কম সক্ষমতার হ্যান্ডসেট ব্যবহারের কারণে ওই হ্যান্ডসেট পূর্ণ ক্ষমতায় নেটওয়ার্ক গ্রহণ করতে পারে না। ফলে কলড্রপ হয়, শব্দবিষয়ক ফিচার ভালো না হওয়ায় গ্রাহক ভালো শব্দ শোনেন না। সবকিছুর দায়ভার এককভাবে মোবাইল অপারেটরের কাঁধেই চলে যায়।

অ্যামটবের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে থ্রিজি সেবা দেওয়া পাঁচটি অপারেটরই নেটওয়ার্ক কার্পেটিং করছে। এর অর্থ, বিটিএস টু বিটিএস থ্রিজি চালু করা। অনেক সময়ই বিটিএস টু বিটিএস থ্রিজি চালু করতে গিয়ে পরিপূরক নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এ জন্য আরও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিটিএস বসাতে হয়। সেই কার্পেটিংয়ের কাজটি চলমান। কার্পেটিং শেষ হতে আরও ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যেতে পারে। এ কাজ শেষ হলে কলড্রপ আরও কমবে বলে জানায় সূত্র।
প্রযুক্তিবিদ সুমন সাবির সমকালকে বলেন, তারবিহীন নেটওয়ার্ক শতভাগ কলড্রপমুক্ত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বেতার তরঙ্গভিত্তিক নেটওয়ার্কে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে একটি কল যাচ্ছে। নির্ভরতার একটি ক্ষেত্র এক সেকেন্ডেই অদৃশ্যভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অবশ্য লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান সমকালকে বলেন, বাস্তবেই কারিগরি সক্ষমতায় শতভাগ কলড্রপমুক্ত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বাংলাদেশেও কলড্রপমুক্ত উন্নত সেবা দেওয়ার বাস্তবতা আছে। কিন্তু এখানে গ্রাহকের স্বার্থে গুণগত সেবা দেওয়ার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে।

দেশে বৃহত্তম ট্রান্সমিশন সেবা দেওয়া বেসরকারি কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটররা ৯৫ শতাংশ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিজেরা পরিচালনা করছে। বাকি মাত্র ৫ শতাংশ বেসরকারি ট্রান্সমিশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিচ্ছে। ফাইবার অ্যাট হোমের ক্ষেত্রে সেবার গুণগত মান রক্ষার হার ৯৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তিনি বলেন, সার্বিক বিচারে বাংলাদেশে নেটওয়ার্কের গুণগত মান ভালো। কলড্রপ যেটুকু হয়, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচারে নগণ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *